ব্রিটিশ নাগরিকত্ব ফিরে পাওয়ার আপিল খারিজ হলো শামীমা বেগমের
যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্ব বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে করা আপিলে হেরে গেছেন শামীমা বেগম। আপিল আদালত শামীমা বেগমের যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্ব পুনর্বহালের আপিলের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে, যার অর্থ ২৪ বছর বয়সী বেগমকে অবশ্যই সিরিয়ায় থাকতে হবে।
জাতীয় নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে ২০১৯ সালে শামীমা বেগমের নাগরিকত্ব বাতিল করে ব্রিটিশ সরকার। সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেট গ্রুপে যোগ দিতে ১৫ বছর বয়সে লন্ডন ত্যাগ করা শামীমা বেগম এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করেছিলেন, আপিল বেঞ্চের তিনজন বিচারকই তার বিরুদ্ধে রায় দেন। তবে এখনও সুপ্রিম কোর্টে আপিলের সুযোগ রয়েছে তার।
শামীমার আইনজীবী ড্যানিয়েল ফার্নার বলেছেন, ন্যায়বিচার না পাওয়া পর্যন্ত এবং নিরাপদে বাড়ি ফিরে না আসা পর্যন্ত তার আইনি দল লড়াই থামাবে না।
তবে বিচারকরা শামীমা বেগমের সব যুক্তি সম্পূর্ণরূপে খারিজ করে দিয়েছেন। এই রায় সুপ্রিম কোর্টে তার পূর্ণ আপিল পাওয়ার ক্ষমতাকেও প্রভাবিত করতে পারে।
প্রধান নারী বিচারক ব্যারোনেস কার মন্তব্য করেন, 'কেউ তর্ক করতে পারেন যে শামীমা বেগমের রায়ের সিদ্ধান্ত কঠোর ছিল। আবার কেউ বলতে পারেন নিজের দুর্ভাগ্যের জন্য শামীমা বেগম নিজেই দায়ী। কিন্তু কোনো মতের সঙ্গেই একমত বা দ্বিমত পোষণ করা এই আদালতের কাজ নয়। আমাদের একমাত্র কাজ হলো রায়টি বেআইনি ছিল কিনা তা মূল্যায়ন করা। আমরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি যে এটি ছিল না এবং তাই আপিলটি খারিজ করা হয়েছে।'
শামীমার আইনজীবীরা গত বছর সর্বশেষ শুনানির পরে আদালতে আপিল করেছিলেন, যুক্তি দিয়েছিলেন যে তার নাগরিকত্ব প্রত্যাহারের হোম অফিসের সিদ্ধান্তটি বেআইনি। তাদের মতে, শামীমা স্ব-ইচ্ছায় সিরিয়ায় গিয়েছিলেন নাকি পাচার হয়েছিলেন তা পর্যাপ্তভাবে মূল্যায়ন করেননি কর্মকর্তারা।
শুনানির সময় হোম অফিসের প্রতিনিধিত্বকারী স্যার জেমস এডি কেসি জানান, জাতীয় নিরাপত্তা এই মামলার মূল বৈশিষ্ট্য ছিল। তিনি বলেন, 'কেউ যদি প্রভাবিত হয়েও চরমপন্থি হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রেও সে যে জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ঝুঁকি এটা অস্বীকার করা যাবে না।'
আপিল আদালতের এই রায় সম্ভাব্য আইনি সংকট এড়াতে সরকারের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য বিজয়। যদি এই রায় বাতিল করা হত, তবে ভবিষ্যতে স্বরাষ্ট্র সচিবদের জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তি পাচারের মতো পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন কিনা সেটি বিবেচনায় রেখে সিদ্ধান্ত নিতে হত।
আদালতের সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, শুক্রবারের রায়ে তারা সন্তুষ্ট এবং যুক্তরাজ্যের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা বজায় রাখাই তাদের অগ্রাধিকার।
প্রধানমন্ত্রীর একজন মুখপাত্র বলেছেন যে, সরকার জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার জন্য সর্বদা কঠোরতম পদক্ষেপ নেবে।
তবে শামীমা বেগমের আইনজীবীরা সুপ্রিম কোর্টে আপিল করার ইঙ্গিত দিয়েছেন। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের প্রতিক্রিয়া জানাতে এক বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
শামীমার আইনি দলের সদস্য গ্যারেথ পিয়ার্স বলেন, শামীমা বেগমকে ফিরিয়ে নেয়া যুক্তরাজ্যের নৈতিক দায়িত্বের মধ্যে রয়েছে, যেমনটা সিরিয়া ফেরত নাগরিকদের নিয়ে অন্যান্য দেশ করে থাকে।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শামীমা বেগম ইসলামিক স্টেট গ্রুপে (আইএস) যোগ দিতে ২০১৫ সালে সিরিয়ায় পাড়ি জমান। তার সঙ্গী ছিলেন খাদিজা সুলতানা ও আমিরা আবাসে।
ধারণা করা হচ্ছে, ঘরে বোমা বিস্ফোরণে সুলতানার মৃত্যু হয়েছে। আর আবাসের ভাগ্য এখনও অজানা।
তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে আইএস শাসনের অধীনে বসবাস করে শামীমা বেগম একজন ডাচ আইএস সদস্যকে বিয়ে করেন। স্বামীকে নিয়ে আইএসের সাবেক শক্তিশালী ঘাঁটি রাক্কায় বসবাস করতেন তিনি। তাদের ঘরে তিনটি সন্তান জন্ম নেয় যাদের সবাই মারা গেছে।
২০১৯ সালে আইএসের পরাজয়ের পর উত্তর সিরিয়ার আল-রোজ ক্যাম্পে শামীমাকে পাওয়া যায় এবং আজ পর্যন্ত তিনি সেখানেই আছেন।
তার আইনজীবীরা বলছেন, ক্যাম্পের পরিস্থিতি সংকটজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। অনাহার এবং নানা রোগব্যাধি এখন প্রতিদিন এখানে দেখা যাচ্ছে।
তার আইনজীবীরা তার পক্ষে এক লিখিত বিবৃতিতে বলেন, 'বাস্তবতা হচ্ছে অন্যান্য ব্রিটিশ নারী ও শিশুদের মতো শামীমাকেও উত্তরপূর্ব সিরিয়ার একটি বন্দি শিবিরে নির্বিচারে আটকে রাখা হয়েছে। এটি কোনো শরণার্থী শিবির নয়। আটককৃতরা চলে যেতে পারছে না। শামীমার এ নাজুক পরিস্থিতিকে প্রতিটি আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং যুক্তরাজ্যের আদালত নির্যাতন এবং অমানবিক আচরণ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করেছে।'
তবে শামীমা বেগম স্বীকার করেছেন যে তিনি জেনেশুনে আইএসে যোগ দিয়েছিলেন। নিজের কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত ও অনুতপ্ত বলে জানান তিনি।
অনুবাদ: সাকাব নাহিয়ান শ্রাবন