নেতানিয়াহু ও সিনওয়ারের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন আইসিসি’র প্রধান কৌঁসুলির
যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রধান কৌঁসুলি করিম খান। খবর আল-জাজিরার
এছাড়াও করিম খান ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট এবং হামাসের অপর দুই শীর্ষ নেতা আল কাসেম ব্রিগেডের নেতা মোহাম্মদ দিয়াব ইব্রাহিম আল-মাসরি এবং হামাসের রাজনৈতিক নেতা ইসমাইল হানিয়ার বিরুদ্ধেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চেয়েছেন।
তিনি বলেছেন, নেতানিয়াহু ও গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির জন্য হেগভিত্তিক আদালতের প্রি-ট্রায়াল চেম্বার-১ এ আবেদন করবেন তারা।
কারণ কমপক্ষে ৮ অক্টোবর, ২০২৩ থেকে গাজায় সংঘটিত নিম্নলিখিত যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য তাদের অপরাধমূলক দায়বদ্ধতা রয়েছে বলে বিশ্বাস করার যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে: যুদ্ধের কৌশল হিসেবে বেসামরিক নাগরিকদের অনাহারে রাখা, বেসামরিক নাগরিকদের ইচ্ছাকৃতভাবে গুরুতর শারিরীক আঘাত করা, ইচ্ছাকৃত হত্যা প্রভৃতি।
তিনি আরও বলেছেন, অন্তত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েল ও গাজায় সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য ইয়াহিয়া সিনওয়ার, মোহাম্মদ দিয়াব ইব্রাহিম আল-মাসরি এবং ইসমাইল হানিয়ার দায়বদ্ধতা রয়েছে। তাদের করা যেসব কাজ মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে গণ্য, সেগুলো হলো: বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা, জিম্মি করা, ধর্ষণ এবং অন্যান্য যৌন সহিংসতা প্রভৃতি।
ভুক্তভোগীকে ঘাতকের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে: হামাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা
আইসিসির কৌঁসুলির এই আবেদনের ব্যাপারে হামাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সামি আবু জুহরি বলেন, এর মাধ্যমে ভুক্তভোগীকে ঘাতকের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।
তিনি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, হামাসের তিন নেতার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির জন্য আইসিসির কৌঁসুলির আবেদনে ভুক্তভোগীকে ঘাতকের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।
সামি আবু জুহরি আরও বলেন, আইসিসির এই সিদ্ধান্ত ইসরাইলকে গাজায় 'নির্মূল অভিযান' চালিয়ে যেতে উৎসাহিত করবে।
আইসিসির কৌঁসুলির এই পদক্ষেপ ঐতিহাসিক অপরাধ: বেনি গ্যান্টজ
ইসরায়েলের যুদ্ধ মন্ত্রিসভার সদস্য বেনি গান্টজ তার দেশের প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের কৌঁসুলির করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদনকে 'ঐতিহাসিক পর্যায়ের অপরাধ' বলে নিন্দা জানিয়েছেন।
গ্যান্টজ বলেন, 'ঘৃণ্য সন্ত্রাস থেকে নিজেকে রক্ষা করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ একটি গণতান্ত্রিক দেশের নেতাদের সঙ্গে রক্তপিপাসু সন্ত্রাসী সংগঠনের (হামাস) নেতাদের তুলনা টানা ন্যায়বিচারের গভীর বিকৃতি এবং নির্লজ্জ নৈতিক দেউলিয়াত্ব।'
সঠিক পথে দারুণ একটি পদক্ষেপ
আইসিসির প্রধান কৌঁসুলির এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন মানবাধিকার আইনজীবী জিওফ্রে নাইস।
তিনি আল জাজিরাকে বলেন, 'আমি খুশি কারণ, যেখানে আইনটির প্রয়োগের আবেদন করা উচিত, সেখানেই প্রয়োগ করা হয়েছে।'
তিনি বলেন, 'এতদিন রাজনীতি আইনের প্রয়োগকে আটকে রেখেছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছিল এবং বিষয়টি খুব অসন্তোষজনক ছিল। এখন আইনই তার ভূমিকা পালন করবে, এটি একটি দারুণ সিদ্ধান্ত।'
নাইস এটিকে 'সঠিক পথে দারুণ পদক্ষেপ' বলে অভিহিত করেছেন।
তবে তিনি সতর্ক করে বলেছেন যে এখনও কিন্তু গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়নি।
নাইস বলেন, 'আগে থেকেই নিশ্চিত হয়ে যাওয়া ঠিক না। কারণ এটি দুই পক্ষের লোকদের বিরুদ্ধে মিস্টার খানের গ্রেপ্তারি পরোয়ানার জন্য একটি আবেদন এবং এটি এখনও বিচারকদের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে।'
ভাবানুবাদ: তাবাসসুম সুইটি