মালয়েশিয়ার জঙ্গলের বিরল বন্য বিড়ালদের জীবনের বিরল ছবি!
মালয়েশিয়ার গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বনে নানা প্রজাতির বিপুল সংখ্যক বন্য বিড়ালের বিচরণ রয়েছে। তবে বনটি মালায়ান টাইগার বা মালয় বাঘের জনসংখ্যার কারণেই বেশি পরিচিত। মালয় বাঘ ছাড়াও এ বনে ক্লাউডেড লেপার্ড বা মেঘলা চিতা (গেছো বাঘ নামেও পরিচিত), বে ক্যাট বা উপসাগরীয় বিড়াল, ফ্ল্যাট হেডেড ক্যাট বা চ্যাপ্টা মাথার বিড়ালসহ ৮ প্রজাতির বন্য বিড়াল দেখা যায়।
তবে বনের বিড়ালজাতীয় অন্য প্রাণিগুলোর চেয়ে বন সংশ্লিষ্টদের নজর মালয় বাঘের দিকেই বেশি। কারণ ২০০৮ সালে বাঘের এই উপপ্রজাতিটি মহাবিপন্ন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এ বনে এখন মালয় বাঘের সংখ্যা ১৫০টিরও কম। তাই তারা এই বাঘ সংরক্ষণের দিকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।
সংরক্ষণ বিষয়ক সংস্থা প্যানথেরা এই বনের ছোট প্রজাতিগুলোর বিভিন্ন মুহূর্তের বহু ছবি সংগ্রহ করেছে। এসব ছবি মানুষের সচেতনতা বাড়াবে এবং ছোট প্রজাতিগুলোর সঙ্গে মানুষের যোগাযোগ তৈরিতে সহায়ক হবে বলে আশা সংস্থাটির।
এ বনে যেসব বন্য বিড়াল রয়েছে, সেগুলো বলতে গেলে এখনও অধরা এবং এগুলো সম্পর্কে তেমন বৈজ্ঞানিক গবেষণা বা পর্যাপ্ত তথ্যও নেই।
আইইউসিএন রেড লিস্ট অনুযায়ী, বোর্নিও বে বিড়াল, মার্বেল বিড়াল এবং চ্যাপ্টা মাথার বিড়াল সম্পকে খুব বেশি তথ্য কিংবা এগুলোর জনসংখ্যার বিষয়ে খুব বেশি তথ্য নেই।
তারপরও আবাসস্থল হারানো ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মালয়েশিয়ার এসব বন্য বিড়ালের প্রায় সব প্রজাতিকেই বিপন্ন, ঝুঁকিপূর্ণ বা ঝুঁকির কাছাকাছি পর্যায়ের বলে শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে।
প্যানথেরা মালয়েশিয়ার প্রকল্প সমন্বয়কারী রোশান গুহরাজন বোর্নিও দ্বীপের মালয়েশিয়ান অঞ্চল নিয়ে কাজ করছেন। এ অঞ্চলে পাঁচ প্রজাতির বন্য বিড়ালের বিচরণ রয়েছে। এ অঞ্চলে তিনি আট বছরেরও বেশি সময় ধরে কাজ করছেন। এই সময়টায় তিনি স্বচক্ষে একবার মাত্র বে বিড়াল ও ফ্ল্যাট-হেডেড বিড়াল দেখেছেন। আর সেটিও খুব অল্প সময়ের জন্য।
গুহরাজন জানান, চ্যাপ্টা মাথার বিড়াল সচরাচর দেখা যায় না। এগুলো সবচেয়ে বেশি অধরা। এরা আকারে প্রায় ঘরে পোষা বিড়ালের সমান। এগুলোর বিচরণ বনের জলাভূমি এলাকায়, যেখানে সাধারণ মানুষের যাওয়াটা বেশ কঠিন।
তিনি জানান, প্রাথমিকভাবে প্রজাতিগুলোকে পদ্ধতিগতভাবে পর্যবেক্ষণের জন্য তাদের বেশ কষ্ট করতে হয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি তার দলের সদস্যরা কর্দমাক্ত জলাভূমি ও হ্রদের কিনারাকে লক্ষ্য করে ক্যামেরা বসিয়েছিলেন। এতে তারা সফলও হন। তাদের ক্যামেরায় বন্য বিড়ালের ছবি ধরা পড়ে।
প্যানথেরা আশা করছে, এই পর্যবেক্ষণের মধ্যে দিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির জনসংখ্যার আকার, বিচরণের ক্ষেত্র ও তারা যেসব হুমকির মুখোমুখি, সেসব বিষয়ে তথ্য পাওয়া যাবে।
বন কর্তৃপক্ষ এর আগে সংরক্ষণের জন্য যেসব প্রচেষ্টা বা উদ্যোগ নিয়েছে, তার বেশিরভাগই মালয় বাঘকে ঘিরে। তবে এটি খারাপ নয় বলে উল্লেখ করেন গুহরাজন। তিনি বলেন, এ বাঘ প্রায়ই শিকারীদের হাতে পড়েছে। এ বাঘের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের উচ্চ বাজারমূল্য রয়েছে। এদের দেহের হাড় ঐতিহ্যগত ওষুধ তৈরিতে ব্যবহার হয়, মাংস খাওয়া হয়, চামড়া দিয়ে পাটি ও দাঁত দিয়ে গয়না বানানো হয়।
গুহরাজন বলেন, এই হুমকি ও বাঘের জনসংখ্যা কমতে থাকার কারণে বন ব্যবস্থাপনায় ও শিকার বন্ধে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ করা হয়েছে। আর এটি বনের সব প্রজাতির জন্যই উপকার বয়ে এনেছে।
গুহরাজন বলেন, এ অঞ্চলে মালয় বাঘের মতো বন্য বিড়ালগুলো অর্থনীতির অগ্রগতিতে এক দিক থেকে ভূমিকা রাখছে। তিনি আশা করেন, অন্য প্রজাতির বিড়ালগুলো সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো গেলে সেটিও অর্থনীতির অগ্রগতিতে সহায়ক হবে।
তিনি বলেন, আমাদের তোলা ছবিগুলো মানুষ ও এসব প্রাণির মধ্যে 'সংযোগের একটি স্তর' গড়ে দেবে।
তিনি মনে করেন, সংরক্ষণের প্রচেষ্টা বা উদ্যোগ কেবল একটি প্রজাতির জন্যই হওয়া উচিত নয়। তিনি বলেন, 'আমাদের নানা বৈচিত্রের প্রতি নজর দিতে হবে।'
অনুবাদ: রেদওয়ানুল হক