আজ তাঁর জন্মদিন: বিশ্ব সিনেমার অতর আকিরা কুরোসাওয়া
তাঁর এক ভাই ছিল। সিনেমা হলে যখন নির্বাক চলচ্চিত্র চলত, ভাই বড় এক চোঙা মাইক মুখে লাগিয়ে গল্পটা বলে যেত দর্শকদের। সবার মধ্যে চুপটি করে শুনে যেত ছোট্ট আকিরা।
জাপানে একবার ভয়ানক ভূমিকম্প হল। আকিরারা বেঁচে গেল। রাস্তায় শয়ে শয়ে লাশ। চাপা পড়া, পোড়া। চারিদিকে পোড়া মাংসের গন্ধ। আকিরা চোখ বন্ধ করে রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলে। ভাই হিগো তাঁকে বকা দেয়। "একদম চোখ বন্ধ করবি না। চোখ বন্ধ করলেই ভয় পাবি। তাকিয়ে দেখ। তাকিয়ে দেখ ওঁদের মুখের দিকে।" আকিরা পারত না।
জাপানে সাইলেন্ট মুভির জায়গায় টকি এলো। হিগোর কাজ চলে গেল। একদিন ভাইয়ের সঙ্গে হাঁটতে হাঁটতে সে আচমকা থেমে গিয়ে বলল "তুই বরং বাড়ি যা।" অনেকসময় ধরে দেখল সে ভাইয়ের মুখটা।
আকিরা বাড়ির দিকে ফিরতেই হিগো লাফ দিল পাহাড়ের চূড়া থেকে। সবাই যখন ধরাধরি করে তাঁকে নিয়ে এল, আকিরা সেই প্রথমবার তাকালো কোন মৃতদেহের মুখের দিকে। যেমনটা হিগো বলেছিল- রক্তাক্ত, থেঁতলে যাওয়া।
অনেকদিন পর ১৯৭১ সালে যখন তাঁর পেটে গলস্টোনের ব্যথা, চোখের দৃষ্টি প্রায় নেই, একের পর এক ছবি ফ্লপ করছে, তখন সেই ভাইয়ের কথা ভেবেই একদিন গরম জলের বাথটাবে বসে হাতের শিরায় চালিয়ে দিয়েছিলেন ধারলো ক্ষুর। মৃত্যু আসেনি। ভাগ্যিস!
চিরকাল ভাবতেন সাদাকালো ছবির মায়া কিছুতেই রঙিন ছবি আনতে পারবে না। কিন্তু প্রযোজকের চাপে হাত দিলেন রঙিন ছবিতে। আর কিসব অসামান্য ছবিই না বানালেন একের পর এক।
শেক্সপিয়ারের কিং লিয়ার অবলম্বনে 'রেন'; অদ্ভুত মায়াভরা 'ডেরসু উজালা', যার শুরুটুকু দেখার জন্য একজীবন যথেষ্ট না; কানের সেরা চলচ্চিত্র 'কাগেমুশা'; কিংবা আকিরার সোয়ান সং 'ড্রিমস'- সব সিনেমাই অনন্য।
'ড্রিমসে' শিয়াল-কুকুরের বিয়ে দেখে ফেলা শিশু, যুদ্ধ থেকে ফিরে আসা সৈনিক আর সবার শেষে ভ্যান গখের আঁকা গমক্ষেতে কাকদের সঙ্গে নিজের মৃত্যুচেতনা মিলিয়ে দেওয়া…সিনেমার পর্দায় তাঁর মত কবিতা খুব কম পরিচালকই লিখেছেন।
১৯১০ সালে আজকের দিনে টোকিওর ওমিয়াচিতে জন্ম নিয়েছিলেন বিশ্ব সিনেমার এই অতর। শুভ জন্মদিন আকিরা কুরোসাওয়া।