প্রশ্নটি ‘কেন’র
এমনকি কোনো পাগল বা বদ্ধ উন্মাদেরও এ কথা বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে যে কেউ একটি দেশের প্রধান ধর্মের পবিত্র গ্রন্থকে অবমাননার কথা ভাবতে পারে। অথচ সেই রামু থেকে নাসিরনগর এবং সর্বশেষ কুমিল্লায় এ ধরনের সস্তা চালই চালা হয়েছে।
এসব ঘটনা থেকে এটিই প্রতীয়মান হয় যে, হালের মহাশক্তিধর সামাজিক মাধ্যমকে ব্যবহার করে জনমনকে ম্যানিপুলেট (স্বীয় স্বার্থে পরিচালিত) করা কতটা সহজ।
কেন এরকম ঘটনা ঘটে চলেছে একের পর এক? নিশ্চিতভাবেই, যারা এ কাজ করছে, তাদের নিজস্ব রাজনৈতিক স্বার্থ রয়েছে। এবার সেই বিকৃতমনস্করা নিজেদের উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার লক্ষ্যবস্তু হিসেবে বেছে নিয়েছে হিন্দু ধর্মীয় উৎসবকে। তারা বেছে নিয়েছে এমন একটি সময়কে, যখন বাংলাদেশ সবে কোভিডের ভয়ঙ্কর ঘেরাটোপ থেকে বের হয়ে আসছে, এবং দেশের ব্যবসায়িক সম্ভাবনাকেও বেশ উজ্জ্বল মনে হচ্ছে।
এই মানুষগুলো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির রাস্তা খুব সহজেই খুঁজে পেয়েছে, কেননা অতীতে অনুরূপ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের যে কোনো সাজা হয়নি। অথচ প্রয়োজন ছিল অতীতের দোষীদের চিহ্নিত করে কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা।
দুঃখজনক বিষয়, ২০১২ সালে রামুর বৌদ্ধপল্লীতে হামলা, ২০১৬ সালে নাসিরনগরের হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর সহিংসতা, ২০১৩ সালে পাবনার সাঁথিয়া উপজেলায় স্থানীয় হিন্দুদের প্রতি নৃশংসতা, এবং ২০১৯ সালে ভোলার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলার পরিপ্রেক্ষিতে দায়ের করা ৩৩টি মামলার কোনোটিরই বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। এসব মামলার অধিকাংশই এখনও থমকে আছে তদন্ত পর্যায়ে।
এবারের ঘটনায় শুধু জাতীয় ভাবমূর্তিই ক্ষুণ্ণ হয়নি, বরং চেষ্টা করা হয়েছে দেশের উন্নয়ন প্রচেষ্টাকেও ব্যাহত করার।
একই সাথে, পবিত্র কোরআনের কথিত অবমাননার পরিপ্রেক্ষিতে যে জনপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে, তাতেও নতুন করে চিন্তা-ভাবনার অবকাশ রয়েছে যে একটি সত্যিকারের ধর্মনিরপেক্ষ ও যুক্তিবাদী চিন্তাসম্পন্ন দেশ গঠনের পথে ঠিক কোথায় আমাদের ভুলটা হয়েছে।
কুমিল্লার ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, কীভাবে যুদ্ধাপরাধী দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর আদালতে বিচার প্রক্রিয়া চলাকালীন ধর্মান্ধ গোষ্ঠীরা তাকে 'চাঁদে দেখা যাওয়া'-র ছবি ছড়ানোর মাধ্যমে দেশব্যাপী বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চেয়েছিল। ঠিক একইভাবে দুষ্কৃতিকারীরা একজন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীর নামে খোলা ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে কোরআন অবমাননার ছবি ছড়িয়ে দেয়, যার ফলস্বরূপ সংঘটিত হয় রামু ট্র্যাজেডি।
এই যে সামাজিক মাধ্যমের পুনঃ পুনঃ অপব্যবহারের মাধ্যমে দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করা এবং/অথবা সংকীর্ণমনা ব্যক্তি বা গোষ্ঠীগত উদ্দেশ্য হাসিলের চেষ্টা চলছে, এর বিরুদ্ধে অবিলম্বে, কঠিনতম ব্যবস্থা গ্রহণ করা আবশ্যক।
অপরাধীরা যদি বারবার পার পেয়ে যায়, তাতে অদূর ভবিষ্যতে এমন আরো অনেক ঘৃণ্য অপরাধের পথই কেবল সুগম হবে।