বিক্ষোভকারীদের কলাম্বিয়া ক্যাম্পাস থেকে সরিয়ে দিয়েছে পুলিশ, গ্রেপ্তার অনেক
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন ও গণহত্যা বন্ধের দাবিতে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হ্যামিল্টন হল দখল করে শত শত শিক্ষার্থী। তাদের উৎখাত করতে মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) রাতে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে নিউইউর্ক পুলিশের দল। রাতের মধ্যেই নিউইয়র্ক সিটি পুলিশের কর্মকর্তারা কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও নিউইয়র্কের সিটি কলেজে অভিযান চালিয়ে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারীদের ক্যাম্পাস থেকে সরিয়ে দিয়েছে এবং এ সময় বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করেছে। খবর বিবিসি'র।
ঘটনাস্থলে থাকা সংবাদদাতা জানিয়েছেন, আটককৃত বিক্ষোভকারীদের পরিবহনের জন্য ক্যাম্পাসে বাস আনা হয়েছে। কয়েক ডজন বিক্ষোভকারীকে হাত বাঁধা অবস্থায় দুটি পুলিশ বাসের পাশে মেঝেতে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে।
শিক্ষার্থীরা বিবিসিকে জানায়, মঙ্গলবার গভীর রাতে বিক্ষোভ নির্মূল করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ডাকার সিদ্ধান্ত নেয়। পুলিশ একটি ভবনের দ্বিতীয় তলার জানালা দিয়ে মইয়ের মাধ্যমে হ্যামিল্টন হলে প্রবেশ করে। পরে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করে পুলিশ ভ্যানে করে নিয়ে যাওয়া হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষের সময় বেশ কয়েকটি বিকট শব্দও শোনা গেছে।
পুলিশের অভিযানের পর অনেকটা খালি হয়ে গেছে ক্যাম্পাস। বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এখন বিরাজ করছে থমথমে পরিবেশ। ক্যাম্পাসের কেন্দ্রস্থলের চারপাশের ব্যারিকেডগুলো বেশিরভাগ ভেঙে ফেলা হয়েছে এবং তাঁবুগুলো সরানো শুরু হয়েছে। ইউসিএলএর আশেপাশে এখনও কিছু বিক্ষোভকারী থাকলেও দেখে মনে হচ্ছে বিক্ষোভটি মূলত ভেঙে গেছে।
প্রতিটি প্রবেশপথে পুলিশ ও বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষীদের ভিড়। রাস্তায় সারি সারি ইস্পাতের ব্যারিয়ার। ক্লাস এবং পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত আসতে পারে। আর এজন্য অনেকেই তাদের জিনিসপত্র গুছিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
আন্দোলনের শুরু থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর মনোভাব দেখিয়ে আসছে। আগামী ১৭ মে পর্যন্ত ক্যাম্পাসে পুলিশ অবস্থান করবে।
নাম প্রকাশ না করা একজন বিক্ষোভকারী বলেন, 'পুলিশ যখন আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় তখন আমি হ্যামিল্টন হলে ছিলাম। আমাদের ওপর আক্রমণ করা হয়েছিল এবং মারধর করা হয়েছিল। আমার হাতে এত শক্তভাবে হাতকড়া পরানো হয়েছিল যে এজন্য আমার কড়ে আঙ্গুলে প্রচুর ব্যথা পেয়েছি।'
ইউসিএলএর নিজস্ব সংবাদপত্র ডেইলি ব্রুইন রিপোর্ট করেছে যে পুলিশ ফিলিস্তিনপন্থী শিবিরটি ভেঙে দেওয়ার সময় শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি কমপক্ষে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপককে আটক করেছে।
ওই শিবিরে থাকা আরেক অধ্যাপকের বরাত দিয়ে পত্রিকাটি জানায়, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে শিক্ষার্থীরা দৃশ্যত আহত হয়েছে, তারা স্টান গ্রেনেড ছুড়েছে এবং কয়েকজনকে হিংস্রভাবে ঘটনাস্থল থেকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গেছে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক গ্রায়েম ব্লেয়ার টেক্সট মেসেজের মাধ্যমে ডেইলি ব্রুইনকে বলেন, 'শিক্ষকরা দাঁড়িয়ে এ ভয়াবহতার সাক্ষী হচ্ছেন'।
এর আগে কলাম্বিয়ার শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের অনেকে কমলা ও হলুদ রংয়ের ভেস্ট পড়ে বিক্ষোভকারীদের প্রতি সংহতি জানিয়ে অবস্থান নিয়েছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট মিনুচে শফিক বলেন, অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে তিনি শিক্ষার্থী ও অন্যদের বিরুদ্ধে পুলিশি অভিযানের নির্দেশ দিয়েছেন। অপারেশন পরবর্তী এক বার্তায় তিনি বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয় স্বাভাবিক হতে আরও সময় লাগবে'।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন শিগগিরই যুক্তরাষ্ট্রে চলমান কলেজ ক্যাম্পাস বিক্ষোভ নিয়ে কথা বলবেন। বিক্ষোভের বিষয়ে তিনি সর্বশেষ মন্তব্য করার পর এক সপ্তাহেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। তার আগের বিবৃতিতে তিনি 'ইহুদিবিদ্বেষী বিক্ষোভ' বলে নিন্দা করেছিলেন এবং ইঙ্গিত দেন যে কিছু বিক্ষোভকারী ফিলিস্তিনিদের পরিস্থিতি পুরোপুরি উপলব্ধি করতে পারে না।
পাঁচ মাসেরও বেশি সময় ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর গণহত্যার শিকার ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে প্রতিবাদ এবং সমাবেশ করে আসছে। এর শুরুটা হয় কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। বিক্ষোভের এ উত্তেজনা যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় সহ ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়ার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও ছড়িয়ে পড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের আরও কয়েকটি ক্যাম্পাসে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভকারী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে এবং কয়েক ডজন শিক্ষার্থী ও শিক্ষককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
অনুবাদ: সাকাব নাহিয়ান শ্রাবন