হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত ইরানের প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী: রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম
পার্বত্য অঞ্চলে, বৈরী আবহাওয়ায় হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আব্দোল্লাহিয়ান নিহত হয়েছেন বলে ইরানের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে। ইরানের রাষ্ট্রীয় টিভিসহ একাধিক সংবাদমাধ্যমও এ খবর দিয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে বিবিসি।
ইরানের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে রয়টার্সকে বলেন, 'প্রেসিডেন্ট রাইসি, পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ হেলিকপ্টারের সব আরোহী দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন।'
ইরানের সংবাদ সংস্থা মেহরও মৃত্যুসংবাদ নিশ্চিত করে জানিয়েছে, 'ইরানের প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বহনকারী হেলিকপ্টারের সব যাত্রী শহিদ হয়েছেন'।
এর আগে ইরানের রাষ্ট্রীয় টিভি জানিয়েছিল, প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির হেলিকপ্টারে প্রাণের 'কোনো চিহ্ন নেই'; ঘটনাস্থলে কাউকে জীবিত পাওয়া যায়নি।
রয়টার্সও ইরানের একজন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানিয়েছিল, রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টার 'সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে'।
ওই কর্মকর্তা বলেছিলেন, 'বিধ্বস্ত হওয়ার পর প্রেসিডেন্ট রাইসির হেলিকপ্টার সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে…দুর্ভাগ্যজনকভাবে সব আরোহী মারা গেছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।'
এদিকে রেড ক্রিসেন্টও জানিয়েছিল যে হেলিকপ্টারের আরোহীদের বেঁচে থাকার কোনো চিহ্ন দেখা যায়নি। রেড ক্রিসেন্ট বলেছে, দুর্ঘটনাস্থলে তারা 'হেলিকপ্টারের আরোহীদের বেঁচে থাকার কোনো চিহ্ন' দেখতে পায়নি।
দুর্ঘটনাস্থল থেকে রেড ক্রিসেন্টের নেওয়া ড্রোন ফুটেজ প্রচারিত হয়েছে ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম ফার্স নিউজ এজেন্সিতে। ফুটেজে দেখা গেছে, হেলিকপ্টারটি খাড়া, অরণ্যবেষ্টিত পাহাড়ের উৎরাইয়ে বিধ্বস্ত হয়েছে। নীল-সাদা লেজ ছাড়া হেলিকপ্টারটির আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।
(রোববার) ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের জোলফা এলাকার কাছে রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এর বেশ দীর্ঘ সময় পর অবশেষে উদ্ধারকারীরা রাইসির হেলিকপ্টার খুঁজে পেয়েছেন।
ইরানিয়ান রেড ক্রিসেন্ট হেলিকপ্টারটি খুঁজে পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে জানিয়েছে, তাদের অনুসন্ধান ও উদ্ধারকারী দল দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে।
পার্বত্য অঞ্চলে তীব্র বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে হওয়া এ দুর্ঘটনা থেকে রাইসিসহ অন্যদের বেঁচে ফেরার আশা এখন নেই বললেই চলে।
ইরানিয়ান রেড ক্রিসেন্টের প্রধান পিরহোসেইন কোলিভান্দ রাষ্ট্রীয় টিভিকে বলেন, 'আমরা ধ্বংসাবশেষ দেখতে পেয়েছি, পরিস্থিতি ভালো মনে হচ্ছে না।'
উদ্ধারকারী দলের কাছ থেকে বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ পাচ্ছে বলে জানিয়েছে আল জাজিরা। উদ্ধারকারী দল জানিয়েছে, হেলিকপ্টারের পুরো কেবিন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ও পুড়ে গেছে।
এখন পর্যন্ত দুর্ঘটনাস্থলে বেঁচে যাওয়া কোনো যাত্রীর চিহ্ন দেখতে পায়নি বলে আল জাজিরাকে জানিয়েছে উদ্ধারকারী দল।
এদিকে হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার স্থানে তাপের উৎস শনাক্ত করেছে তুরস্কের একটি ড্রোন। তুরস্ক বলছে, এটি হেলিকপ্টারের ধ্বংসাবশেষ থেকে আসতে পারে।
রোববার আজারবাইজান সীমান্তবর্তী এলাকায় একটি জলাধার প্রকল্প উদ্বোধনের পর হেলিকপ্টারটিতে করে ফিরছিলেন রাইসি। পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের জোলফা এলাকার কাছে দুর্ঘটনাটি ঘটে। এ যাত্রায় প্রেসিডেন্টের বহরে থাকা অন্য দুটি হেলিকপ্টার অক্ষত রয়েছে।
যেখানে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে, সেটি পার্বত্য অঞ্চল এবং বন-জঙ্গলে ঘেরা। সেখানে ভারী বৃষ্টিপাত ও ঘন কুয়াশার কারণে ৫ মিটারের বেশি দূরত্বে কিছু দেখা যাচ্ছিল না। বৃষ্টি ও কুয়াশার কারণে উদ্ধাকাজ ব্যাহত হয়েছে।
হেলিকপ্টারে ইরানের প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের গভর্নর মালেক রহমতি এবং এই প্রদেশে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার মুখপাত্র আয়াতোল্লাহ মোহাম্মদ আলী আলে-হাশেম ছিলেন।
ইরানের সংবাদমাধ্যম তাসনিম নিউজের খবরে বলা হয়েছে, হেলিকপ্টারটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ার খবরটি সেটি থেকে আসা একটি জরুরি ফোনকলে জানা গেছে। হেলিকপ্টারে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে থাকা কর্মকর্তারাই ওই ফোনকল করেছিলেন। তবে কথা শেষ হওয়ার আগেই সংযোগটি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।