গাজায় নিহতের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়েছে, অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধের আহবান জাতিসংঘের সংস্থা প্রধানদের
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল বিমান হামলা ও গোলা নিক্ষেপ শুরুর পর থেকে এপর্যন্ত ১০ হাজার ২২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। সোমবার (৬ নভেম্বর) এ তথ্য নিশ্চিত করেছে হামাস সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
গত রাতভর প্রচণ্ড ইসরায়েলি বিমান হামলার পর এ তথ্য জানানো হলো। এসম্পর্কে ইসরায়েলি বাহিনীর ভাষ্য, তারা হামাসের একটি সামরিক কম্পাউন্ড-সহ শত শত লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করেছে।
এর আগে গাজার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল আল-শিফার একজন পরিচালক বিবিসিকে বলেছিলেন, তাৎক্ষণিকভাবে অন্তত ২০০ জন নিহত হওয়ার কথা তিনি জানতে পেরেছেন।
আগামীকাল ৭ নভেম্বর এক মাসে পা রাখবে এই যুদ্ধ। এই অবস্থায়, জাতিসংঘের মানবাধিকার ও ত্রাণ সংস্থাগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তাদের একটি গ্রুপ গাজায় বেসামরিক মানুষের 'ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞকে' মানবাধিকারের 'চূড়ান্ত অবমাননা' হিসেবে বর্ণনা করেছে। যেখানে নিহতদের কাতারে রয়েছে হাজার হাজার শিশু।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মতো পশ্চিমা বিশ্বের অধিকাংশ রাজনীতিবিদ ও সরকার-প্রধানেরা হামাসের তথ্যের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। যুদ্ধের আগে, গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যকে নির্ভুল হিসেবেই গ্রহণ করতো যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু, এই যুদ্ধের পর পশ্চিমা নেতারা এক ধিক্কারজনক মিথ্যাচারের আশ্রয় নিচ্ছেন।
এবিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিবিসিকে জানায়, তারা এই সংখ্যাকে বিশ্বাসযোগ্য বলেই মনে করছে।
হামাসের যেকোন তথ্য নিয়ে নোংরা রাজনীতি চলছে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন হামাসকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করে। যেহেতু গাজার সকল সরকারি সংস্থা হামাস নিয়ন্ত্রিত, তাই তারা ইসরায়েলের হয়ে এমন মিথ্যাচারে যোগ দিচ্ছে। নিহতের সংখ্যাকেও অস্বীকার করছে। অথচ, প্রকৃত সংখ্যা আরও বহুগুণে বেশি হতে পারে। কারণ ধ্বংসস্তূপে আটকা পড়া বহু মানুষকে উদ্ধার করা যায়নি, যাদের মৃত্যু অবধারিত। তা ছাড়া উদ্ধার হয়নি আরও অসংখ্য লাশ।
অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধের দাবি জাতিসংঘের সংস্থা প্রধানদের
এদিকে জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর প্রধানেরা এই যুদ্ধ ও হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে এক কঠোর বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, 'যথেষ্ট হয়েছে, আর নয়'। তারা অবিলম্বে মানবিক বিরতির দাবিও জানান।
জাতিসংঘের সব ধরনের আহ্বানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে ইসরায়েল। তেল আবিবের দাবি, গত ৭ অক্টোবরের হামলার সময়ে আটক করা ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি না দিলে তারা মানবিক বিরতিতেও সম্মতি দেবে না।
এই অবস্থায়, মানবিক বিরতির দাবি জানিয়ে দেওয়া বিবৃতিতে সই করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই-কমিশনার ভলকার তুর্ক, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান তেদরোস আধানম গেব্রেয়াসুস এবং জাতিসংঘের জাতিসংঘের জরুরি ত্রাণ সমন্বয়ক মার্টিন গ্রিফিথস-সহ ১৮ শীর্ষ কর্মকর্তা।
তারা বিবৃতিতে বলেন, 'পুরো একটি জনসংখ্যাকে অবরুদ্ধ করে, আক্রমণ চালানো হচ্ছে। তাদের বাঁচার জন্য অপরিহার্য সামগ্রী থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। বোমা হামলা চলছে বসতবাড়ি, আশ্রয়কেন্দ্র, হাসপাতাল ও ধর্মীয় স্থলে (মসজিদে-চার্চে)। এটা কোনমতেই গ্রহণযোগ্য নয়।'
'আমরা অবলম্বে মানবিক বিরতির দাবি জানাই। এক মাস পার হয়েছে, যথেষ্ট হয়েছে, আর নয়। এখনই সংঘাত বন্ধ করতে হবে।'