গাজায় ৭ ত্রাণকর্মী নিহতের দিনেই ইসরায়েলকে আরও বোমা সরবরাহের অনুমোদন দিল যুক্তরাষ্ট্র
ইসরায়েলকে আরও বিপুল পরিমাণ বোমা সরবরাহের অনুমোদন দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সিদ্ধান্তটি গত সোমবার অর্থাৎ এমন দিনে গৃহীত হয়েছে যেদিন গাজায় তেল আবিবের বিমান হামলায় দাতব্য গ্রুপ ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের সাত কর্মী নিহত হয়েছেন।
ত্রাণকর্মীদের নিহতের ঘটনায় বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় বইছে। এমতাবস্থায় আরও বোমা সরবরাহের বিষয়টি ওয়াশিংটন পোস্টকে তিন মার্কিন কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন।
যদিও ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের ত্রাণকর্মীদের নিহতের ঘটনায় বেশ মানবিক অবস্থান নিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। এই বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, "তারা যুদ্ধের মাঝে ক্ষুধার্ত বেসামরিক লোকদের খাবার সরবরাহ করছিল। তারা সাহসী ও নিঃস্বার্থবান ছিল।"
তবে অস্ত্র সরবরাহের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে হোয়াইট হাউজের কাছে জানতে চাওয়া হলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
এদিকে ইসরায়েলি সরকার নিশ্চিত করেছে যে, সোমবার গাজার মধ্যাঞ্চলীয় দাইর আল বালাহ এলাকায় ত্রাণকর্মীদের উপর হামলাটি তারাই চালিয়েছে। তবে এটিকে 'অনিচ্ছাকৃত' বলে অভিহিত করেছে দেশটি।
হামলায় নিহত কর্মীদের মধ্যে পোল্যান্ডের একজন, যুক্তরাজ্যর তিনজনসহ অস্ট্রেলিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র-কানাডার এক দ্বৈত নাগরিক ছিলেন। বাকি একজন ফিলিস্তিনি।
তেল আবিব জানায়, এই বিষয়ে সামরিক বাহিনী একটি 'স্বচ্ছ' তদন্ত পরিচালনা করবে। সেই ফলাফল জনসম্মুখে প্রকাশ করা হবে।
অস্ত্র চুক্তির বিষয়টি স্পর্শকাতর হওায়ায় কর্মকর্তারা নিজেদের নাম প্রকাশ করেননি। তারা জানান, গাজায় যুদ্ধ শুরুর কয়েক বছর আগেই কংগ্রেস এই বোমাগুলো ইসরায়েলে সরবরাহের অনুমোদন দিয়েছিল। তবে অস্ত্র সরবরাহের যেকোনো সময় পূর্বেই সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেওয়ার ক্ষমতা যুক্তরাষ্ট্র সরকারের রয়েছে।
ইসরায়েলের প্রতি বাইডেন প্রশাসন গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই মিত্র হিসেবে সমর্থন দিয়ে আসছে। এক্ষেত্রে গতকাল (বৃহস্পতিবার) বাইডেন ও ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর মধ্যে ফোনে কথোপকথন হয়।
এই বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেন, "ইসরায়েল যদি বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা এবং আরও মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করার মার্কিন দাবিতে মনোযোগ না দেয় তবে এর পরিণতি ভোগ করতে হবে হবে।"
ব্লিঙ্কেন আরও বলেন, "আমরা যেমন পরিবর্তনগুলি দেখতে চাই তেমনটা না হলে আমাদের নীতিতে পরিবর্তন আসবে।" তবে এক্ষেত্রে অস্ত্র সরবরাহের বিষয়ে কোনও পরিবর্তন আসবে কি-না, সে বিষয়ে তিনি মন্তব্য করেননি।
এদিকে বাইডেন হামলার পরে বিবৃতিতে ত্রাণকর্মীদের প্রতি ইসরায়েলের আচরণের তীব্র সমালোচনা করেছেন। কেননা সাম্প্রতিক অন্য যেকোনো সংঘর্ষের তুলনায় গাজায় তারা বেশি সংখ্যায় নিহত হয়েছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, "বেসামরিক নাগরিকদের প্রয়োজনীয় সাহায্য প্রদানের চেষ্টায় মরিয়া ত্রাণকর্মীদের রক্ষায় ইসরায়েল যথেষ্ট কাজ করেনি। গতকালের মতো ঘটনা কোনোভাবেই ঘটা উচিত নয়। তাদের রক্ষা করতে হবে। এমন পরিস্থিতি তৈরি উচিত নয় যেখানে লোকেরা যারা কেবল মানুষকে সাহায্য করার চেষ্টা করছে তারা নিজেরাই গুরুতর ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।"
এদিকে ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেন (ডব্লিউসিকে) গতকাল (বৃহস্পতিবার) ত্রাণকর্মীদের উপর হামলার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে। এক্ষেত্রে সংস্থাটি নিহত হওয়া কর্মীদের দেশগুলোর প্রতিও স্বাধীন তদন্তের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানান।
ডব্লিউসিকে বলছে, দাইর আল বালার একটি গুদাম থেকে চলে যাওয়ার সময় ত্রাণবাহী গাড়িবহরে হামলায় ওই কর্মীরা নিহত হয়েছে। তারা সমুদ্রপথে গাজায় নেওয়া ১০০ টনের বেশি খাবার ওই গুদামে রেখে আসতে গিয়েছিল।
এদিকে, সোমবারের ওই হামলার পর এক বিবৃতিতে হামাস বলেছে, আন্তর্জাতিক মানবিক ত্রাণ সংস্থাগুলোর কর্মীদের 'আতঙ্কিত করার উদ্দেশ্যেই' এ হামলা চালানো হয়েছে যেন তারা তাদের মিশন অনুসরণ করা থেকে বিরত থাকে।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে আচমকা হামলা চালায় হামাস। এতে প্রায় ১২০০ জন নিহত হয়। জিম্মি করা হয় ২৫০ জনকে।
এরপর থেকে গত ছয় মাস ধরে গাজায় নির্বিচারে বোমা হামলা করছে ইসরায়েল। উপত্যকাটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৩৩ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। যার মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
এদিকে গাজায় চলমান ইসরায়েলি নিষেধাজ্ঞার কারণে উপত্যকাটিতে খাবার, পানি ও ঔষধের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। জাতিসংঘের হিসেব মতে, এমতাবস্থায় অপুষ্টি ও অনাহারে মারা গেছে মারা গেছে বহু লোক।
অনুবাদ: মোঃ রাফিজ খান