রাশিয়ার সাথে যোগ দিতে ডনবাস, জাপোরোজিয়ে ও খেরসনে চলছে গণভোট
রাশিয়ার সাথে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিকের (ডিপিআর ও এলপিআর) পাশাপাশি খেরসন ও জাপোরোজিয়ে অঞ্চলে আজ থেকে গণভোট শুরু হয়েছে। আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে এই গণভোট, তবে শুধুমাত্র ২৭ তারিখে সরাসরি কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়া যাবে।
এ সপ্তাহের শুরুতে ডিপিআর এবং এলপিআর-এর পাবলিক চেম্বার অবিলম্বে গণভোট আয়োজনের বিষয়টি উত্থাপন করে। সোমবার, তারা নিজ নিজ প্রজাতন্ত্রের প্রধানদের কাছে আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জমা দেয়। এরপর মঙ্গলবার গণভোটের তারিখ নির্ধারণ করা হয় এবং স্থানীয় আইনসভা সর্বসম্মতভাবে গণভোটের আইন পাস করে। একই সাথে নির্বাচন কর্তৃপক্ষও গণভোটের প্রক্রিয়া অনুমোদন করে। এদিকে, স্থানীয় জনসংগঠনগুলো কর্তৃপক্ষের কাছে একই অনুরোধ নিয়ে হাজির হওয়ায় গেল মঙ্গলবার জাপোরোজিয়ে এবং খেরসন অঞ্চলও গণভোটে যোগ দেয়। বুধবার সকালে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এক ভিডিওর মাধ্যমে জানান, রাশিয়া গণভোটের সিদ্ধান্তকেই সমর্থন জানাবে।
একদিন ভোট হবে ভোটকেন্দ্রে
গণভোটের প্রাক্কালে ভোটের ফরম্যাটটি ছিল সবচেয়ে উত্তপ্ত আলোচনার বিষয়। সময়সীমা এবং প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে প্রথাগত কাগজের ব্যালট ব্যবহার করা হবে এবং ডিজিটাল ভোটিং থেকে বিরত থাকা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সাধারণ মানুষও শুধুমাত্র ২৭ সেপ্টেম্বর একদিনই ব্যক্তিগতভাবে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোটদান করতে পারবেন। নিরাপত্তাজনিত কারণে বাকি দিনগুলোতে ঘরে বসে বা নিজেদের কমিউনিটির মধ্যেই ভোট দেওয়া যাবে।
ডিপিআর এবং এলপিআর-এর বাসিন্দাদের জিজ্ঞাসা করা হবে যে তারা "ফেডারেল বিষয় হিসাবে রাশিয়ায় তাদের প্রজাতন্ত্রের যোগদানকে সমর্থন করে কিনা।"
অন্যদিকে, জাপোরোজিয়ে এবং খেরসনের বাসিন্দাদের কাছে প্রশ্ন থাকবে- তারা "ইউক্রেন থেকে এই অঞ্চলের বিচ্ছিন্নতা, একটি স্বাধীন দেশ গঠন এবং পরবর্তীতে ফেডারেল বিষয় হিসাবে রাশিয়ায় যোগদানের পক্ষে কিনা।"
ডিপিআর এবং এলপিআর, যেখানে রুশ ভাষাই একমাত্র রাষ্ট্রীয় ভাষা, সেখানে ব্যালট পেপার রুশ ভাষায় ছাপানো হবে। আর জাপোরিজিয়ে এবং খেরসনে ব্যালট পেপার রুশ ও ইউক্রেনীয়, উভয় ভাষায়ই ছাপানো হবে।
রাশিয়ায়ও থাকবে ভোট কেন্দ্র
ইউক্রেনে লাগাতার গোলাবর্ষণ চলতে থাকায় ডনবাস, জাপোরোজিয়ে এবং খেরসনের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাসিন্দা নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। তাই তাদেরকে রাশিয়াসহ নিজেদের সীমানার বাইরে থেকেও ভোটদানের সুযোগ দেওয়া হবে।
রুশ সংবাদ সংস্থা 'তাস' সূত্রে জানা গেছে, গণভোট উপলক্ষে ডিপিআরজুড়ে ৪৫০টি ভোট কেন্দ্র স্থাপন করা হবে এবং রাশিয়ায় সরিয়ে নেওয়া লোকেদের জন্য আরও ২০০টি ভোট কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। এলপিআর এর অধিবাসীরা প্রজাতন্ত্রজুড়ে ৪৬১টি ভোটকেন্দ্রে; সেই সাথে রাশিয়া অঞ্চলে- যেখানে ২০১টি ভোট কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে, সেখানে ভোট দিতে পারবেন।
এদিকে, জাপোরোজিয়ে কর্তৃপক্ষ গণভোট উপলক্ষে ৩৯৪টি ভোট কেন্দ্র এবং রাশিয়া, এলপিআর, ডিপিআর অ খেরসন অঞ্চলজুড়ে আরও ৫৮টি ভোট কেন্দ্র স্থাপনের ঘোষণা দিয়েছে।
খেরসন অঞ্চলের বাসিন্দারা তাদের নিজ অঞ্চল ছাড়াও, ক্রিমিয়া এবং মস্কোসহ একাধিক রাশিয়ান শহরে ভোট দিতে পারবেন, যেখানে আটটি আঞ্চলিক ও ১৯৮টি জেলা নির্বাচন কমিশন তৈরি করা হয়েছে। খেরসনের নির্বাচন কমিশনের প্রত্যাশা, প্রায় ৭৫০,০০০ মানুষ এই গণভোটে অংশ নেবেন। অন্যদিকে, জাপোরোজিয়ে অঞ্চলে রেজিস্টারড ভোটারের সংখ্যা ৭৫০,০০০। এছাড়া, ডিপিআর তাদের ভোটারদের জন্য ১.৫ মিলিয়ন ব্যালট ছাপিয়েছে।
নির্বাচন পর্যবেক্ষণ
ডিপিআর, এলপিআর, জাপোরোজিয়ে ও খেরসন- চারটি অঞ্চলই গণভোট প্রক্রিয়ায় সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও বৈধতা বজায় রাখার অঙ্গীকার করেছে এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের জন্য নির্বাচন পর্যবেক্ষণের দ্বার উন্মুক্ত রেখেছে।
এলপিআর-এর কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের (সিইসি) চেয়ারপারসন ইয়েলেনা ক্রাভচেঙ্কো বুধবার বলেন, সিইসি বিদেশি পর্যবেক্ষকদের কাছ থেকে আবেদন গ্রহণ করছে এবং সেগুলো "বিবেচনা" করছে, যদিও তিনি তাদের দেশের নাম উল্লেখ করেননি। নির্বাচন কর্মকর্তার ভাষ্যে, ভোটের দিনগুলোতে ভোট কেন্দ্রে এবং কেন্দ্রের বাইরেও বিদেশী পর্যবেক্ষক এবং সিভিক চেম্বারের প্রতিনিধিত্বকারী পর্যবেক্ষকরা উপস্থিত থাকবেন। খেরসন অঞ্চলের নির্বাচন কমিশনের চেয়ারপারসন মারিনা জাখারোভা জানান, 'উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দেশের কাছে' ইতোমধ্যেই আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়েছে।
গত ১৯ সেপ্টেম্বর ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল মার্কেটিং একটি ফোন জরিপ চালিয়েছে, যেখানে প্রায় ৪০০০ উত্তরদাতা জড়িত ছিল। এ জরিপে দেখা গেছে, খেরসন ও জাপোরোজিয়ে অঞ্চলের প্রায় ৮০ শতাংশ বাসিন্দা, এলপিআর-এর ৯০ শতাংশ বাসিন্দা এবং ডিপিআর-এর ৯১ শতাংশ বাসিন্দা রাশিয়ার সাথে যোগ দেওয়ার পক্ষে।
সূত্র: তাস