রাশিয়া সফর শেষে কিম সঙ্গে নিয়ে ফিরলেন বুলেটপ্রুফ ভেস্ট, দুই ধরনের ড্রোন!
উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উনকে বুলেটপ্রুফ ভেস্ট ও ড্রোন উপহার দিয়েছে রাশিয়া। সম্প্রতি দেশটিতে দীর্ঘ ছয়দিনের সফরের শেষদিকে মস্কোর পক্ষ থেকে কিমকে এই উপহার প্রদান করা হয়।
সফরে পুতিনের সাথে বেশ উষ্ণ আলোচনা করেছে কিম। ফলে ইউক্রেন যুদ্ধে সহযোগিতার জন্য দুই দেশের মধ্যকার অস্ত্র চুক্তির সম্ভবনা আরও বেড়ে চলেছে। অন্যদিকে মস্কো ও পিয়ংইয়ংয়ের মধ্যকার সম্ভাব্য সামরিক সহায়তা নিয়ে বরাবরের মতোই উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও দেশটির পশ্চিমা মিত্ররা।
রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার গণমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী, গতকাল (রবিবার) সফর শেষে রুশ শহর ভ্লাদিভোস্টক ছেড়ে উত্তর কোরিয়ার উদ্দেশে রওনা দিয়েছে কিম। সফরকালে তিনি যুদ্ধবিমান দেখা, বিমানঘাঁটি ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় ফ্লিট ফ্রিগেট পরিদর্শন করেছেন। শেষে একটি জমকালো বিদায় অনুষ্ঠানের পর কিম ব্যক্তিগত সাঁজোয়া ট্রেনে পিয়ংইয়ংয়ের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন।
রাশিয়া সফরের ক্ষেত্রেও কিম বিমান নয়, বড় এই সাঁজোয়া ট্রেনে করেই দীর্ঘ ৪ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছিল। পুতিনের পক্ষ থেকে তাকে লাল গলিচায় অভ্যর্থনা জানানো হয়েছিল, ঘুরিয়ে দেখানো হয়েছে রাশিয়ার বেশ কয়েকটি সামরিক স্থান।
দীর্ঘ সময় ধরে উত্তর কোরিয়ার ওপর চরম নিষেধাজ্ঞা আরোপ রয়েছে। ফলে নিজেদের প্রয়োজনেই জ্বালানি থেকে শুরু করে খাবার; এছাড়াও মস্কোর কাছে থেকে সামরিক প্রযুক্তি সহায়তা লাভের চেষ্টা করছে পিয়ংইয়ং।
রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত নিউজ এজেন্সি তাসের রিপোর্ট মতে, কিম রাশিয়া ছাড়ার আগে দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় শহর প্রাইমরির গভর্নর তাকে একটি বুলেটপ্রুফ ভেস্ট ও এক সেট ড্রোন উপহার দিয়েছে।
তাসের তথ্যমতে, "ভেস্টটি বুক, কাঁধ, গলা এবং কুঁচকির সুরক্ষা প্রদানে সমর্থ। এটি পরিচিত অন্য বডি আর্মরের তুলনায় বেশ হালকা।"
কিমকে একইসাথে মোট পাঁচটি কামিকাজি ড্রোন এবং একটি জেরানিয়াম-২৫ এয়ারক্রাফ্ট-টাইপ রিকনেসান্স ড্রোন হিসাবে উপহার দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও থার্মাল ইমেজিং ক্যামেরায়ও অদৃশ্য বিশেষ একটি পোশাক সেট উপহার দেওয়া হয়েছে।
রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত নিউজ এজেন্সি আরআইএ তে প্রকাশিত একটি ভিডিওতে দেখা যায়, কিম রাশিয়ার আর্টিওম রেলওয়ে স্টেশন থেকে নিজের ব্যক্তিগত ট্রেনে চড়ে রওনা হচ্ছেন। তখন রুশ অফিসিয়ালরা তাকে হাত নেড়ে বিদায় জানাচ্ছেন।
এর আগে কিম রাশিয়ার সূদুর পূর্বাঞ্চলের আমুরে অবস্থিত ভোসতোচনি রকেট ও মহাকাশ কেন্দ্রে পুতিনের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। দীর্ঘ চার ঘণ্টাব্যাপী চলমান এই আলোচনায় কিম স্পেস প্রযুক্তি নিয়ে বেশ ভালো আগ্রহ আগ্রহ দেখিয়েছেন বলে জানিয়েছিলেন পুতিন।
এদিকে বৈঠকে পুতিনের প্রতি নিজের স্পষ্ট সমর্থন ব্যক্ত করেছেন কিম। একইসাথে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে মস্কোর যুদ্ধকে সমর্থনের কথাও বলেছেন। তিনি বলেন, "আমি সবসময় রাশিয়ার পাশে থাকবো।" অন্যদিকে পুতিন বৈঠকটিকে 'খুবই বাস্তবিক' বলে উল্লেখ করেছেন।
এদিকে চলতি মাসের শুরুর থেকে মার্কিন প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছিলো যে, রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যকার অস্ত্র চুক্তি সম্পর্কিত সমঝোতা বেশ 'কার্যকরীভাবে অগ্রসর' হচ্ছে।
যদিও দুই দেশের পক্ষ থেকে এমন কোনো চুক্তির কথা জনসম্মুখে ঘোষণা করা হয়নি। ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানান, দুই শীর্ষ নেতার পক্ষ থেকে বৈঠকে কোনো চুক্তি স্বাক্ষর হয়নি।
তবে আলোচনার মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যকার বেশ ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ব্যাপারটি ফুটে উঠেছে। আবার উত্তর কোরিয়া পারমাণবিক অস্ত্র এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির জন্য আর রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে নানা নিষেধাজ্ঞা মোকাবিলা করছে।
উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত নিউজ এজেন্সি কেসিএনএ এর তথ্যমতে, গত শুক্রবার কিম রাশিয়ার কমসোমলস্ক-অন-আমুর ইউরি গাগারিন এভিয়েশন প্ল্যান্ট দেখতে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি ফাইটার জেট ফিউজলেজ অ্যাসেম্বলি শপ এবং উইং প্রোডাকশন শপসহ নানা সুবিধা পরিদর্শন করেন। কিম রাশিয়ার বিমান উত্পাদন শিল্প দেখে 'গভীরভাবে প্রভাবিত' হন।
গত শনিবার কিম যুদ্ধবিমান, বিমানঘাঁটি ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় ফ্লিট ফ্রিগেট পরিদর্শন করেছেন। সেখানে তার সাথে ছিলেন রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সের্গেই শোইগু ও রুশ নৌ-বাহিনীর কমান্ডার-ইন-চিফ।
কেসিএনএ এর তথ্যমতে, কিম ও শোইগুর মধ্যে 'দুই দেশের সশস্ত্র বাহিনী, জাতীয় প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে' সামরিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
অন্যদিকে সফরটিকে ঘিরে শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, বরং দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, ইউক্রেনসহ ইউরোপীয় বিভিন্ন দেশ শঙ্কা প্রকাশ করেছে। যদিও কিম-পুতিনের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে প্রকৃতপক্ষে ঠিক কোন বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে সেটি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
তবে এটা নিশ্চিত যে, ইউক্রেন যুদ্ধে গতি আনতে মস্কো অস্ত্রের নতুন মজুদের জন্য বেশ মরিয়া। অন্যদিকে ধারণা করা হচ্ছে যে, পিয়ংইয়ংয়ের কাছে ইউক্রেন যুদ্ধে কার্যকরী এমন সব অস্ত্রের মজুদ রয়েছে।
অন্যদিকে অস্ত্র সরবারাহের বিনিময়ে পিয়ংইয়ং ব্যালিস্টিক মিসাইল সম্পর্কিত আরও উন্নত প্রযুক্তি সহয়তা চাইতে পারে। এতে করে দেশটির নিউক্লিয়ার অস্ত্র নিয়ে যে উচ্চাকাঙ্ক্ষা, সেটি আরও সামনের দিকে অগ্রসর হবে।