হরমুজ প্রণালীর উত্তেজনা কি পারমাণবিক চুক্তি ভঙ্গের ফল?
হরমুজ প্রণালী নিয়ে ইরান-যুক্তরাষ্ট্রের উত্তেজনা বেড়েই চলেছে। যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্র বাহিনীর ওপর হামলা চালানোর সমূহ প্রস্তুতি নিচ্ছে ইরান, এমন সন্দেহ অনেক দিন ধরেই করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র।
অন্যদিকে ইরানের তেল রফতানিতে কৌশলগত পারস্য উপসাগরীয় পথ বন্ধ করলে তেহরান হরমুজ প্রণালীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট বন্ধ করে তেল উৎপাদন ব্যাহত করার ভয় দেখিয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে।
এবছরের গোড়ার দিকে ইরানের সম্ভাব্য হামলার আশঙ্কায় রণতরির পর মধ্যপ্রাচ্যে নতুন প্রযুক্তির প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করে যুক্তরাষ্ট্র। ধারাবাহিক এইসব ঘটনা উপসাগরীয় অঞ্চলে উত্তেজনা বাড়াতে ভূমিকা রেখে আসছে। তবে এসব খবর পুরোনো।
কিন্তু হরমুজ প্রণালীকে ঘিরে এত উত্তেজনা কেন? ভূরাজনীতির দিকে একটু তাকানো যাক।
হরমুজ প্রণালী একটি সরু জলপথ যা আরব উপদ্বীপকে ইরান থেকে পৃথক করেছে। ৩৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই চ্যানেলটি পারস্য উপসাগরের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ওমান ও ইরানকে সংযুক্ত করেছে।
এই রুটটি আন্তর্জাতিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ তেলবাহী জাহাজ যাতায়াতের এটিই একমাত্র পথ। হরমুজ দিয়ে প্রতিদিন ২০ লাখ ব্যারেলের মতো তেলজাতদ্রব্য রপ্তানি হয়ে থাকে। এর সঙ্গে আছে তরলীকৃত গ্যাসও।
মার্কিন জ্বালানি তথ্য প্রশাসন কর্তৃপক্ষের মতে, ২০০৯ সালে সমুদ্রপথে তেল বাণিজ্যের ৩৩ শতাংশ হয় হরমুজ প্রণালি দিয়ে এবং ২০০৮ সালে হয়েছিল ৪০ শতাংশ।
নতুন করে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার উত্তেজনা এবছরের জুলাই মাসের শুরুতে চরমে পৌঁছায়। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা ও শর্তারোপের বিপরীতে ইরান জানিয়ে আসছে তারা কোনও চাপের মুখে মাথা নত করবে না। বরাবরের মত কথার যুদ্ধ চলছে উভয় দেশের নেতা ও কর্মকর্তাদের মধ্যে। যুক্তরাষ্ট্র ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারির প্রস্তুতি নিলেও তেহরান হুমকি দিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রপথ হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেওয়ার।
এখন দেশটি প্রতিদিন ২২ লাখ ৮০ হাজার ব্যারেল তেল রফতানি করে থাকে। তেল রফতানি কমে গেলে ইরানের আয়ও অনেক কমে যাবে। তাই হরমুজ প্রণালীই তাদের হাতে একমাত্র তুরুপের তাস। তা বন্ধ করে দেওয়ার সেই পুরোনো হুমকিই এখনতারা কাজে লাগাতে চায়। এই নৌপথটি বন্ধ করে দেওয়া হলে বাজার অস্থিতিশীল হয়ে তেলের দাম বেড়ে যাবে। এতে ইরানের আর্থিক ক্ষতিও কমে আসবে।
তবে এই ব্যস্ততম সমুদ্রপথ বন্ধ হলে প্রভাব পড়বে সারাবিশ্বের তেলের বাজারে। কেননা ইরান ও ওমানের মধ্য দিয়ে পারস্য উপসাগরে যাওয়ার সরু পথ হরমুজ প্রণালী দিয়েই বিশ্বের সামুদ্রিক তেল বাণিজ্যের ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়ে থাকে।
প্রতিদিন এই পথ দিয়ে প্রায় এক কোটি ৭০ লাখ ব্যারেল তেল রফতানি করা হয়। এছাড়া পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের যেকোনও ধরনের সামুদ্রিক যোগাযোগের জন্য পথটি অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে।
পথটির ওপর ইরাক, কুয়েত, বাহরাইন ও কাতারের সব বন্দর, আরব আমিরাতের বেশিরভাগ বন্দরসহ সৌদি আরবের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর পুরোপুরি নির্ভরশীল। এশিয়ার প্রায় ৮০ শতাংশ তেলের যোগান দেয় এই নৌপথ। হরমুজ প্রণালী তেল সরবরাহে বিশ্বে পঞ্চম স্থানে রয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে হরমুজ প্রণালীতে বেশ কিছু তেলের ট্যাংকারেও হামলার ঘটনা ঘটেছে। চলতি বছরের জুন মাসে ওমান উপসাগরে দুটি তেলের ট্যাংকারে হওয়া হামলার দায় যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ওপর চাপায়। মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র সৌদি আরবও আঙুল তোলে ইরানের দিকে। তবে ইরান এ দায় অস্বীকার করে। গুরুত্বপূর্ণ তেল পরিবহন রুটে হওয়া সর্বশেষ এ হামলার সূত্র ধরেই নতুন করে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে।
তেলের ট্যাংকারে হামলার কিছুদিন পরে হরমুজ প্রণালীর ওপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় ইরান একটি মার্কিন ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করে বলে অভিযোগ করা হয় যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে। ইরানের 'রেভ্যুলিশনারী গার্ডস' দাবি করে, মার্কিন ড্রোনটি ইরানের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছিল। এই ড্রোনটিকে গোয়েন্দা নজরদারির কাজে ব্যবহার করা হচ্ছিল বলেও অভিযোগ তাদের। অপরদিকে ড্রোনটিকে হরমুজ প্রণালীর ওপর একটি ভূমি থেকে ছোঁড়া ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয় বলে যুক্তরাষ্ট্রের দাবি এবং তারা এও বলেছে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানার সময় সেটি আন্তর্জাতিক আকাশসীমাতেই ছিল।
এ ঘটনার পর ইরানে পাল্টা আক্রমণের অনুমোদন দিলেও তারপর আবার পিছিয়ে আসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প । যদিও হামলার প্রাথমিক প্রস্তুতিও সম্পন্ন হয়েছিল ।
এ বছরের জুলাই মাসের মাঝামাঝিতে হরমুজ প্রণালী থেকে ইরান আরব আমিরাতের তেলের ট্যাংকার গায়েব করেছে বলে সন্দেহ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মধ্যপ্রাচ্যে পরমাণু কর্মসূচি ও বিদেশি আগ্রাসনের নীতির বিরুদ্ধে ইরানের ওপর মার্কিন অর্থনীতি ও সামরিক চাপ বাড়ানোয় তেহরান কয়েকটি তেলের ট্যাংকারের হামলার ঘটনায় জড়িত বলেই এই সন্দেহ।
পারস্য উপসাগরে ইরান-মার্কিন উত্তেজনার মধ্যেই ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ সিরিয়ার জন্য তেল বহন করছে সন্দেহে ৪ জুলাই স্পেনের দক্ষিণ উপকূলে যুক্তরাজ্যে তাদের অন্তরীপ জিব্রাল্টারের কাছে ইরানের গ্রেস ১-কে জব্দ করে। এ নিয়ে মার্কিনিদের বন্ধু বলে পরিচিত ব্রিটেনের সাথে ইরানের উত্তেজনা দেখা দেয়।
এর কয়েক দিন পরেই এই হরমুজ প্রণালী থেকে গত ১৯ জুলাই ব্রিটিশ ট্যাংকার, ‘স্টেনা ইমপেরো’ জব্দ করে ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড। ট্যাংকার না ছাড়লে ভয়াবহ পরিণতি ভোগ করতে হবে, এমন হুঁশিয়ারি দেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী।ফলে উত্তেজনার পারদ আরো উপরে উঠতে থাকে।
সর্বশেষ ইরান ১৭ জন সিআইএ এজেন্ট গ্রেফতারের যে দাবি করে তা প্রত্যাখ্যান করে যুক্তরাষ্ট্র। এরকম পরস্পরের প্রতি অসংখ্য অভিযোগ আর পালটা অভিযোগের মধ্য দিয়েই উপসাগরীয় অঞ্চলে আমেরিকা ও তার মিত্রদের সাথে ইরানের বিরোধ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। যুদ্ধাবস্থাও বিরাজ করছে সেখানে।
নতুন করে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিরোধ কেন, তা বোঝার জন্য ফিরে তাকাতে হবে অতীতের কিছু ঘটনার দিকে।
পঞ্চাশ বছরেরও অধিককাল আগে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত সামরিক অভ্যূত্থান ইরানে পার্লামেন্টারী ধরনের সরকার ব্যবস্থা উৎখাত করে তার স্থলে শাহকে ক্ষমতাসীন করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। শাহ শক্তহাতে ইরান শাসন করেন। তবে ১৯৭৯ সালে তার বিরুদ্ধে সর্বাত্মক গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে সরানো হয়।
শাহের সময়ে মারাত্মকভাবে মানবাধিকার লংঘিত হয়েছিল। গণমাধ্যমকে অবজ্ঞা করা হতো। অথচ, নিপীড়নকারী এই স্বৈরশাসকে যুক্তরাষ্ট্র সব সময়ই সমর্থিন দিয়ে গেছে। ১৯৭৯ সালের আগে ইরানে শাহ্ যখন ক্ষমতায় ছিলেন তখন ওয়াশিংটন ইরানের পরমাণু কর্মসূচির পক্ষে জোরালো সমর্থন জানিয়েছিল।
২০০৫ সালে হেনরি কিসিঞ্জার ওয়াশিংটন পোস্ট এ লিখেছিলেন। ত্রিশ বছর আগে হেনরি কিসিঞ্জার যখন প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড আর ফোর্ডের পররাষ্ট্র বিষয়ক সচিব ছিলেন তখন তিনি বলেছিলেন, “ইরানে পরমাণু শক্তি কার্যক্রম আরম্ভ করলে তা একদিকে যেমন দেশটির অর্থনীতির ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে সহায়ক হবে অন্যদিকে তেমনি ইরান তার তেল সম্পদের ‘রিজার্ভ’ পেট্টোকেমিক্যালে রূপান্তর ঘটিয়ে অথবা রপ্তানী করে প্রচুর আয় করতে পারবে”।
২০০৫ সালে ওয়াশিংটন পোস্টের ডাফনা লিন্জার কিসিঞ্জারকে তার পরস্পর বিপরীতধর্মী মতামতের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করছিলেন। কিসিঞ্জার তার স্বভাবসুলভ খোলামেলা জবাবে বলেন : “ সে সময়ে তারা ছিলেন আমাদের জোটভুক্ত দেশ, এ কারণে তাদের পরমাণু শক্তির যথাযথ প্রয়োজন ছিল”।
১৯৭৬ সালে ফোর্ড প্রশাসন ইরানে ব্যাপকভাবে পরমানু শক্তি ভিত্তিক শিল্প স্থাপনের বিষয়টি মেনে নেয়। তেহরানের মাল্টি বিলিয়ন খরচের নিমিত্তে প্লটোনিয়াম এবং ইউরোনিয়াম উন্নয়নেও যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা দেয়। লিনজার লিখেছেন, “দুটি বিষয়ই কিন্তু পরমাণু বোমা তৈরির পথের পাথেও”।
আজকাল আমেরিকা ও তার মিত্ররা বলেন যে ইরানের কাছে পরমাণু শক্তি থাকার প্রয়োজন নাই। ইরানের মতো অন্যতম প্রধান তেল উৎপাদনকারী দেশের জন্য পরমাণু নির্ভর জ্বালানি ক্ষেত্র তৈরি বরং ইরানের জন্য সম্পদের অপব্যবহার বৈ কিছু নয়।বর্তমানে ট্রাম্প প্রশাসনেরও একই সুর।
ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধ নতুন করে শুরু হয় এবছরের (২০১৯) মে মাস থেকে, যখন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৫ সালের পারমাণবিক কর্মসূচী সীমিত করতে বিশ্বের পরাশক্তি দেশগুলোর সঙ্গে ইরানের করার পরমাণু চুক্তি থেকে বের হয়ে আসে। ওই চুক্তি অনুযায়ী, দেশটি তাদের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচী সীমিত রাখবে।এর বদলে ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হবে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবার পর পরই ঘোষণা দেন ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ব্যাপারে যে ৬ জাতি সমঝোতা হয়েছিলো, সে ব্যাপারে তার আপত্তি রয়েছে। তিনি মনে করেন, ইরান চুক্তি হবার পরেও পারমাণবিক কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে। ফলে ২০১৮ সালের মে মাসে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক সমঝোতা থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেন এবং ইরানের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করেন।
এই পদক্ষেপের কারণে বিপর্যয়ে পড়ে ইরানের অর্থনীতি। কেননা দেশটি মূলত তার তেল বিক্রির ওপর নির্ভরশীল।ফলে দেয়ালে পীঠ ঠেকে গেলে যা হয়। পারমাণবিক কর্মসূচী নিয়ে বেশ কিছু প্রতিশ্রুতি থেকে সরে এসে পাল্টা জবাব দিতে শুরু করে ইরান।
এরই অংশ হিসাবে ইরান ঘোষণা দেয়, ২৭শে জুন নাগাদ তাদের সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের পরিমাণ চুক্তি সীমা ছাড়িয়ে যেতে পারে। তাদের এই ঘোষণা অনুযায়ী পরবর্তীতে ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ হার চারগুণ করা হয়(জুন ২০১৯)। সম্প্রতি ইরান এ হার আরও বাড়িয়েছে, যাতে দশ দিনের মধ্যেই তারা বেঁধে দেওয়া ৩০০ কেজি সীমা অতিক্রম করতে পারে।
এখানে একটি বিষয় স্পষ্ট, হরমুজ প্রণালীতে যে জলযুদ্ধ চলছে তার পেছনে ঐ ৬ জাতির সাক্ষরিত পারমানবিক চুক্তি এবং সেই চুক্তি থেকে আমেরিকার বের হয়ে আসাটাই আপাতত প্রধান কারণ। ‘আপাতত’ বলা হচ্ছে এই অর্থে যে, উপসাগরীয় অঞ্চলের এই দীর্ঘস্থায়ী সংঘাত যেমন রাতারাতি সৃষ্টি হয়নি আবার এই সংঘাত থেকে উত্তরণও সহজ নয়। আমেরিকা ও তার মিত্রদের মধ্যপ্রাচ্য নীতি সবসময়ই খুব গোলমেলে ছিল এবং আছে। ভবিষ্যতেও এই নীতির খুব একটা পরিবর্তন আসবে বলেও সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
অনেক আগে থেকেই আমেরিকার সবচেয়ে কাছের মিত্র বলে পরিচিত ইসরাইল এই অভিযোগ করে আসছে যে, ইরান তার কয়েকটি পারমাণবিক প্রকল্পে পারমাণবিক বোমা তৈরির পরীক্ষা অব্যাহত রেখেছে। যদিও International Atomic Energy Agency (IAEA) জানায়, ইরান গোপনে পারমাণবিক কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে, তার পেছনে কোনো শক্ত তথ্য প্রমাণ নেই। আর ইরান বরাবরই তার বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছে।
অপরদিকে ট্রাম্প প্রশাসন ইরানের উপর ‘চাপ’ অব্যাহত রেখেছে। আল জাজিরা তাদের এক প্রতিবেদনে (২৩ এপ্রিল ২০১৮, MAP : US Bases encircle Iran) দেখিয়েছে ইরানকে ঘিরে প্রায় ডজনখানেক ঘাঁটি রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। এই ঘাঁটিগুলো ওমান, আরব, আমিরাত, কাতার, কুয়েত, তুরস্ক ও ইসরাইলে অবস্থিত।এর পেছনে কারণ হলো যুক্তরাষ্ট্র (একই সাথে ইসরাইলও) ইরানকে তাদের নিরাপত্তার প্রতি ‘হুমকি’ হিসেবে মনে করে।
সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল এন্ড রেজিওনাল স্টাডিজ, জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ফরেন সার্ভিস এর (কাতার) পরিচালক মেহেরান কামরভার মতে, মূলত তিনটি কারণের জন্য যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে তার ‘অবস্থান’ ধরে রাখতে চায়-
তেল সম্পদ সুরক্ষিত রাখা, ইসরায়েলের সার্বভৌমত্ব নিশ্চত করা আর আমেরিকার স্বার্থের প্রতি হুমকি মোকাবেলা করা। উল্লেখ্য, প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধের আগে এই তিনটি বিষয়ের উপরেই ছিল প্রাথমিক অগ্রাধিকার।
বলা বাহুল্য যে ৯-১১ –এর আগে(২০১১) যুক্তরাষ্ট্রের বড় সেনা সমাবেশ ছিল ইউরোপে। ৯-১১ –এর পর সেনা মোতায়েন মধ্যপ্রাচ্যে সম্প্রসারিত হয় । এই সেনা মোতায়েনের সাথে সিরিয়া যুদ্ধ ও সম্ভাব্য ইরান যুদ্ধের সাথে একটা যোগসূত্র আছে। তবে শেষ পর্যন্ত আমেরিকা ইরানে কোন ‘ফ্রন্ট’ ওপেন করবে কি কিনা তা এখনই বলা মুসকিল।
তথ্যসূত্র:
এএফপি, রয়টার্স, দি গার্ডিয়ান, বিবিসি, নিউইয়র্ক টাইমস, ফার্স, মিডিল ইস্ট আই
Interventions by Noam Chomsky
Failed States: The Abuse of Power and the Assault on Democracy by Noam Chomsky
‘মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি’, তারেক শামসুর রহমান