৩০ বছরেও মুক্তি পায়নি দিলীপ কুমারের শেষ সিনেমা
সবকিছু পরিকল্পনামতো হলে ৯০-এর দশকের শুরুতেই মুক্তি পেত কিংবদন্তী অভিনেতা দীলিপ কুমার অভিনীত সর্বশেষ সিনেমা আগ কা দারিয়া।
১৯৯১ সালে সিনেমাটির কাজ শেষ হয়। এসভি রাজেন্দ্র সিং বাবুর হিন্দি ভাষার এই সিনেমাটিতে এয়ার মার্শাল অর্জুনের চরিত্রে অভিনয় করেন প্রয়াত এই অভিনেতা। দিলীপ কুমারের স্ত্রী রমলার চরিত্রে রেখা এবং মেয়ে পিংকির চরিত্র অভিনয় করেছিলেন পদ্মিনী কোলহাপুরি।
অর্জুন চরিত্রটি দিলীপ কুমারের ৮০-র দশকের অন্যান্য সিনেমা যেমন, মশাল, ক্রান্তি, বিধাতা, মজদুর ও কর্মের রাগি মধ্যবয়সী পুরুষ চরিত্রেরই পুনরাবৃত্তি বলা চলে। দুর্নীতিবাজ পুঁজিপতিদের হাত থেকে ভারতীয় এয়ার ফোর্সকে রক্ষার সংগ্রাম নিয়ে এগিয়েছে সিনেমার গল্প।
চলচ্চিত্রটি রাজেন্দ্র সিং বাবুর ক্যারিয়ারেরও সবচেয়ে বড় হিন্দি সিনেমা হতে পারত। ৭০ বছর বয়সী কন্নড় সিনেমার এই পরিচালক বান্ধানা, মুথিনা হারা এবং মুনগারিনা মিনচু সিনেমাগুলোর জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতেছেন।
গত ৩০ বছর ধরেই রাজেন্দ্র দিলীপ কুমারের আগ কা দারিয়া সিনেমা মুক্তির জন্য চাপ দিয়ে আসছেন। সিনেমাটি সেন্সর সার্টিফিকেটও পেয়ে গেছে। তবে সিনেমায় বিনিয়োগকারীদের একজন তিন-চার কোটি টাকা পান। এই টাকা ফেরত দেওয়ার আগে সিনেমা মুক্তি দেওয়া সম্ভব নয়। আর তাই এতগুলো বছর পরেও তা আটকে আছে।
দীলিপ কুমারের পুরোনো স্মৃতি রোমন্থন করে রাজেন্দ্র দ্য স্ক্রল ইনকে বলেন, দিলীপ সাহেব চমৎকার মানুষ ছিলেন। তিনি সকাল আটটার মধ্যেই সেটে এসে উপস্থিত হতে এবং দৃশ্যগুলো নিয়ে লেখকদের সঙ্গে বসতেন। আমরা তার বাসায় গেলে তিনি ও তাঁর স্ত্রী সায়রা জি চা-কফি-নাস্তা দিয়ে আপ্যায়ন করতেন। সবার সঙ্গেই তিনি সৌহার্দপূর্ণ আচরণ করতেন। বাড়ির রান্নার লোক, কাজের লোক কিংবা ড্রাইভার কারও সঙ্গে ভিন্ন আচরণ করতেন না। সবসময় কাশ্মীর থেকে আসা নিজস্ব বাবুর্চি নিয়ে চলতেন তিনি। সেটে প্রথমে তার খাবার আমাদের সামনে পরিবেশন করতেন এরপরই নিজে খেতে বসতেন।
'একটা দৃশ্য ছিল যেখানে দিলীপ কুমার অমরিশ পুরিকে থাপ্পড় মারেন। কিন্তু তিনবার ওই শট দেওয়ার পরেও তা মনমতো হচ্ছিল না। সে ঘটনায় তিনি খুবই দুঃখ প্রকাশ করেন। তবে অমরিশ পুরি তাকে নিশ্চয়তা দেয়, দৃশ্য পারফেক্ট না হওয়া পর্যন্ত তারা শট দিবেন।'
রাজেন্দ্র সিং বলেন, 'আমার এখন এটাই আশা বলিউডের মানুষরা যেন এই ছবি মুক্তি দিতে এগিয়ে আসে। এটা তাদের জন্য কোনো ব্যাপারই না। মাত্র তিন-চার কোটি টাকার বিষয়। মুক্তি পেলে এটাই হবে দিলীপ কুমারের শেষ ছবি।'
'শেষবার হেমা মালিনীর মেয়ে এশার বিয়েতে দিলীপ কুমারের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। সেসময় তিনি নিজেই ছবিটি মুক্তির আশ্বাস দিয়েছিলেন। তবে তিনি চলে যাওয়ার পর সিনেমাটির জন্য কিছু করার মতো কেউ নেই,' বলেন রাজেন্দ্র।
হতাশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, 'ছবির নেগেটিভের স্বত্বাধিকারীও তিনি। বলিউডে শাহরুখ খান, আমির খান, সালমান খান বা অমিতাভের মতো বড় বড় মহারথীরা যদি সামান্য কিছু সাহায্য নিয়েও এগিয়ে আসতেন, তবে ছবিটা মুক্তি দেওয়া যেত।'