মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের ষষ্ঠ প্রয়াণ দিবস আজ
মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের ষষ্ঠ প্রয়াণ দিবস আজ। ২০১৪ সালের এই দিনে ৮৩ বছরের দীর্ঘ জীবন শেষে পরপারে পাড়ি জমান তিনি। দিনটি স্মরণে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে পাবনা জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন।
পাবনা জেলা প্রশাসক কবির মাহামুদ বলেন, বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি নায়িকা সুচিত্রা সেনের পৈত্রিক বাড়িটি জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে স্মৃতি সংগ্রহশালা করা হয়েছে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে প্রায় সাত কোটি টাকা ব্যয়ে একটি আধুনিক কমপ্লেক্স স্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে।
বাংলা সিনেমার কিংবদন্তী সুচিত্রা সেন চলচ্চিত্রে একের পর এক চরিত্রে নিজেকে ভেঙে গড়েছেন নতুন রূপে। জীবনানন্দের কল্পনার বনলতা সেনের মতই বাংলা ছবির দর্শকের কাছে রোমান্টিকতার প্রতীক মহানায়িকা সুচিত্রা সেন। মোহনীয় হাসি আর নিজস্ব স্টাইলে রূপালী পর্দা রহস্যময় করে তোলা এ নায়িকা আজও বাঙালী নারীর আধুনিকতার আদর্শ। অবিভক্ত বাংলায় পাবনার হেমসাগরলেনে জন্ম নেয়া রমা দাশগুপ্তের নাম হারিয়ে গেছে সুচিত্রা সেন নামের আড়ালে।
পর্দায় মোহনীয় উপস্থিতি, অনন্য সুন্দর দুচোখ আর ঠোঁট বাকানো হাসি দিয়ে কোটি দর্শকের মন কাড়া মহানায়িকা সুচিত্রার বাড়ি যে পাবনায় তা এখন সবারই জানা। দীর্ঘদিন জামায়াতের দখলে থাকা সুচিত্রার পৈতৃক বাড়ি দখলমুক্ত করে দীর্ঘ আইনী লড়াইয়ের পর ২০১৪ সালের ১৬ জুলাই সেখানে সংগ্রহশালা তৈরীর নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় সংগ্রহশালার কাজ থেমে থাকায় অরক্ষিত বাড়িটি পরিণত হয়েছিল মাদকসেবীদের আখড়ায়। গণমাধ্যমে মহানায়িকার বাড়ির বেহালদশার কথা আলোচিত হলে সংস্কারে করে সীমিত পরিসরের সংগ্রহশালা গড়ে সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয় জেলা প্রশাসন। স্বপ্নের নায়িকার স্মৃতি ধন্য বাড়িতে প্রতিদিনই ভীড় করেন ভক্তরা। এই সংগ্রহশালার রয়েছে মহানায়িকার কিছু ছবি আর ফেস্টুন।
১৯৩১ সালের ৬ এপ্রিল জন্ম নেয়া মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের শৈশব ও কৈশর কেটেছে পাবনার পৌর এলাকার হেমসাগর লেনের বাড়িতে। বাবা করুণাময় দাশগুপ্ত ছিলেন পাবনা পৌরসভার স্যানেটারি ইন্সপেক্টর ও মা ইন্দিরা দাশগুপ্ত ছিলেন গৃহিণী। বাবা-মায়ের পঞ্চম সন্তান ছিলেন সুচিত্রা সেন। ১৯৪৭ সালে কলকাতার বিশিষ্ট বাঙালি শিল্পপতি আদিনাথ সেনের ছেলে দীবানাথ সেনের সঙ্গে বিয়ে হয় তার। তাদের ঘরে একমাত্র সন্তান মুনমুন সেন। সুচিত্রার বাড়িতে তার ডাক নাম ছিলো রমা সেন।
পাবনার মহাখালি পাঠশালায় প্রাথমিকের পাঠ চুকিয়ে তিনি ভর্তি হন পাবনা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। এখানে দশম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন তিনি। ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের সময় সপরিবারে কলকাতা চলে যান তারা।
১৯৫২ সালে তিনি চলচ্চিত্র জগতে প্রথম পা রাখেন। ১৯৫৩ সালে মহানায়ক উত্তম কুমারের সঙ্গে ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ ছবি করে সাড়া ফেলে দেন চলচ্চিত্র অঙ্গনে। সুচিত্রা সেন বাংলা ও হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেছেন। তার অভিনীত প্রথম হিন্দি ছবি দেবদাস (১৯৫৫) ও ১৯৭৮ সালের প্রণয় পাশা তার শেষ ছবি।
মহানায়িকার ষষ্ঠ প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে পাবনা জেলা প্রশাসক, সুচিত্রা সেন চলচ্চিত্র সংসদ, সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ, পাবনা ড্রামা সার্কেল।