ইউক্রেন আক্রমণে ব্যবহৃত ইরানের শাহেদ ড্রোন এখন রাশিয়াতেই তৈরি হচ্ছে
ইরানের শাহেদ ড্রোন এবার নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি করছে রাশিয়া। এই ড্রোনগুলো তারা ইউক্রেনে আক্রমণ চালানোর জন্য ব্যবহার করেছে বলে এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
দ্য নিউইয়র্ক টাইমস-এর খবর অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি গবেষণা সংস্থা কনফ্লিক্ট আরমামেন্ট রিসার্চ গত জুলাইয়ে কিয়েভে খুঁজে পাওয়া দুটি ড্রোনের ধ্বংসাবশেষ পরীক্ষা করে দেখেছে, এগুলো দেখতে ইরানের শাহেদ-১৩৬ ড্রোনের মতো, তবে এর মধ্যে থাকা ইলেক্ট্রনিক মডিউলের সঙ্গে রাশিয়ান সার্ভেইলেন্স ড্রোনের ইলেক্ট্রনিক মডিউলের মিল রয়েছে।
গবেষকরা বলছেন, জেরান-২ নামক এই সিঙ্গেল-ইউজ ড্রোনগুলোকে দেখে ইরানি ড্রোনেরই রুশ সংস্করণ বলে মনে হচ্ছে।
গত বছর ইউক্রেনের শহরগুলোতে হামলা চালানোর জন্য ইরানের তৈরি ড্রোন ব্যবহার করতে শুরু করে রুশ বাহিনী।
ছোট, প্রপেলার-চালিত এই অস্ত্রগুলোতে বিস্ফোরকভর্তি থাকে যা সরাসরি লক্ষ্যবস্তুতে গিয়ে বিস্ফোরণ ঘটায় এবং ধ্বংস হয়ে যায়। এ কারণে এগুলো কামিকাজে বা আত্মঘাতী ড্রোন হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
রাশিয়ার ড্রোন নিয়ে অনুসন্ধানকারী দলটির নেতৃত্বে থাকা গবেষক ডেমিয়েন স্প্লিটারস বলেন, "এই নতুন সংস্করণের ড্রোনগুলো রাশিয়াকে তাদের আক্রমণের ধরন এবং এই ওয়ান-ওয়ে ড্রোনের ওপর নির্ভরশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করবে। তারা ঘরোয়া প্রযুক্তিতে এগুলো তৈরি করছে এবং এর উপরেই নির্ভর করবে।"
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, জেরান-২ ড্রোনগুলোর তৈরির উপকরণ ইরানের শাহেদ ড্রোনের চেয়ে আলাদা এবং একইসঙ্গে এগুলো রাশিয়ানদের চাহিদা ও প্রয়োজন অনুযায়ী বানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়ান ড্রোনগুলো ওভেন কার্বন ফাইবারের স্তরের উপর ফাইবারগ্লাস দিয়ে তৈরি, যা ইরানি ড্রোনগুলোতে ব্যবহৃত হানিকম্ব ধাঁচের উপাদানের চেয়ে আলাদা।
কনফ্লিক্ট আরমামেন্ট রিসার্চ যে দুটি ড্রোন পরীক্ষা করেছে, সেগুলোর গাইডেন্স সেকশনে 'কোমেটা' নামক ইলেকট্রনিক মডিউলও রয়েছে- যা আগেও রাশিয়ান ড্রোনগুলোতে পাওয়া গেছে।
ইউক্রেনীয় সংবাদ আউটলেটগুলোও ড্রোনগুলোর ছবি প্রকাশ করে বলেছে এগুলো রাশিয়ায় তৈরি বলেই মনে করা হচ্ছে।
সেন্টার ফর নেভাল অ্যানালাইসিস-এ রাশিয়ান সামরিক ড্রোন বিশেষজ্ঞ স্যামুয়েল বেনডেট বলেন, রাশিয়া ইরানের ড্রোনগুলোর নিজস্ব সংস্করণ তৈরি করতে পারে কিনা তা দেখার জন্যই অপেক্ষা করে আছেন বিশ্লেষকরা। এখন আমরা রাশিয়ান গণমাধ্যমে দেখছি যে এগুলো আসলে রাশিয়াতেই তৈরি; ড্রোনের নকশায় যেসব পরিবর্তন আনা হয়েছে সেগুলোও রাশিয়ার নিজস্ব প্রয়োজনের ভিত্তিতে করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, "এ থেকে বোঝা যাচ্ছে যে রাশিয়ানরা ইরানের আসল শাহেদ ড্রোনের মতো একই ক্ষমতাসম্পন্ন ড্রোন তৈরির চেষ্টা করছে যা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়ানো যেতে পারে। তাদের মূল লক্ষ্যই হলো, "সক্ষমতা বজায় রেখে এগুলোকে আরও কার্যকরীভাবে এবং কম খরচে তৈরি করা।"
রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণের পর পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো বিদেশি প্রযুক্তি যেন রাশিয়ার কাছে সহজলভ্য না হয় তার জন্য কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
কিন্তু তারপরেও রাশিয়া নানা উপায়ে তাদের অনেক প্রয়োজনীয় সামরিক সরবরাহের যোগান দিয়ে চলেছে।
স্প্লিটারস দ্য টাইমসকে আরও বলেন, আমরা যেসব উপাদান পেয়েছি তার অনেকগুলোই ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির পরে তৈরি; সেক্ষেত্রে আমাদের অনুসন্ধান রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ এবং কাউন্টার-ডায়ভার্সন পদক্ষেপের নিয়েও প্রশ্ন তোলে। তারা যদি এগুলো পেতেই থাকে, সেটা অবশ্যই একটা সমস্যা।"