অ্যাঞ্জেলিনা জোলি ও ব্র্যাড পিটের বিবাহ-বিচ্ছেদে যে কারণে আট বছর সময় লাগলো
বিশ্বের খ্যাতিমান তারকা জুটির মধ্যে অভিনেত্রী অ্যাঞ্জেলিনা জোলি ও অভিনেতা ব্র্যাড পিট ছিলেন অন্যতম। তবে সম্প্রতি দীর্ঘ আট বছরের মনোমালিন্যের পর অবশেষে তাদের বিবাহ-বিচ্ছেদ হয়েছে। এত বেশি সময় লাগার পেছনে মূলত রয়েছে সন্তানের অভিভাবকত্ব ইস্যু ও নিজেদের নামে থাকা সম্পত্তির মালিকানা নিয়ে আইনি লড়াই।
তবুও বর্তমানে পিট ও জোলির মধ্যে সকল বিবাদ যে সমাধান হয়েছে বিষয়টি এমনও নয়। বরং অভিনেত্রীর আইনজীবী ক্রিস মেলচার এটিকে 'দীর্ঘ প্রক্রিয়া' বলে অভিহিত করেছেন। একইসাথে সাধারণ সময়ের চেয়ে ঘটনাটিতে বেশি সময় লেগেছে বলেও তিনি অভিহিত করেন।
ক্রিস বলেন, "প্রথমদিকে সন্তান দত্তকের বিষয়টি নিয়ে বিবাদ থাকলেও পরবর্তীতে ওয়াইন তৈরির খামারের বিষয়টিও যুক্ত হয়। গত কয়েক বছর ধরে এটিই তাদের দ্বন্দ্বের প্রধান ফোকাস। এই ধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে আমরা ছয় মাস কিংবা সর্বোচ্চ এক বছরে সেটি সমাধান করি। তবে আট বছরের ব্যাপারটি সত্যিকার অর্থেই বেশ বড় সময়। মূলত ছাড় না দেওয়ার মানসিকতা ও একে অন্যের ক্ষতি করার প্রবণতা থেকেই এমনটা হয়ে থাকে।"
অনলাইন ডিভোর্স কোম্পানি এমিকেবলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা কেট ডালি বলেন, "ডিভোর্স নিয়ে কাজ করা আইনজীবীরা বেশ ব্যয়বহুল। বেশিরভাগেরই আট বছর ধরে ফি প্রদানের সামর্থ্য নেই। এটা বেশ বাজে উদাহরণ। আমাদের এমন সব চিন্তাধারার মানুষের থেকে দূরত্ব বজায় রাখা উচিত।"
প্রেমের শুরু
জোলি ও পিটের সাক্ষাৎ হয় ২০০৫ সালে 'মিস্টার ও মিসেস স্মিথ' সিনেমার অভিনয়ের সময়। ২০০৭ সালে ভোগকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অভিনেত্রী বলেন, "সিনেমাটির কারণেই আমরা একসাথে রোমাঞ্চকর সব মুহূর্ত কাটাতে থাকি। এই ভিন্ন ধরনের বন্ধুত্ব আচমকাই তৈরি হয়েছিল।"
জোলিকে বিয়ের পূর্বে পিট অভিনেত্রী জেনিফার এনিস্টনকে বিয়ে করেছিল। আর পিটকে বিয়ের পূর্বে জোলি অভিনেতা জনি লি মিলার (১৯৯৬ থেকে ২০০০) ও বিলি ববকে (২০০০ থেকে ২০০৩) বিয়ে করেন।
জোলি ও পিটের একসাথে মোট ছয় সন্তান রয়েছে। এদের মধ্যে ম্যাডক্সকে ২০০২ সালে অভিনেত্রী দত্তক নিয়েছিল। এরপর ব্র্যাডও তাকে সন্তান হিসেবে গ্রহণ করেন। ২০০৫ সালে জাহারাকে ইথিওপিয়া থেকে দত্তক নেন এই দুই দম্পতি।
২০০৬ সালে জোলি ও পিট দম্পতির প্রথম বায়োলজিকাল সন্তান শিলো নামিবিয়ায় জন্ম নেন। যদিও গতবছর এই সন্তান নিজের নাম থেকে পিট সরিয়ে ফেলার জন্য আদালতে পিটিশন দায়ের করেছেন।
এদিকে ২০০৭ সালে ভিয়েতনাম থেকে তিন বছর বয়সে প্যাক্সকে দত্তক হিসেবে নেন জোলি ও পিট দম্পতি। আর জমজ নক্স ও ভিভিএন ২০০৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন।
বিচ্ছেদের শুরু
২০১৫ সালের নভেম্বরে শেষবারের মতো একসাথে রেড কার্পেটে দেখা যায় পিট ও জোলি দম্পতিকে। তখন থেকেই তাদের বৈবাহিক সম্পর্কে তিক্ততা সৃষ্টি হয়েছিল।
নিজেদের সম্পর্ক নিয়ে খুব একটা কথা বলেননি জোলি ও পিট দম্পতি। টেলিগ্রাফকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অভিনেত্রী বলেছিলেন, "অন্যসব দম্পতির মতোই আমাদের মধ্যেও লড়াই-ঝগড়া হয়। আমাদের এমনও দিন যায় যখন একে অপরের থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে চাই।"
নিজেদের মধ্যে ভিন্নতার কথা বলে ২০১৬ সালে ডিভোর্স ফাইল করেন জোলি। তখন দুই তারকা দম্পতির বিচ্ছেদের গুঞ্জনে অনেকে অবাকই হয়েছিল।
তীব্র ঘৃণার সৃষ্টি
গুঞ্জন রয়েছে যে, প্রাইভেট প্লেনে ভ্রমণের সময় ছেলে ম্যাডক্সকে আঘাতের পরের দিনই জোলি ডিভোর্স ফাইল করেন। যদিও অভিনেতার পক্ষ থেকে এমন অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। ২০২২ সালে ফের অভিযোগ শোনা যায়, ফ্লাইটের সময় পিট দুই সন্তান ও অভিনেত্রীকে মদ্যপ অবস্থায় আঘাত করেছিল। যদিও অভিনেতার ঘনিষ্ঠ সূত্ররা এইসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
২০২০ সালে ভোগ-এর সাথে কথা বলার সময় জোলি জানান, নিজের পরিবারের ভালোর কথা চিন্তা করেই তিনি পিটের সাথে বিবাহ-বিচ্ছেদ করছেন। তিনি বলেন, "এটা সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল। আমি পরিবারের পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার দিকে নজর দিচ্ছিলাম।"
২০১৭ সালে জিকিউ-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পিট মদ্যপান ও মারিজুয়ানা সেবনের অভ্যাস থেকে সরে আসার কথা জানান। একইসাথে নিজেদের মধ্যে 'তীব্র ঘৃণার' পরিস্থিতি কাটিয়ে সমস্যাগুলো ব্যক্তিগত পর্যায়ে শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের কথা জানান তিনি।
সন্তানের অভিভাবকত্ব
বিবাহবিচ্ছেদ ও সন্তানদের অভিভাবকত্বের বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছানোর চেষ্টা বেশ দীর্ঘায়িতই হয়েছে। ২০১৯ সালে বিচারক তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে আলাদা হয়ে যাওয়ার রায় দিলেও ডিভোর্স ইস্যু চূড়ান্ত হতে আরও সময় লাগবে বলে জানান।
সন্তানের অভিভাবকত্বের ইস্যুতে পিট ও জোলি দম্পতি ২০১৮ সালে একটা সমঝোতায় পৌঁছালেও পরবর্তীতে তা ভেস্তে যায়। ২০২১ সালে জোলির পাশাপাশি অভিনেতাকেও সন্তানের অভিভাবকত্ব দেওয়া হলেও পরবর্তীতে তা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। কেননা জানা যায়, বিচারকের সাথে পিটের আইনজীবীর ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে যা বিচারের সময় গোপন করা হয়েছিল।
সম্প্রতি বিচ্ছেদ হলেও ওয়াইন খামারের মালিকানা ইস্যুতে সমস্যার সমাধান এখনও হয়নি। ২০০৮ সালে তারা এটি কিনেছিলেন এবং ২০১৪ সালে এখানেই বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সেরেছিলেন। তবে পরবর্তীতে জোলি রাশিয়ান এক অলিগার্কের কাছে সম্পত্তির নিজের অংশ বিক্রি করে দেন।
এমন পরিস্থিতিতে পিট মূলত প্রাক্তন স্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ করেন। কেননা তার দাবি অনুযায়ী উভয়ের সম্মতি ছাড়া সম্পদটির কোনো অংশ বিক্রি না করার ব্যাপারে তারা সম্মত হয়েছিলেন। যদিও এই বিষয়ে জোলি কোনো মন্তব্য করেননি।
তবে অবশেষে সম্প্রতি জোলির ডিভোর্সের উকিল জেমস সিমন ডেইলি মেইলকে জানিয়েছেন, অভিনেত্রী বিবাহ বিচ্ছেদ পাওয়ার পর স্বস্তির নিশ্বাস ছেড়েছেন। এটা তার কাছে একটি 'মাইলস্টোন' বলেও জানাতে ভোলেননি তিনি।
এই বিষয়ে আইনজীবী জানান, "আজ থেকে ৮ বছর আগে, অ্যাঞ্জেলিনা জোলি মিস্টার ব্র্যাড পিট থেকে ডিভোর্স ফাইল করছিলেন। অভিনেত্রী আর তার সন্তানেরা সমস্ত সম্পত্তি যা ব্র্যাড পিটের সঙ্গে তাদের ছিল সেগুলো সব ছেড়েই চলে যান। সেই সময় থেকেই তিনি শান্তি খুঁজে চলেছেন। পরিবারকে নিয়ে ভালো থাকার চেষ্টা করছেন।"
অনুবাদ: মোঃ রাফিজ খান