জাপানের ‘ওয়ারেন বাফেটে’র মতে জীবনে সম্পদ, সাফল্য ও সুখ অর্জনের এক নম্বর রহস্য কী?
সম্পদের প্রাচুর্যই জীবনে সুখ অর্জনের একমাত্র রহস্য নয়। অথচ, আরও বেশি বিত্তবৈভব চান না, এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে। অনেকেই আছেন, অগাধ সম্পদের পরও যাদের মানসিক পরিতৃপ্তি নেই, সব সময় একটা আরও চাই-আরও চাই ভাব।
মানুষের এই আজন্ম স্বভাবের দিকে ইঙ্গিত করে — মার্কিন গণমাধ্যম সিএনবিসি-এ — এর ব্যতিক্রম অথচ অতি-সফল এক ব্যক্তির স্মৃতিচারণ করেছেন কেন হোন্ডা নামক একজন সুখ বিশেষজ্ঞ। ২০১৬ সালে ৮৩ বছর বয়সে প্রয়াত হওয়া এই সফল উদ্যোক্তার নাম ওয়াহেই তাকেদা। এ বিনিয়োগ ব্যবসায়ী জাপানের ওয়ারেন বাফেট নামেও বিখ্যাত ছিলেন।
জাপানের শীর্ষ বিনিয়োগকারী ছিলেন তিনি। বিনিয়োগ থাকলে দুশ্চিন্তাও থাকে ব্যবসায়ীদের। কিন্তু, তাকেদা ছিলেন খুবই সুখী। তার কাছে ১৫ বছর শিক্ষানবিশ জীবনে অন্তত এমন অভিজ্ঞতাই হয় কেন হোন্ডার।
হোন্ডা বলেছেন, সাফল্যে ভরা এক অর্থপূর্ণ জীবন কীভাবে কাটানো উচিত এটা তাকেদাই তাকে শেখান। অর্থ অর্জনকে তাকেদা একটি খেলা হিসেবে দেখেছেন—যে খেলায় আপনি জীবনের যে কোনো মুহূর্তে এসে অর্জিত সব সম্পদ খুব সহজেই হারাতে পারেন।
জাপানের 'ওয়ারেন বাফেট'
'জাপানের ওয়ারেন বাফেট' হিসেবে পরিচিত তাকেদা একসময় দেশটির সবচেয়ে সফল ও সুপরিচিত উদ্যোক্তা ছিলেন।
২০০৬ সালে ১০০টির বেশি কোম্পানিতে শীর্ষ ১০ স্টেকের মালিক ছিলেন তাকেদা। ওসব স্টেকের দরুন ৩০ বিলিয়ন ইয়েনের মালিক হয়ে জাপানের শীর্ষ ব্যক্তিগত বিনিয়োগকারীতে পরিণত হয়েছিলেন তিনি।
তাকেদা কনফেকশনারি নামক একটি কোম্পানিও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তিনি। এ কোম্পানির ফ্যাক্টরিতে গেলে দেখা যাবে, সেখানকার কর্মীরা বাচ্চাদের গলায় 'আরিগাতো' শুনতে শুনতে কাজ করছেন। জাপানি ভাষায় আরিগাতো শব্দের অর্থ ধন্যবাদ।
সুখী ও সমৃদ্ধ জীবনের চাবিকাঠি 'মারো'
জাপানি ভাষায় মাগোকোরো শব্দের অর্থ হচ্ছে 'একটি আন্তরিকতাপূর্ণ হৃদয়'। আর মাগোকোরো'র সংক্ষিপ্ত রূপ মারো। তাকেদার জীবনে এ মারো দর্শনের প্রভূত প্রতিফলন রয়েছে।
মারো দর্শন অনুযায়ী, যার উদ্দেশ্য মহৎ ও যিনি ন্যায়নিষ্ঠ জীবনযাপন করেন, তার মারো শক্তিশালী থাকে। মনের শান্তি ও কৃতজ্ঞতাবোধই মারো দর্শনের মূলকথা।
হোন্ডা নিশ্চিতভাবে জানেন, তার জীবনের বর্তমান সাফল্য তাকেদার 'মারো আপ' ও 'আরিগাতো' বলার পরামর্শেরই সরাসরি ফল।
কনফেকশনারি ব্যাবসায় সাফল্যের পর তাকেদা ঠিক করেন তিনি ক্ষুদ্র ব্যাবসার প্রবৃদ্ধি বাড়ানো নিয়ে কাজ করবেন। এরপর তিনি 'সম্প্রদায়ের মানবহিতৈষী' হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।
নিজের দুর্দান্ত কর্মজীবনে তাকেদা হাজারো মানুষকে আরও বেশি দাতা হয়ে উঠতে এবং তাদের জীবনে অর্থের প্রবেশ ও পরিত্যাগের বিষয়ে উদার হতে উৎসাহিত করেছিলেন।
তাকেদা বিশ্বাস করতেন, দয়া ও উদারতাই জীবনের সুখ ও উন্নতির মূল চাবিকাঠি।
'মারো'র পর্যায়ে গমন
যারা মারো দর্শন চর্চা করেন, তারা নিজের ও আশেপাশের মানুষদের জন্যও জয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করেন।
ব্যক্তির মারো বৃদ্ধি পেলে, তাকেদার মতে তিনটি বিষয় ঘটে।
১. আপনার মানুষকে আকর্ষণ করার ক্ষমতা বেড়ে যায়। আপনি 'পজিটিভ এনার্জি' নিঃসরণ ও আকর্ষণ করতে শুরু করেন। এর ফলে আপনার চারপাশ ভালো মানুষে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে।
আপনি তখন সেসব মানুষের সান্নিধ্যেই আসেন, যাদেরকে নিয়ে আপনি প্রকৃত অর্থেই ভাবেন। এর ফলে আপনি একটি সুখী জীবনচক্রে প্রবেশ করেন।
২. আপনার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ জিনিসগুলো অর্জনে আপনি আরও প্যাশনেট ও উদ্যমী হয়ে ওঠেন। এর ফলে আপনার জীবন যাপন করার সর্বোচ্চ পথটা আপনি উপলব্ধ করতে পারেন।
৩. জীবনের প্রতি আপনার কৃতজ্ঞতাবোধ বেড়ে যায়। আপনি 'ধন্যবাদ' জ্ঞাপন করতে দ্বিধাবোধ করেন না। আর আপনার আশেপাশের মানুষও আপনাকে দেখে প্রভাবিত হন, তারাও কৃতজ্ঞতাবোধকে তাদের জীবনের অংশ করে তোলেন।