রাকিব: সিনেমাপ্রেমী এক ইউটিউবার
২০১৬ সালে সিনেমা নিয়ে প্রথম ইউটিউব চ্যানেল খুলেছিলেন রাশেদুজ্জামান রাকিব (Rasheduzzaman Rakib)। নাম দিয়েছিলেন আরএনএআর। সাবস্ক্রাইবারও হয়েছিল ৫০ হাজারের বেশি। কিন্তু হঠাৎ করেই সেটা হ্যাকড হয়ে যায়।
হতাশ হয়ে পড়েন রাকিব। ইউটিউবে ঢুকতেও ভয় পেতেন। কিন্তু সিনেমাই তাকে হতাশা কাটিয়ে দিয়েছে।
'দ্য স্কিন আই লিভ ইন', 'নো মার্সি'র মতো কিছু সিনেমা দেখে ঘুরে দাড়ানোর আগ্রহ পান। আবার ২০১৭ সালে একই নামে নতুন একটি চ্যানেল খোলেন। যার সাবস্ক্রাইবার এক মিলিয়ন ছাড়িয়েছে কদিন আগে। এবারের বিষয়ও সিনেমা। সিনেমার রিভিউ, তবে সেটার সঙ্গে যোগ করেন বাড়তি রস। যোগ করেন নানা অসঙ্গতি। মজার ছলে বাংলা সিনেমার পর্যালোচনা করে ভিডিও। সেই ভিডিওতে তার ব্যতিক্রমী কথা বলার ভঙ্গি দর্শকদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু।
বিনোদনের পাশাপাশি রাকিবের ভিডিওতে সিনেমার তথ্য-উপাত্ত, কাহিনি আর যুক্তিরও কমতি থাকে না। সিনেমার গল্পের অসঙ্গতি, কাহিনির নকল ধরিয়ে দেওয়া কিংবা অশালীন সংলাপ নিয়ে কাটাছেঁড়া যেমন চলে, তেমনি ভালো সিনেমার প্রশংসা, গল্পের অভিনয়শিল্পীদের পরিশ্র দেখা যায় চ্যানেলটিতে। পাশাপাশি ধরিয়ে দেন কাহিনী বা গানের নকলও।
বাংলা সিনেমাপ্রেমীরা তাই প্রতি সপ্তাহে একবার ঢু মারেন রাকিবের চ্যানেলে। মূল কথা, লাখ লাখ মানুষ দেখেন রাকিবের ভিডিও।
তবে আঁটসাঁট বেঁধে ২০১৭ সালে শুরু করলেও রাকিবের ইউটিউবার হওয়ার ভূত মাথায় চাপে ২০১৪ সালে। তিনি বলেন, 'ইউটিউবে ভিডিও দেখতে গিয়ে একদিন পিউডিপাইয়ের ভিডিও নজরে পড়ে। তারপর ওনার প্রায় সব ভিডিও দেখে ফেলি। একসময় মনে হলো- আমি কেন এমন ভিডিও বানাচ্ছি না? সেই চিন্তাকে বাস্তবায়ন করি আমার পছন্দের বিষয় সিনেমা দিয়ে।'
তবে রাকিব এমনিতে খুব লাজুক। এ কারণে শুরুতে চ্যালেঞ্জিং ছিল জড়তা কাটানো। মাইক্রোফোনে কথা বলা! এডিটিংয়ের বিষয়টাও ছিল একটা চ্যালেঞ্জ। ধীরে ধীরে সেটা কাটিয়ে উঠেছেন। এখন প্রতিদিন নতুন নতুন জিনিস জানতে ও শিখতে মজাই লাগে তার।
অবশ্য শুরুতে ভিডিও বানানোর জন্য তেমন কোনোকিছু জিনিস ছিল না তার। এগুলো ধীরে ধীরে জোগার করেছেন। পাশাপাশি পেয়েছেন কাছের মানুষজন সমর্থন। রাকিবের মতে, কাছের মানুষ সাহস যোগালে যেকোনো কাজ সহজ হয়ে যায়। কাজে গতি আসে।
তার কাছে জানতে চাই, ইউটিউবের ভিডিওর জন্য চলচ্চিত্র বেছে নেওয়ার কারণ কী? বিশেষ করে বাংলা চলচ্চিত্র।
রাকিব বলেন, 'ছোটকাল থেকেই সিনেমা আমার অনেক পছন্দ ছিল। সিনেমা দেখা, এসব নিয়ে ঘাটাঘাটি করেই সময় কাটাতাম। ইউটিউবে যখন ভিডিও বানানোর সিদ্ধান্ত নেই, তখন স্বাভাবিকভাবেই সিনেমার থিম মাথায় আসে। আর বাংলা চলচ্চিত্রের অবনমন কিংবা অসঙ্গতি নিয়ে তেমন আলোচনা হতো না। তখন মনে হলো এসব বিষয় নিয়ে কথা বলা উচিত। শুধু আমি না, আরও অনেক মানুষের এইসব নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা করা উচিত। বিষয়গুলো সামনে আনা উচিত। তবেই পরিবর্তনের সূচনা হবে।'
রাকিব জানান, সপ্তাহে তিনি একটা করে ভিডিও পোস্ট করেন। যে ভিডিওতে সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত কোনো চলচ্চিত্র, ওয়েব সিরিজ নিয়ে কথা বলেন। তবে সেটা বিশেষ ঢঙে। একান্ত রাকিবের স্টাইলে!
ভিডিও বানানো নিয়ে তিনি বলেন, 'আমি অনেক রুটিন করে ভিডিও বানাই। প্রতি সপ্তাহে একটি ভিডিও বানানোর একটা পরিকল্পনা থাকে। বড় ভিডিও হলে সময় বেড়ে যায়। তবে পুরো কাজটা আমি বিভিন্ন অংশে, বিভিন্ন দিনে ভাগ করে নেই। এরপর সেই অনুযায়ী ভিডিও আপলোডের দিন পর্যন্ত এগিয়ে যাই। ফলে দেখা যায় রুটিন অনুযায়ী কাজ করলেই সব সম্ভব হয়ে যায়।'
ভিডিওতে কী থাকে- জানতে চাইলে রাকিব বলেন, 'এমন কিছু থাকে না যেটা বাজে পরিস্থিতি তৈরি করবে বা সিনেমায় সংশ্লিষ্টরা খারাপ মনে করবেন। ভিডিওতে সিনেমার অসঙ্গতিগুলো বিনোদনের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়। এটা খুবই স্বাভাবিক জিনিস। বাইরের দেশে এমন অসংখ্য জিনিস দেখবেন।'
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর রাকিব নতুন ধারার এই পেশা বেছে নিয়েছেন নিজেই। ইউটিউব আর সিনেমাই তার ধ্যানজ্ঞান। এর বাইরে ক্রিকেট নিয়েও বেশ আগ্রহ রয়েছে। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিবাহিত। বিয়ে নিয়েও একটা ভিডিও আছে তার চ্যানেলে।
রাকিবের কাছে জানতে চাই, এই সময়ে কেউ যদি ইউটিউবার হতে যায় তার মধ্যে কী কী গুণ থাকতে হবে? এটা কি পেশা হিসেবে নেওয়া সম্ভব?
তিনি বলেন, 'শুরুতে আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে। রাতারাতি ইউটিউবে কিছু হয় না। অনেক ধৈর্য্যের প্রয়োজন। ইউটিউবে লেগে থাকলে সাফল্য আসবেই। আর পেশা হিসেবে অবশ্যই নেওয়া সম্ভব। এদেশে ইউটিউব সামনে বিশাল কিছু হতে যাচ্ছে।'