ফ্রান্সের পেনশন আন্দোলনের বিক্ষোভকারীরা বোর্দোর টাউন হলে আগুন দিল
পেনশন পাওয়ার বয়স বৃদ্ধি নিয়ে শুরু হওয়া আন্দোলনের মধ্যে বোর্দো শহরের টাউনহলে আগুন লেগে গিয়েছে। অবসর গ্রহণের বয়স আরও দুই বছর বাড়িয়ে ৬৪ করার নীতিমালা কার্যকর করায় এই আন্দোলন শুরু হয়। কোনো ধরনের ভোট ছাড়াই প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ তার সাংবিধানিক অধিকার প্রয়োগ করে ফরাসি সংসদের নিম্নকক্ষে এই নিয়ম জারি করায় এই আন্দোলন শুরু হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার সারা দেশজুড়ে দশ লক্ষেরও বেশি ফরাসি রাস্তায় নেমেছেন বলে জানিয়েছেন ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এর মধ্যে ১,১৯,০০০ জন নেমেছে রাজধানী প্যারিসেই। পুলিশ রাজধানীতে আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্য করে টিয়ার গ্যাস ছুড়েছে। সারাদেশজুড়ে ৮০ জন ফরাসি আন্দোলনকারীকে আটক করা হয়েছে।
ফ্রান্সের দক্ষিণ-পশ্চিমে থাকা বোর্দো শহরে একদিন ধরে আন্দোলন আর সংঘর্ষ চলার পর শহরটির টাউন হলের সামনের দরজায় আগুন ধরে যায়। আগুন ধরে যাওয়ার পেছনে কারা দায়ী তা নিশ্চিত করা না গেলেও খুব দ্রুত ফায়ার সার্ভিস আগুন নিভিয়ে ফেলে।
রয়টার্সের বরাতে জানা যায়, এখনো পর্যন্ত প্যারিসে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনই হয়েছে। তবে মাঝেমধ্যে মুখোশ পরা দাঙ্গাবাজরা বেশ কিছু দোকানের জানালা ভাঙচুর, ফার্নিচারের দোকানের আসবাব ভাঙচুর এবং ম্যাকডোনাল্ডসের একটি রেস্তোরাঁয় আক্রমণ করেছে বলে সংবাদ পাওয়া গিয়েছে।
এপি জানিয়েছে, পুলিশ আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে টিয়ার গ্যাস ছুঁড়েছে। অন্যদিকে, তারা আন্দোলনকারীদের ছুঁড়ে মারা বস্তু ও আগুনের শিকার হয়েছে। এ ঘটনায় রাজধানী প্যারিসে ৩৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এক আন্দোলনকারী রয়টার্সকে জানান, "আমি এই নতুন নিয়মের বিরোধিতা করি এবং 'গণতন্ত্রের আর কোনো মূল্য নেই' এই কথারও বিরোধিতা করি। আমাদের সিদ্ধান্তের প্রতিনিধিত্ব দেখা যাচ্ছে না, আর তা-ই আমরা বিরক্ত।" আরেকজন এপিকে জানান, "আমাদের এই আন্দোলনের উদ্দেশ্য হলো আমাদের বক্তব্যগুলোকে জানান দেওয়া, কারণ অন্য উপায়ে আমরা যে এই রিফর্মের বিরোধিতা করছি, তা তাদের কানে পৌঁছায়নি।"
আন্দোলনের ফলে ট্রেন শিডিউলে এবং তেল পরিশোধনাগারের কাজ ব্যাহত হয়েছে। শ্রমিক এবং শিক্ষকদেরকে দেখা গিয়েছে তাদের কাজ বাদ দিয়ে প্যারিসের চার্লস ডি গল বিমানবন্দরে আন্দোলনের উদ্দেশ্যে ভিড় জমাতে।
উত্তরের শহর রুয়েনে এক তরুণ নারীকে দেখা যায় তার হাতে খুবই গুরুতর আঘাত পেয়ে রাস্তায় শুয়ে থাকতে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায় পুলিশের ছোঁড়া 'ফ্ল্যাশ-বল' গ্রেনেডের আঘাতে তিনি তার বুড়ো আঙুল হারিয়েছেন।
পশ্চিমের শহর নান্তে, রেনেঁ এবং লরিয়েঁতেও পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ হয়েছে।
নান্তের এক আন্দোলনকারী মন্তব্য করেন, "অধিকার আদায়ে ফ্রান্সের মানুষ সবসময়েই রাস্তায় নেমে এসেছে। যদি মি. মাখোঁ এই ঐতিহাসিক বাস্তবতা মনে না করতে পারেন, তাহলে আমি জানি না তিনি এখানে কী করছেন।"
পেননশন নীতির বিরুদ্ধে থাকা রাজনৈতিক বাম দল এবং ইউনিয়নগুলো দিনটিকে 'সফল' হিসেবে ঘোষণা দিলেও এরপর ঘটনার মোড় কোনদিকে গড়াবে তা বলা যাচ্ছে না। এদিকে সরকার আশা করছে রাস্তায় সহিংসতার পরিমাণ বাড়লে একসময় সাধারণ জনগণ আন্দোলন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে।
বিরোধীরা জানিয়েছে আন্দোলন থামবে না, তবে ইউনিয়নগুলোর উচিৎ তাদের পরবর্তী কর্মসূচী ঠিক করা। নয়তো বৃহস্পতিবারের মতো সহিংসতা সামনের দিনগুলোতেও চলবে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে।
জানুয়ারি থেকে ফ্রান্সে এখনো পর্যন্ত নয়দিন আন্দোলন করা হয়েছে এবং ফরাসি ইউনিয়নগুলো আগামী বৃহস্পতিবার দশম দিনের ডাক দিয়েছে। রাজা তৃতীয় চার্লসের ফ্রান্স সফরের শেষ দিনের সাথে এই তারিখ কাকতালীয়ভাবে মিলে গিয়েছে, যেটি সহিংসতা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।
মার্চের ৬ তারিখ থেকে ধর্মঘট শুরু করা প্যারিসের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরাও আগামী সোমবার পর্যন্ত ধর্মঘট জারি রাখার ঘোষণা দিয়েছে।
এদিকে ফরাসি প্রেসিডেন্ট তার এই রিফর্ম করার সিদ্ধান্তের পক্ষ নিয়ে বলেন, এটি প্রয়োজন ছিল। ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী এলিজাবেথ বর্ন জানান, ভবিষ্যতে পুরো দেশের অর্থনৈতিক ঘাটতি যেন তৈরি না হয় সেজন্য এই পদক্ষেপ জরুরি ছিল।
সূত্র: বিবিসি