‘আয়োগে জব তুম’-এর সুরে বসল যতি, মাত্র ৫৫ বছরেই থামল উস্তাদ রশিদ খানের কণ্ঠ
শেষ রক্ষা হল না। অনুরাগী, ভক্ত, পরিবারের সদস্য, ঘনিষ্ঠদের প্রার্থনা সত্ত্বেও আর ফিরলেন না রাশিদ খান। মাত্র ৫৫ বছরেই থেমে গেল ধ্রুপদী সঙ্গীতে ভারতের অন্যতম সেরা শিল্পীর কণ্ঠস্বর। মারা গেছেন রশিদ খান। আজ মঙ্গলবার দুপুর ৩টা ৪৫ মিনিটে দক্ষিণ কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
বেশ কয়েক দিন ধরেই তাঁর স্বাস্থ্যের অবস্থা ভালো ছিল না। হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন শিল্পী। পরিবারের মানুষরা নিত্য সেখানে উপস্থিত থাকছিলেন। তাঁর স্বাস্থ্যের অবস্থা কেমন, সে সম্পর্কে বাইরে খুব একটা খবর আসছিল না। কিন্তু অনুরাগীরা আন্দাজ করতে পারছিলেন, মোটেই ভালো নেই রশিদ খান। তবুও চলছিল নিরন্তর প্রার্থনা আর আশা নিয়ে অপেক্ষা। কিন্তু তারপরেও ফিরে এলেন না উপমহাদেশের অন্যতম সেরা কণ্ঠশিল্পী।
রশিদ খানের মৃত্যুর খবরে ভারতের সঙ্গীতাঙ্গনে শোকের ছায়া নেমেছে। হাসপাতালে ছুটে গেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-ও।
ভারতীয় ধ্রুপদী সঙ্গীতের অন্যতম জনপ্রিয় শিল্পী উস্তাদ রশিদ খান। গত কয়েক বছর ধরে তিনি প্রস্টেট ক্যানসারে ভুগছিলেন বলে জানা গিয়েছিল। মাঝখানে শোনা যায়, শিল্পী পুরোপুরি সুস্থ হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু তারপরেও বিপদ পুরোপুরি কাটেনি।
কয়েক দিন আগে তাঁর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়। অবস্থার অবনতি হতে শুরু। শিল্পীকে দক্ষিণ কলকাতার একটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। হাসপাতাল বা পরিবারের সূত্রে এসময় কিছু জানানো হয়নি। তবে ঘনিষ্ঠ মহলের অনেকেরই ধারণা ছিল, তাঁর মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণের সঙ্গে ক্যানসারের যোগ ছিল। আর সেই কারণেই বিষয়টি ভয়ঙ্কর আকার নেয়।
১৯৬৮ সালের ১ জুলাই উত্তরপ্রদেশের বদায়ূঁতে জন্ম তাঁর। তিনি রামপুর-সাসওয়ান ঘরানার শিল্পী। এই ঘরানার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ইনায়েত হুসেন খাঁ। রশিদ তালিম নেন উস্তাদ নিসার হুসেন খাঁয়ের কাছে। রাশিদের মামা গোয়ালিয়র ঘরানার উস্তাদ গুলাম মুস্তাফা খাঁ। তাঁর থেকেও তালিম নিয়েছেন রশিদ। মূলত ধ্রুপদী সঙ্গীত গাইলেও বলিউড এবং টলিউডের ছবিতে বহু জনপ্রিয় গানও গেয়েছেন শিল্পী। সেগুলিও তাঁকে কম জনপ্রিয়তা দেয়নি।
উত্তর প্রদেশে জন্ম হলেও খুব কম বয়সেই কলকাতা চলে আসেন তিনি। থেকে যান এই শহরেই। সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি পুরস্কার, পদ্মশ্রী সম্মান যেমন পেয়েছেন, তেমন পশ্চিমবঙ্গ থেকেও বঙ্গবিভূষণ সম্মান পেয়েছেন রাশিদ। শিল্পীর প্রয়াণে তাই শোকের ছায়া সব ধরনের সঙ্গীতপ্রেমীদের মধ্যেই। তিনি রেখে গেলেন স্ত্রী, দুই কন্যা এবং এক পুত্রকে।