বিপুল ভোটে মেক্সিকোর প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন ক্লডিয়া শিনবম
মেক্সিকোর প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হিসেবে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন ক্লডিয়া শিনবম।
মেক্সিকো সিটির সাবেক মেয়র এবং জলবায়ু বিজ্ঞানী শিনবম তার পরামর্শদাতা এবং বিদায়ী প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাদোরের কাছ থেকে দায়িত্ব নিবেন। দেশটির দরিদ্র শ্রেণির মানুষের মধ্যে লোপেজ ওব্রাদোরের জনপ্রিয়তা ক্লডিয়া শিনবমের জয়ে অবদান রেখেছে বলে ধারণা করা হয়।
মেক্সিকোর নির্বাচনী কর্তৃপক্ষের দ্রুত নমুনা গণনা অনুসারে, তিনি ৫৮.৩ শতাংশ থেকে ৬০.৭ শতাংশ ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট পদে জয়ী হয়েছেন যা শতাংশের হিসেবে মেক্সিকোর গণতান্ত্রিক ইতিহাসের সর্বোচ্চ ভোট সংখ্যা।
মেক্সিকোর ক্ষমতাসীন মোরেনা পার্টির প্রার্থী শিনবম তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী, সিনেটর ও ব্যবসায়ী শোচিত গালভেজকে বড় ব্যবধানে হারিয়েছেন। প্রাথমিক ফলাফলে দেখা গেছে, শোচিত গালভেজ ২৬.৬ শতাংশ থেকে ২৮.৬ শতাংশ ভোট পেয়েছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো বা কানাডায় সাধারণ নির্বাচনে জয়ী প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হলেন শিনবম। তার বিজয় মেক্সিকোর জন্য একটি বড় পদক্ষেপ কারণ দেশটি পুরুষতান্ত্রিক সংস্কৃতির জন্য পরিচিত। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম রোমান ক্যাথলিক জনসংখ্যার দেশটিতে বছরের পর বছর নারীদের ওপর ঐতিহ্যগত মূল্যবোধ এবং ভূমিকা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।
প্রাথমিক ফলাফলের পর তিনি সমর্থকদের আশ্বস্ত করে জানিয়েছেন, তার সরকার আর্থিক অগ্রগতিকে অগ্রাধিকার দেবে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসনকে সম্মান করবে। তিনি নিরাপত্তা সমস্যা মোকাবেলা করার প্রতিশ্রুতি দিলেও সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি।
মেক্সিকোর আধুনিক ইতিহাসের সবচেয়ে সহিংস এ নির্বাচনের আগে ৩৮ জন প্রার্থীকে হত্যা করা হয়েছে যা নির্বাচন চলাকালীন নিরাপত্তা নিয়ে একটি বড় সংকট তৈরি করেছিল। এমনকি ভোট চলাকালীন পুয়েব্লা রাজ্যের ভোটকেন্দ্রে দুইজন নিহত হয়েছেন।
বিশ্লেষকরা বলেছেন, লোপেজ ওব্রাদোরের মেয়াদে গড়ে ওঠা অপরাধ গোষ্ঠীগুলির সংখ্যা আগের থেকে বেড়েছে। লোপেজ ওব্রাদোর ক্ষমতায় থাকার সময় ১ লাখ ৮৫ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে যা আধুনিক মেক্সিকোর ইতিহাসে কোন প্রেসিডেন্টের ক্ষমতাকালে সর্বোচ্চ মানুষ নিহত হওয়ার রেকর্ড। তাই দেশের সার্বিক নিরাপত্তাকে ঠিক করা শিনবমের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
অভিবাসী জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ এবং মাদক পাচারের বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আলোচনার ক্ষেত্রেও নতুন প্রেসিডেন্টকে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হবে। ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হলে আলোচনা আরো কঠিন হয়ে উঠতে পারে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের। ট্রাম্প মেক্সিকোতে তৈরি চীনা গাড়ির ওপর শতভাগ শুল্ক আরোপের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং বিশেষ বাহিনীর সাথে সমন্বয় করে মেক্সিকোর কার্টেলের বিরুদ্ধে লড়াই করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
অভ্যন্তরীণভাবে বিদ্যুৎ ও পানির ঘাটতি মোকাবেলা এবং নির্মাতাদের আকৃষ্ট করাই শিনবমের প্রধান অগ্রাধিকার হতে পারে। তাকে অবশ্যই রাষ্ট্রীয় বৃহৎ পেট্রোলিয়াম কোম্পানি পেমেক্সের উৎপাদন ও ঋণের হ্রাস মোকাবেলা করতে হবে।
অনুবাদ: তাসবিবুল গনি নিলয়