সচল হওয়ার জন্য প্রায় প্রস্তুত ইরান হয়ে ভারত-রাশিয়া বাণিজ্যের নতুন করিডর
ভারত ও রাশিয়ার দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য উল্লেখযোগ্যভাবে কম খরচের ও দ্রুত হয়ে উঠতে চলেছে। নতুন পরিবহন করিডরের সুবিধা দিয়ে এর গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হবে ইরান।
এর আগে গত ৫ জুলাই পর্যন্ত ইরান ও ভারতের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে বেশকিছু সভা হয়। এসব আলোচনায় ভারতের পক্ষ থেকে ইরানের প্রতি ৭,২০০ কিলোমটার দীর্ঘ 'নর্থ-সাউথ ট্রান্সপোর্ট করিডর' (আইএনএসটিসি) সচল করার অনুরোধ করা হয়।
আইএনএসটিসি রাশিয়া ও ভারতের মধ্যে সমুদ্র, সড়ক ও রেলপথে যোগাযোগের বহুমাত্রিক পরিবহন নেটওয়ার্ক। ২০২১ সালের শেষ পর্যন্ত তাদের মধ্যেকার দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১৩ বিলিয়ন ডলার বা ১ লাখ কোটি ভারতীয় রুপি। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়া থেকে তেল ও অন্যান্য নিত্যপণ্য বিপুল পরিমাণে কিনছে নয়াদিল্লি, ফলে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণও প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।
রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলসহ আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, জর্জিয়ার মতো মধ্য এশিয়ার কিছু দেশ- ইরান হয়ে আইএনএসটিসি বাণিজ্য করিডোর চালুর ব্যাপক সুবিধাভোগী হবে। ভারতও পাবে আরও সস্তায় রাশিয়ান পণ্য আমদানির সুযোগ।
বাণিজ্যের মূল্য বাধাগুলির দূর করবে আইএনএসটিসি
করিডরটির বাণিজ্য পথগুলিতে এর আগে পরীক্ষামূলক চলাচলে (ড্রাই রান) দেখা গেছে, এতে আগের রূটগুলির ৪০-৪৫ দিনের তুলনায় পণ্য বহনের সময় নেমে আসে ২৫ দিনে। সুয়েজ খালের বিকল্প হওয়ায় আইএনএসটিসি ইরান ও রাশিয়ার ওপর আরোপিত পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত। এটি পশ্চিমা দেশগুলোর নিয়ন্ত্রণ থেকেও মুক্ত।
দ্য ট্রবিউন এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, 'এই করিডরে যুক্ত রয়েছে ১৮টি দেশ। পশ্চিমা দেশগুলি সময়ে সময়ে একতরফাভাবে যেসব নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে এই দেশগুলি কখনোই সেগুলির প্রতি সমর্থন দেয়নি।' অথচ এই অঞ্চলের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য রাশিয়া ও ইরানের ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় ব্যাহত হচ্ছে।
ভারতীয় গণমাধ্যম ইকোনমিক টাইমস এক প্রতিবেদনে জানায়, আইএনএসটিসির পূর্বাঞ্চলীয় শাখা হয়ে এরমধ্যেই ভারতে কন্টেইনারবাহী ট্রেন পাঠাতে শুরু করেছে রাশিয়া।
বাণিজ্য করিডরটির রয়েছে অমিত সম্ভাবনা; এটি হতে পারে সুয়েজ খান, ভুমধ্যসাগর ও বসফোরাস প্রণালীর মতো প্রচলিত আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পথগুলির উপযুক্ত বিকল্প।
চবাহার বন্দরকে করিডরের অন্তর্ভুক্ত করতে ইরানের প্রতি অনুরোধ করেছে ভারত। উল্লেখ্য বন্দরটি নির্মাণে ভারত অগ্রণী ভুমিকাও রাখে। চবাহার বন্দর দিয়ে সহজেই পণ্য আমদানি-রপ্তানির সুবিধা পাবে ভারত। এড়াতে পারবে পাকিস্তানের প্রভাব।আফগানিস্তানকেও বন্দরটি ব্যবহারের সুযোগ নেওয়ার প্রস্তাব দিতে পারে নয়াদিল্লি। সম্প্রতি তালেবান সরকারের সাথে দিল্লির কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনও সেদিকে ইঙ্গিত করছে।
ইরানের সাথে ভারতের কৌশলগত সম্পর্ক বেশ জটিল হলেও, তা বেশ গুরুত্বের। অপরিশোধিত ইরানের তেলের ওপর ভারতের নির্ভরশীলতা দীর্ঘদিনের। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে এই বাণিজ্যে ভাটা পড়লেও, তা একেবারে বন্ধ হয়ে যায়নি। তা ছাড়া, ইরানের মাধ্যমেই পাকিস্তানকে এড়িয়ে মধ্য এশিয়ার দেশগুলির সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে নয়াদিল্লি।
- সূত্র: কোয়ার্টজ ইন্ডিয়া