বিলিয়নিয়ারদের যতটা বুদ্ধিমান ভাবা হয়, তারা কি সত্যিই তাই?
টাকা দিয়ে হয়তো সুখ কেনা যায় ঠিকই, কিন্তু টাকা দিয়ে বুদ্ধিমত্তা কেনা যায় না। চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, বিলিয়নিয়াররা আসলে সাধারণ মানুষের চাইতে খুব বেশি স্মার্ট নন; বরং জ্ঞানীয় সক্ষমতার পরীক্ষায় অপেক্ষাকৃত কম উপার্জনকারীদের চাইতে শীর্ষ উপার্জনকারীরা পিছিয়ে রয়েছেন।
৫৯,০০০ সুইডিশ পুরুষের ওপর গবেষণা চালিয়ে এমন তথ্য জানিয়েছেন গবেষকরা। তারা এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এদের জীবনযাপনের ওপর নজর রেখেছেন। গবেষকরা একজন ব্যক্তি কতটা স্মার্ট এবং তার আয় কত, এই দুটি বিষয়ে মধ্যে দৃঢ় সংযোগ খুঁজে পেয়েছেন- যতদিন না পর্যন্ত তাদের বার্ষিক বেতন ৬০০,০০০ ক্রোনারে (৪৬,৭০০ পাউন্ড) পৌঁছেছে। এরপর থেকে ভাগ্য, পারিপার্শ্বিক অবস্থা এবং ব্যক্তিত্বের মতো ফ্যাক্টরগুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
"মানুষের মেধার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক- জ্ঞানীয় সক্ষমতার ভিত্তিতে আমরা এমন কোনো প্রমাণ পাইনি যে, শীর্ষস্থানীয় চাকরিগুলো (যেখানে বেতন অনেক বেশি) যারা পেয়েছেন, তারা এর অর্ধেক বেতন পাওয়া কর্মীদের চাইতে অনেক বেশি যোগ্য ছিলেন", বলেন গবেষকরা।
যদি না আপনার প্রধান শখই হয়ে থাকে বিলিয়নিয়ারদের তৈলমর্দন করা, তাহলে নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে এগুলোর মধ্যে কোনোটাই খুব অবাক হওয়ার মতো তথ্য না। বরং শুধু বিলিয়নিয়ার ইলন মাস্কের টুইটার ফিডের দিকে তাকালেই বোঝা যাবে যে, অবিশ্বাস্যরকম ধনী হওয়া মানেই তুখোড় বুদ্ধিমান হওয়া নয়।
তবুও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সিইও এবং কর্মীদের মধ্যে পারিশ্রমিকের তফাৎ বিবেচনা করলে এসকল গবেষণার কথা জনসাধারণকে জানানো উচিত। ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে সিইও এবং মাঝারি স্তরের কর্মীদের মধ্যে বেতনের গড় পার্থক্য ছিল ৬০৪:১ (অর্থাৎ, একজন কর্মী ১ ডলার পাওয়ার বিপরীতে সিইও পেয়েছেন ৬০৪ ডলার)। গত বছর এই পার্থক্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৭০:১ (কর্মী ১ ডলার পাওয়ার বিপরীতে সিইও পেয়েছেন ৬৭০ ডলার)।
এছাড়াও, সবচেয়ে কম বেতনভুক্ত কর্মী আছে এমন মার্কিন কোম্পানিগুলোর সিইওরা গড়ে ১০.৬ মিলিয়ন আয় করেছেন, যেখানে মাঝারি স্তরের কর্মীরা পেয়েছেন মাত্র ২৩,৯৬৮ ডলার।
মজুরি অসমতা যুক্তরাজ্যে এতটা প্রবল না হলেও, সেখানেও অবস্থা তেমন ভালো বলা যায় না। গত বছরের একটি বিশ্লেষণে, লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জের এফটিএসই ৩৫০ সূচকের আওতায় নিবন্ধিত কোম্পানিগুলোর সিইওরা তাদের কর্মীদের গড় মধ্যক আয়ের চাইতে ৬৩ গুণ বেশি বেতন পাবেন বলে প্রত্যাশা করা হয়েছিল। অন্যদিকে, ২০২০ সালে এফটিএসই ৩৫০-এর বসদের মধ্যে ৪৩ জন তাদের কর্মীদের গড় বেতনের তুলনায় ১০০ গুণ বেশি বেতন নিয়েছেন।
এই বিশাল বেতন পার্থক্যকে আপনি কিভাবে ন্যায়সঙ্গত বলবেন? বলা সম্ভব না। আর উপরে উল্লিখিত এ ধরনের গবেষণায়ও এটি স্পষ্ট হয়ে যায় যে, কর্মীদের মেধাভিত্তিক মূল্যায়নের কারণে এই বেতন পার্থক্য তৈরি হয় না, এটা স্রেফ শীর্ষপদস্থদের চিরাচরিত লোভের জন্য।