দলিত-মুসলিম নারীদের মোবাইল সাংবাদিকতা নিয়ে নির্মিত ছবি অস্কারের দরবারে
ভারতের দলিত শ্রেণির নারীদের দ্বারা পরিচালিত সংবাদমাধ্যম 'খবর লহরিয়া'-কে নিয়ে নির্মিত একটি তথ্যচিত্র এবছর অস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছে। হিন্দু বর্ণপ্রথায় সবচেয়ে নিগৃহীত এই গোষ্ঠীটির সাংবাদিকতা জগতের চ্যালেঞ্জ ফুটে উঠেছে এই তথ্যচিত্রে।
'রাইটিং উইথ ফায়ার" শিরোনামের ছবিটি এবারের অস্কারে সেরা তথ্যচিত্র বিভাগে মনোনীত হয়েছে। কয়েক দশকের পুরনো মধ্য ভারতের স্থানীয় ভাষার সংবাদপত্র 'খবর লহরিয়া' কীভাবে ডিজিটাল মাধ্যমে রূপান্তরিত হয়েছে, সেই প্রক্রিয়া উঠে এসেছে এই তথ্যচিত্রে।
ছবিটির সহ-নির্মাতা রিন্টু টমাস বলেন, "তাদের মতো বুদ্ধিমতী নারী আমি আর দেখিনি। তাদের বেশিরভাগই এর আগে কখনোই স্মার্টফোনে হাত দিয়েই দেখেনি। কিন্তু এরপরও আস্থা রেখে তারা এই পথে হেঁটেছে।"
"আমরা পাঁচ বছর ধরে শ্যুট করেছি ছবিটি," যোগ করেন তিনি।
সব নারী সাংবাদিকদের নিয়ে গঠিত ৩২ সদস্যের এই সংবাদমাধ্যম বুন্দেলখন্ড অঞ্চলে কাজ করে। এই অঞ্চলটি ভারতের সবচেয়ে জনবহুল দুই প্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ এবং মধ্যপ্রদেশের মাঝখানে অবস্থান করছে। লিঙ্গ এবং বর্ণকেন্দ্রিক নানা চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও তারা গ্রামীণ স্বাস্থ্য, বন ও পানি সংরক্ষণ, বৈষম্য, মহামারীর বিস্তার, এমনকি আফগানিস্তানের মতো বিষয় নিয়ে সংবাদ উপস্থাপন করে।
অস্কার মনোনয়নের সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর নিউজ পোর্টালটি একটি টুইটের মাধ্যমে তথ্যচিত্রের দুই পরিচালককে অভিনন্দন জানিয়েছে। টুইটে আরও বলা হয়, "এই অস্কার মনোনয়নের মাধ্যমে আমাদের নারী-নেতৃত্বাধীন তৃণমূল মিডিয়া বিপ্লবকে আরও এগিয়ে নিতে উৎসাহিত করা হয়েছে"।
খবর লহরিয়ার প্রতিবেদক ও সম্পাদকদের মধ্যে মুসলিম এবং স্থানীয় উপজাতি সম্প্রদায়ের মতো সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর নারীরাও আছেন।
এখানকার সিংহভাগ সংবাদকর্মীকেই কিশোর বয়সে বিয়ে করতে বাধ্য করা হয়েছিল। তবে স্কুল শিক্ষা শেষে তাদের সাংবাদিকতার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
ভারতের বেশিরভাগ অঞ্চলের মতো বুন্দেলখন্ডেও নারীদের নিগৃহীত হওয়ার ঘটনা অহরহ ঘটে থাকে। দলিত বা অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নারীরা আরও বেশি নিগৃহীত হয়ে থাকেন।
সাংবাদিকরাও তীব্র চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন। ২০২১ সালের ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সে ১৮০টি দেশের মধ্যে ভারতের অবস্থান ছিল ১৪২তম। এই ইনডেক্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, "এখানে পুলিশি নির্যাতন, রাজনৈতিক কর্মীদের হামলা এবং অপরাধী গোষ্ঠী বা দুর্নীতিগ্রস্ত স্থানীয় কর্মকর্তাদের দ্বারা প্ররোচিত প্রতিশোধসহ সব ধরনের আক্রমণের সম্মুখীন হন সাংবাদিকরা"।
ছবিটির সহ-পরিচালক সুস্মিত ঘোষ বলেন, "কল্পনা করুন, ভারতের এই অংশে আপনি একজন মহিলা। এরপর কল্পনা করুন, আপনি একজন সাংবাদিকও। সাইবার জগত যখন জাতপ্রথা ও পুরুষতন্ত্রের সঙ্গে এসে মিশছে, তখন এদিকে কিছু দলিত ও মুসলিম নারী সস্তা চাইনিজ ফোনের আলোয় সমাজকে আলোকিত করছে।"
সূত্র: ব্লুমবার্গ।