ইসরায়েলের সঙ্গে সবরকম বাণিজ্য বন্ধ করল তুরস্ক
গাজায় মানবিক বিপর্যয়ের অবনতির কারণ দেখিয়ে ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য স্থগিত করেছে তুরস্ক। খবর বিবিসি'র।
তুরস্কের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েল গাজায় নিরবচ্ছিন্ন ও পর্যাপ্ত ত্রাণ সরবরাহের অনুমতি নিশ্চিত না করা পর্যন্ত এ ব্যবস্থা বহাল থাকবে।
গত বছর দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল প্রায় ৭০০ কোটি ডলার।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান স্বৈরশাসকের মতো আচরণ করছেন বলে অভিযোগ করেছেন ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ। তিনি এক্স নিউজকে বলেন, 'এরদোগান তুর্কি জনগণ ও ব্যবসায়ীদের স্বার্থ উপেক্ষা করছেন এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চুক্তিকে উপেক্ষা করছেন।'
কাটজ আরও বলেন, স্থানীয় উৎপাদন এবং অন্যান্য দেশ থেকে আমদানির দিকে মনোনিবেশ করে তুরস্কের সাথে বাণিজ্যের বিকল্প খুঁজে বের করার জন্য তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন।
এক বিবৃতিতে তুরস্ক বলেছে, বাণিজ্য স্থগিতের এ আদেশে সকল পণ্য রয়েছে।
১৯৪৯ সালে তুরস্ক প্রথম মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হিসেবে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু গত কয়েক দশকে সম্পর্কের অবনতি হয়েছে।
২০১০ সালে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের সামুদ্রিক অবরোধ ভাঙার চেষ্টাকারী তুর্কি মালিকানাধীন একটি জাহাজে উঠে ইসরায়েলি কমান্ডোদের সাথে সংঘর্ষে ১০ ফিলিস্তিনপন্থী তুর্কি কর্মী নিহত হওয়ার পরে তুরস্ক ইসরায়েলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে।
২০১৬ সালে সম্পর্ক পুনঃস্থাপিত হলেও গাজা-ইসরায়েল সীমান্তে বিক্ষোভের মধ্যে ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিরোধের জেরে দুই দেশ একে অপরের শীর্ষ কূটনীতিকদের বহিষ্কার করে।
গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের প্রাণঘাতী হামলার পর থেকে এরদোগান ইসরায়েলের সমালোচনায় ক্রমেই কঠোর হয়ে উঠেছেন।
গত জানুয়ারিতে তিনি বলেছিলেন, ৭ অক্টোবরের জবাবে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যে সামরিক অভিযান চালিয়েছেন তা হিটলার যা করেছিলেন তার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়'।
জবাবে নেতানিয়াহু বলেন, 'কুর্দিদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানো এরদোগান, যার তার শাসনের বিরোধিতাকারী সাংবাদিকদের কারাগারে পাঠানোর বিশ্বরেকর্ড যার, তার মুখে নৈতিকতার বাণী মানায় না। তিনি সর্বশেষ ব্যক্তি যিনি আমাদের কাছে নৈতিকতা প্রচার করতে পারেন'।
গাজা উপত্যকার পরিস্থিতি নিয়ে ইসরায়েল ক্রমবর্ধমান সমালোচনার মুখে পড়েছে। জাতিসংঘ সমর্থিত এক মূল্যায়নে বলা হয়, ১১ লাখ মানুষ ভয়াবহ ক্ষুধার মুখোমুখি হচ্ছে এবং মে মাসের মধ্যে গাজার উত্তরাঞ্চলে দুর্ভিক্ষ আসন্ন।
বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, ওই অঞ্চলে ত্রাণ পাঠানোর সুবিধার্থে মার্কিন সামরিক বাহিনী নির্মিত একটি জেটি কয়েক দিনের মধ্যে খুলে দেওয়া হবে।
জাতিসংঘ বলছে, সমুদ্রপথ কখনই স্থলপথে সরবরাহের বিকল্প হতে পারে না এবং প্রয়োজনীয় বেশিরভাগ সরবরাহ আনার একমাত্র উপায় স্থলপথ।
পশ্চিমা মিত্রদের চাপে এবং আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলোর বারবার আবেদনের মুখে চলতি সপ্তাহের শুরুতে ইসরায়েল ত্রাণ বহরের জন্য উত্তর গাজা উপত্যকায় ইরেজ ক্রসিং পুনরায় খুলে দেয়। তবে জর্ডান জানিয়েছে, ক্রসিংয়ে পৌঁছানোর আগেই তাদের কয়েকটি ত্রাণবাহী লরির ওপর হামলা চালায় ইসরায়েলিরা।
গাজার মানবিক বিপর্যয় যে মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষে রূপ নিচ্ছে তার শক্ত পরিসংখ্যানগত প্রমাণ দিয়েছে জাতিসংঘ-সমর্থিত সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদন। জাতিসংঘের সবচেয়ে ঊর্ধ্বতন মানবাধিকার কর্মকর্তা ভলকার টার্ক বিবিসিকে বলেন, 'গাজায় ক্ষুধাকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে'।
ইসরায়েল ত্রাণ সরবরাহ সীমাবদ্ধ করার বিষয়টি অস্বীকার করেছে এবং গাজার অভ্যন্তরে ত্রাণ বিতরণ করতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য জাতিসংঘকে দোষারোপ করেছে।
অনুবাদ: সাকাব নাহিয়ান শ্রাবন