যুদ্ধ শুরুর পর সবচেয়ে দ্রুত গতিতে ইউক্রেনে অগ্রসর হচ্ছে রাশিয়া
বিশ্লেষক ও যুদ্ধ বিষয়ক ব্লগাররা বলছেন, ২০২২ সালে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে চলতি মাসে রুশ বাহিনী ইউক্রেনে সবচেয়ে দ্রুত গতিতে অগ্রসর হচ্ছে। রাশিয়ান বাহিনী গত এক মাসে লন্ডনের আয়তনের প্রায় অর্ধেক এলাকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে।
কিছু রাশিয়ান ও পশ্চিমা কর্মকর্তারা বলছেন, মস্কোর বাহিনী তাদের সবচেয়ে বড় আঞ্চলিক সাফল্য অর্জন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিয়েভকে মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে পাল্টা আঘাত হানার অনুমতি দেওয়ার পর; এবার যুদ্ধ এ যাবতকালের সবচেয়ে বিপজ্জনক পর্যায়ে প্রবেশ করতে পারে।
স্বাধীন রুশ সংবাদ গোষ্ঠী এজেন্টস্টভো এক প্রতিবেদনে বলেছে, 'রাশিয়া ইউক্রেনে দখল করা এলাকার আয়তনের নতুন সাপ্তাহিক এবং মাসিক রেকর্ড সৃষ্টি করেছে।'
এতে বলা হয়, গত সপ্তাহে রুশ সেনাবাহিনী ইউক্রেনের প্রায় ২৩৫ বর্গকিলোমিটার (৯১ বর্গমাইল) এলাকা দখল করেছে।
ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকা একটি গ্রুপ ডিপস্টেটের তথ্য উদ্ধৃত করে এতে বলা হয়েছে, নভেম্বরে রুশ বাহিনী ইউক্রেনের ৬০০ বর্গকিলোমিটার (২৩২ বর্গমাইল) এলাকা দখল করে নিয়েছে।
রাশিয়া জুলাই মাসে পূর্ব ইউক্রেনে দ্রুতগতিতে অগ্রসর হতে শুরু করেছিল, ঠিক তখনই ইউক্রেনীয় বাহিনী তার পশ্চিমাঞ্চলীয় কুরস্ক এলাকার একটি ছোট অংশ দখল করে। ওপেন সোর্স মানচিত্র অনুসারে, তখন থেকেই রাশিয়ার অগ্রগতি ত্বরান্বিত হয়েছে।
ওপেন সোর্স মানচিত্র অনুসারে, বর্তমানে রাশিয়া ইউক্রেনের ১৮% এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে, যার মধ্যে রয়েছে ক্রিমিয়া সম্পূর্ণ, ডনবাসের ৮০% এরও বেশি (যার মধ্যে লুহানস্ক এবং দোনেৎস্ক অন্তর্ভুক্ত), এবং জাপোরিজঝিয়া ও খেরসনের ৭০% এরও বেশি, পাশাপাশি খারকিভ অঞ্চলের প্রায় ৩%।
কোনো পক্ষই নিজেদের ক্ষয়ক্ষতির সঠিক তথ্য প্রকাশ করেনি, যদিও পশ্চিমা গোয়েন্দারা অনুমান করেন যে নিহত বা আহতের সংখ্যা কয়েক লাখে পৌঁছেছে। অন্যদিকে পূর্ব ও দক্ষিণ ইউক্রেনের বিস্তীর্ণ এলাকা বিরানভূমিতে পরিণত হয়েছে।
রাশিয়ার অগ্রযাত্রা
গত মে মাসে প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে পরিবর্তন করা রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বারবার বলেছেন, রাশিয়ান বাহিনী অনেক বেশি কার্যকরভাবে অগ্রসর হচ্ছে এবং রাশিয়া ইউক্রেনে তার সকল লক্ষ্য পূরণ করবে।
দোনেৎস্ক অঞ্চলে রুশ বাহিনী পোকরভস্ক শহরের দিকে অগ্রসর হয়ে কুরাখোভ শহরে ঢুকে পড়েছে।
রুশ বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়া ধীরে ধীরে এলাকা ঘেরাও করে এবং তারপর ইউক্রেনীয় বাহিনীকে আর্টিলারি ও গ্লাইড বোমা দিয়ে আক্রমণ করছে।
ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর জেনারেল স্টাফ তার সোমবারের আপডেটে বলেছেন, সন্ধ্যায় ফ্রন্ট লাইনের কুরাখোভ অংশে বিভিন্ন মাত্রার ৪৫ টি যুদ্ধ চলছে।
রাশিয়ান যুদ্ধ ব্লগাররা বলেছেন, রাশিয়া যদি কুরাখোভের চারপাশে ইউক্রেনীয় প্রতিরক্ষা ভেদ করতে পারে, তবে তারা পশ্চিম দিকে জাপোরিঝঝিয়া শহরের দিকে অগ্রসর হতে পারবে এবং তাদের পেছনদিক সুরক্ষিত করে পোকরোভস্কের দিকে অগ্রসর হতে পারবে।
ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার রিপোর্ট এবং রুশপন্থী সামরিক ব্লগাররা বলছেন, রুশ সেনারা কুরাখোভে রয়েছে।
সোমবার ডিপস্টেটও তাদের মেসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রামে জানিয়েছে, রুশ বাহিনী কুরাখোভের কাছাকাছি অবস্থান করছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বারবার বলেছেন, সব রুশ সেনা প্রত্যাহার না করা এবং ক্রিমিয়াসহ মস্কোর দখল করা সব এলাকা ফেরত না দেওয়া পর্যন্ত শান্তি প্রতিষ্ঠা করা যাবে না।
কিন্তু রুশ সেনাদের তুলনায় ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী সৈন্য নিয়োগ এবং নতুন ইউনিটগুলোকে সরঞ্জাম সরবরাহ করতে হিমশিম খাচ্ছে।
জেলেনস্কি বলেছেন, তিনি বিশ্বাস করেন পুতিনের প্রধান লক্ষ্য ছিল দনবাসের পুরো এলাকা দখল করা, যা দনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চল নিয়ে গঠিত এবং ইউক্রেনীয় বাহিনীকে কুরস্ক অঞ্চল থেকে বের করে দেওয়া, যার কিছু অংশ তারা আগস্ট থেকে নিয়ন্ত্রণ করে আসছে।
ভাবানুবাদ: তাবাসসুম সুইটি