ইরানের পরবর্তী সর্বোচ্চ নেতা হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে ছিলেন ইব্রাহিম রাইসি
সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা ইরানের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি। ১৯৭৯ সালে ইসলামী বিপ্লবের পর থেকে দুইজন সেই চূড়ান্ত ক্ষমতার অধিকারী হয়েছেন।
১৯৮৯ সালে আয়াতোল্লাহ খোমেনির মৃত্যুর পর আয়াতোল্লাহ আলি খামেনি শীর্ষ নেতা নির্বাচিত হন এবং তখন থেকে দেশের শাসনক্ষমতার ওপর কড়া নিয়ন্ত্রণ রেখে চলেছেন তিনি। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির পরেই সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রেসিডেন্টের, যিনি ইরানের সরকার প্রধান হিসেবে বিবেচিত হন।
তবে ৮৫ বছরের আয়াতোল্লাহ আলি খামেনির শারীরিক অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ায় তার স্থলাভিষিক্ত কে হবেন তা নিয়ে চলছিল জল্পনা কল্পনা।
ইরানের সর্বোচ্চ ক্ষমতার এ পদ গোপন ভোটে নির্বাচিত করে ৮৮ সদস্য বিশিষ্ট ইরানের অ্যাসেম্বলি অব এক্সপার্টস বা বিশেষজ্ঞ পরিষদ। এতে থাকেন ইসলাম বিশেষজ্ঞ এবং ধর্মীয় নেতা। নতুন শীর্ষ নেতা প্রয়োজন হলে বা কখনও যদি এই পরিষদ যদি মনে করে শীর্ষ নেতা তার দায়িত্ব ঠিকমত পালন করতে পারছেন না, তাহলে তারা তাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিতে পারেন।
ইরানের সংবিধানের ১১১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, সর্বোচ্চ নেতা মারা গেলে বা বরখাস্ত হলে উত্তরসূরি নিয়োগের জন্য বিশেষজ্ঞ পরিষদকে দ্রুত বৈঠকে বসতে হবে। নতুন সুপ্রিম লিডার নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত একটি 'প্রভিশনাল লিডারশিপ কাউন্সিল' সুপ্রিম লিডারের দায়িত্ব পালন করবে। এই কাউন্সিলে বর্তমান রাষ্ট্রপতি, প্রধান বিচারপতি এবং এক্সপিডিয়েন্সি ডিসসার্নমেন্ট কাউন্সিল দ্বারা নির্বাচিত গার্ডিয়ান কাউন্সিলের একজন আলেম অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন।
আলি খামেনির পর ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের অন্যতম শক্তিশালী ব্যক্তিত্ব হওয়ার খুব কাছাকাছি ছিলেন রোববার হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় প্রেসিডেন্ট নিহত ইব্রাহিম রাইসি।
অনেকেই ধারণা করেছিলেন ইরানের পরবর্তী শীর্ষ নেতা হিসেবে হয়ত রাইসিই নির্বাচিত হবেন। তবে তার অপ্রত্যাশিত মৃত্যুতে খামেনির উত্তরসূরি কে হবেন তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, নতুন করে শুরু হয়েছে আবার আলোচনা।
শীর্ষ নেতা হওয়ার জন্য রাইসি সকল ধর্মীয় ও আদর্শিক মানদণ্ড পূরণ করতেন। তিনি ছিলেন বর্তমান সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনির একজন ছাত্র এবং অনুগত অনুসারী। খামেনির মতো তিনিও মাশহাদ থেকে এসেছেন।
ইরানের প্রথম সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনির মৃত্যুর পর ১৯৮৯ সালে পর্যন্ত তেহরানের প্রসিকিউটর-জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেন রাইসি। ২০০৪ সাল থেকে ১০ বছর তিনি জুডিশিয়াল অথরিটির উপপ্রধান ছিলেন। ২০১৯ সালে তাকে বিচার বিভাগের প্রধান নিযুক্ত করেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি।
পরে রাইসি ৮৮ সদস্যের বিশেষজ্ঞ পরিষদের উপচেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। খোমেনির উত্তরসূরি আয়াতুল্লাহ খামেনির অধীনে তরতর করে উচ্চপদে ওঠে আসেন রাইসি।
ইরানের কট্টরপন্থী প্রেসিডেন্টের মর্মান্তিক মৃত্যু ইরানের নীতিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন বা দেশটিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে না বলে মনে করা হচ্ছে। তারপরও সরকার নিয়ন্ত্রণকারী রক্ষণশীল কট্টরপন্থীদের জন্য এটি একটি চ্যালেঞ্জ হবে, যারা নির্বাচিত এবং অনির্বাচিত উভয়ই সরকারের সমস্ত অংশ নিয়ন্ত্রণ করে।
তার বিরোধীরা, যারা তাকে ১৯৮০ এর দশকে রাজনৈতিক বন্দীদের গণহারে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার সাথে জড়িত থাকার জন্য অভিযুক্ত করেছে (যে অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেছেন), আশা করতেই পারেন যে এটি হয়ত সরকারে পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করবে।
ইরানের ক্ষমতাসীন রক্ষণশীলদের জন্য রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া একটি আবেগময় ও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হবে। এর মাধ্যমে তারা দেখাতে চাইবেন যে এখনও নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে রয়েছে। উপরন্তু, তাদের অ্যাসেম্বলি অব এক্সপার্টস বা বিশেষজ্ঞদের পরিষদে রাইসির আসনটিও পূরণ করতে হবে, যা সময় এলে পরবর্তী শীর্ষ নেতা বেছে নেবে।
রোববারের দুর্ঘটনার পর ইরানের গণমাধ্যমে বর্তমান সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনির বক্তব্য প্রচার করা হয়। ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করার পাশাপাশি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেছেন, এতে ইরানের শাসন ব্যবস্থায় কোন ব্যাঘাত ঘটবে না।
ইরানের ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোখবার দ্রুত রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা গ্রহণ করবেন এবং ৫০ দিনের মধ্যে নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
ইরানের সংবিধান অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট মারা গেলে পরবর্তী ৫০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন প্রেসিডেন্ট বেছে নিতে হয়।
অনুবাদ: সাকাব নাহিয়ান শ্রাবন