রয়্যাল এনফিল্ডের ‘বুলেট’: বিশ্বের সবচেয়ে স্থায়ী পণ্য
কোনো কোম্পানি হয়তো যুগ যুগ টিকে থাকতে পারে, কিন্তু তাদের পণ্য সাধারণত ক্ষণস্থায়ী হয়। শেয়ারবাজারের হিসেবে কোম্পানির মূল্যমানে বর্তমানে সবচেয়ে এগিয়ে অ্যাপল। কিন্তু যেই অ্যাপল ২ কম্পিউটার বা প্রথম ম্যাক দিয়ে তাদের সাফল্যের ভিত তৈরি হয়েছে, সেগুলো কিন্তু এখন জাদুঘরে জায়গা পেয়েছে।
অ্যাপলের প্রতিদ্বন্দ্বী স্যামসাং যেমন নুডলস বিক্রির মাধ্যমে ব্যবসা শুরু করে। আবার ফোর্ডের সর্বশেষ মডেল 'এফ-১৫০ লাইটনিং ইলেকট্রিক পিকআপ ট্রাক' এর সঙ্গে তার ১৯০৮ সালে উৎপাদিত 'মডেল টি' এর মধ্যে চারটি চাকা ছাড়া আর কোনো মিলই খুঁজে পাওয়া যাবে না।
দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তি, ভোক্তা রুচি ও ব্যবসায়ী মডেলের যুগে 'যদি এটি ভেঙ্গে না যায়, তবে এটি ঠিক করতে যাবেন না' এ কথাটির আসলে তেমন মূল্য নেই।
যদি না তা হয় রয়্যাল এনফিল্ড। ১৯৩২ সালে তৎকালীন যুক্তরাজ্যভিত্তিক এই কোম্পানি 'বুলেট' নামে একটি মোটরসাইকেল বাজারে আনে। ১৯৯৪ সাল থেকে কোম্পানিটি ভারতীয়দের হাতে আছে। এখন ৯১ বছর পর, ২০২৩ সালে রয়্যাল এনফিল্ড তাদের আইকনিক এই মোটরসাইকেলের নতুন সংস্করণ উন্মোচন করেছে। যা দেখতে প্রায় সেই প্রথমটির অবিকল।
কোম্পানি জোর দিয়ে বলেছে, শুধু চেসিস, সিট এবং ইঞ্জিনে (আসলটির চেয়ে দুই-তৃতীয়াংশ হর্সপাওয়ার বেড়েছে) পরিবর্তন এসেছে। তবে মোটরসাইকেলটিতে প্রথম মডেলের মতো এটিতে কিক-স্টার্ট রাখা হয়নি এবং একটি জ্বালানি পরিমাপক যোগ করা হয়েছে। এছাড়া ২১ শতকের অন্যান্য মোটরসাইকেলের মতো টেকোমিটার বা তাপমাত্র পরিমাপক রাখা হয়নি।
রাইডিং এর ক্ষেত্রে এক ইউটিউবার বলেছেন, ইঞ্জিন স্টার্ট দেওয়ার পর রয়্যাল এনফিল্ডের বিখ্যাত 'ক্রাঞ্চ শব্দ' সম্ভবত ১৯৩০ এর দশকের সংস্করণের মতোই আছে।
আর এটিই বুলেটকে ধারাবাহিকভাবে উৎপাদিত কিন্তু পরিবর্তন না হওয়া বাহনের খেতাব দিয়েছে। বুলেট উৎপাদিত পণ্যের ইতিহাসের সবচেয়ে অপরিবর্তনীয় পণ্যগুলোরও একটি (একে-৪৭ প্রায় ৭৫ বছর ধরে একই রকম রয়েছে)।
ভারতে এখনো রয়্যাল এনফিল্ডের অন্যান্য মোটরসাইকেলে চেয়ে বুলেট বেশি বিক্রি হয়। জুনেই বুলেটের পূর্ববর্তী সংস্কণের ৮,০০০ মোটরসাইকেল বিক্রি হয়েছে। ভারতের সড়কে থাকা 'বুলেট' এর নির্দিষ্ট সংখ্যা হয়তো গণনা করা যাবে না, তবে তা কয়েক মিলিয়ন হবে নিশ্চিত।
ভারতে অন্তত ১,২০০টি নিবেদিত নিবেদিত রাইডিং ক্লাব রয়েছে। পাঞ্জাবের মাঠে, লাদাখের বিপজ্জনক পাহাড়ের ঢালে এবং শহরের রাস্তায় অহরহ 'বুলেট' দেখতে পাওয়া যায়। এটি বলিউডের নায়ক এবং খলনায়কদের জন্য একটি অপরিহার্য সরঞ্জাম। ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী ১৯৪৯ সালে প্রথমবার দেশের উত্তর সীমান্তে টহল দেওয়ার জন্য ৫০০টি বুলেট অর্ডার দিয়ে ভারতে এই মোটরযানের উন্মাদনা তৈরি করে। এখন সশস্ত্র বাহিনীর একটি স্টান্ট দল আছে-যাদের টর্নেডো বলা হয়- তারা কেবলই বুলেট ব্যবহার করে। এক মোটরসাইকেলে ৫৮ জনকে বহন করার কৃতিত্ব প্রদর্শন করেছে দলটি।
এসব বৈশিষ্টের পাশাপাশি যে কোন জায়গা মেরামত এবং পার্টস বদলানোর সুযোগই বুলেটের স্থায়ী জনপ্রিয়তা ব্যাখ্যা করে। অনেক ভারতীয়, যাদের বাড়ি বা গাড়ি কেনার হয়তো সামর্থ্য নেই তাদের অনেকে ২,৪০০ ডলার (প্রায় ২ লাখ ভারতীয় রুপি) দিয়ে বুলেট ঠিকই কেনেন। পরিবর্তন না এনেই যার এমন খ্যাতি ও আবেদন তার আর পরিবর্তনেরই কি দরকার?