রাশিয়ার ফ্রিজ করা সম্পদ থেকে ইউক্রেনকে ৫০ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেবে জি-৭
ফ্রিজ করা রুশ সম্পদ থেকে ইউক্রেনকে ৫০ বিলিয়ন (৫ হাজার কোটি) ডলার ঋণ দিতে সম্মত হয়েছে শিল্পোন্নত সাত দেশের জোট জি-৭। রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে সহায়তার জন্য এ ঋণ দেওয়া হবে।
বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) ইতালিতে শুরু হওয়া বা জি-৭-এর শীর্ষ সম্মেলনের প্রথম দিনে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, তারা যে 'পিছু হটছেন না', রাশিয়াকে সে কথাই মনে করিয়ে দেবে জি-৭-এর এ সিদ্ধান্ত।
চলতি বছরের শেষ নাগাদ রুশ সম্পদ থেকে এই ঋণ দেওয়া হবে ইউক্রেনকে। এ ঋণকে ইউক্রেনের যুদ্ধ ও অর্থনীতিকে সহায়তা দেওয়ার দীর্ঘমেয়াদি প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এছাড়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি দুই দেশের মধ্যে ১০ বছর মেয়াদি একটি নিরাপত্তা চুক্তিও স্বাক্ষর করেছেন। জি-৭-এর শীর্ষ সম্মেলন চলাকালে এক পার্শ্ববৈঠকে এই চুক্তি হয়।
এই দ্বিপক্ষীয় চুক্তি রুশ হামলা মোকাবিলায় ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়াবে বলে আশা করা হচ্ছে। চুক্তিটিকে কিয়েভ 'ঐতিহাসিক' বলে আখ্যা দিয়েছে।
এ চুক্তির আওতায় ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা ও প্রশিক্ষণ দেবে যুক্তরাষ্ট্র। তবে চুক্তিতে মিত্রদেশটির হয়ে লড়াই করার জন্য সৈন্য পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দেয়নি ওয়াশিংটন।
২০২২ সালে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইইউ ও জি-৭-ভুক্ত দেশগুলো এখন পর্যন্ত প্রায় ৩২৫ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের রুশ সম্পদ ফ্রিজ করেছে।
এসব সম্পদ থেকে বছরে ৩ বিলিয়ন ডলার সুদ আসছে।
জি-৭ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বার্ষিক সুদ হিসেবে আসা ওই ৩ বিলিয়ন ডলার দিয়েই ইউক্রেনীয়দের জন্য দেওয়া ৫০ বিলিয়ন ডলার ঋণের বার্ষিক সুদ পরিশোধ করা হবে।
জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, এই ৫০ বিলিয়ন ডলারের ঋণ ইউক্রেনকে সহায়তা করবে এবং 'পুতিনকে মনে করিয়ে দেবে যে আমরা পিছু হটছি না'।
সমর্থনের জন্য মার্কিন ও অন্য মিত্রদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন জেলেনস্কি।
নতুন নিরাপত্তা চুক্তির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'এটি সত্যিই ঐতিহাসিক দিন এবং আমরা স্বাধীনতার [১৯৯১] পর ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী চুক্তি সই করেছি।'
রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়তে ইউক্রেনকে গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক ও সামরিক সহায়তা দিয়ে আসছে জি-৭-ভুক্ত ধনী দেশ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি ও জাপান।
অন্যান্য জি-৭ নেতারাও ৫ বিলিয়ন ডলার ঋণচুক্তির প্রশংসা করেছেন।
এর আগে মে মাসে ইউক্রেনকে ৬১ বিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা দিতে সম্মত হয় যুক্তরাষ্ট্র।
কিয়েভের অনেকে চাইছিলেন জি-৭ যেন ফ্রিজ করা ৩০০ বিলিয়ন ডলার রুশ সম্পদের পুরোটাই ইউক্রেনকে দেয়, শুধু এ থেকে প্রাপ্ত সুদ নয়। ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংক সেই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ৬১ বিলিয়ন ডলারে সহায়তা প্যাকেজের আওতায় ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে সরাসরি মিসাইল পাঠানো হচ্ছে। তবে জি-৭-এর ঋণের টাকা চলতি বছর শেষ হওয়ার আগে পাবে না ইউক্রেন। অর্থাৎ যুদ্ধের চলমান গতিপথের ওপর এ ঋণদানের সিদ্ধান্তের তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না।
ইউক্রেন বলছে, তাদের এখন আরও বেশি করে অস্ত্র প্রয়োজন। বিশেষ করে ইউক্রেনের শহর ও বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে রাশিয়ার মিসাইল ও ড্রোন হামলা ঠেকানোর জন্য আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রয়োজন বেশি। সেইসঙ্গে বহুল প্রতীক্ষিত এফ-১৬ যুদ্ধবিমান দরকার বেশি। চলতি গ্রীষ্মেই এফ-১৬ পেতে পারে ইউক্রেন।
জ-৭ সম্মেলনে জেলেনস্কি বলেছেন, নতুন নিরাপত্তা চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের ওইসব যুদ্ধবিমান সরবরাহ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
জি-৭-এ স্বাক্ষর করা ঋণচুক্তিকে প্রতীকীভাবে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ মনে করছে ইউক্রেন ও তার পশ্চিমা মিত্ররা।
তবে এ ঋণের ফলে ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার ইউ-টার্ন নেওয়ার সম্ভাবনা খুব কম।
রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফ্রিজ করা সিংহভাগ সম্পত্তিই বেলজিয়ামে আটক আছে।
আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় কোনো দেশই রাশিয়ার কাছ থেকে ওইসব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে ইউক্রেনকে দিতে পারবে না।
জি-৭-এর ঋণের সিদ্ধান্ত ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা আগে এ সিদ্ধান্তকে 'অত্যন্ত বেদনাদায়ক' হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি মারিয়া জাখারোভা।