ইউক্রেনে রাশিয়াকে ‘পূর্ণ সমর্থনের' ঘোষণা কিমের, কৌশলগত অংশীদারত্বের চুক্তি সই
আজ বুধবার দুইদিনের সফরে উত্তর কোরিয়ায় এসেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ইউক্রেন যুদ্ধে দ. কোরিয়া যখন পশ্চিমা বিশ্বকে সমর্থন দিচ্ছে, তারমধ্যে চিরবৈরী উ. কোরিয়া মস্কোর সাহায্যে এগিয়ে আসে। পুতিনের সাম্প্রতিক সফর এ যুদ্ধে কোরীয় উপদ্বীপের গুরুত্বকে নতুন আলোকে তুলে ধরছে।
উ. কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উনের আমন্ত্রণে এ সফর করছেন পুতিন। দেশটির রাজধানী পিয়ংইয়ংয়ে বুধবার তাদের মধ্যে একটি বৈঠক হয়েছে। এসময় ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার প্রতি তাঁর 'পূর্ণ সমর্থন ও সহমর্মিতা' রয়েছে বলে পুতিনকে জানিয়েছেন কিম। অন্যদিকে, রুশ প্রেসিডেন্ট বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের কয়েক দশকব্যাপী 'আধিপত্যবাদ ও সাম্রাজ্যবাদী নীতি'র বিরুদ্ধে লড়ছে মস্কো।
যুদ্ধ প্রচেষ্টায় রাশিয়াকে 'অবিচল' সমর্থন দেওয়ায় কিমের প্রশংসাও করেন তিনি।
২৪ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো উ. কোরিয়া এলেন পুতিন। ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকেই মস্কোর সঙ্গে পিয়ংইয়ংয়ের ঘনিষ্ঠতা বাড়ছে। রাশিয়াকে নানান ধরনের গোলাবারুদ দেওয়ার বিনিময়ে উ. কোরিয়া পরমাণু অস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্র সংক্রান্ত উচ্চ প্রযুক্তি পাচ্ছে বলে আশঙ্কা করছে পশ্চিমারা।
রাশিয়া বা উ. কোরিয়া কেউই সরাসরি তাদের মধ্যেকার অস্ত্র বাণিজ্য নিয়ে স্বীকারোক্তি দেয়নি, তবে সামরিক সম্পর্ক আরো দৃঢ় করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার ইয়নপায়েওং থেকে আল জাজিরার প্রতিবেদক রব ম্যাকব্রাইড জানিয়েছেন, 'দুই নেতা নানান ধরনের সমস্যার মধ্যে থাকা সত্ত্বেও বিশ্বের প্রতি একটি ঐক্যের বার্তা দিতে চাইছেন।"
তাঁর ব্যাখ্যা হলো– "এই সফর হচ্ছে শক্তি-সামর্থ্য আর ঐক্যের প্রদর্শনী। দুই দেশের সম্পর্কে নতুন যুগের সূচনা সম্পর্কে তারা যা বিশ্বাস করেন এবং অন্যদেরকে যে বার্তা দিতে চান তার ঘোষণা। এই সফরের মধ্যে দিয়ে উভয়ের মধ্যে নতুন একটি (কৌশলগত সহযোগিতার) চুক্তিও হয়েছে। পুতিন বলেছেন, আগামীদিনে এ চুক্তি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বুনিয়াদ হবে।"
নতুন এই কৌশলগত অংশীদারত্বের চুক্তির বিষয়বস্তু সম্পর্কে বুধবার বিস্তারিত কিছু জানায়নি ক্রেমলিন। তবে এর আগে সোমবার জানিয়েছিল যে, রাশিয়া ও উ. কোরিয়ার মধ্যে ১৯৬১, ২০০০ ও ২০০১ সালে সই হওয়া আগের দ্বিপাক্ষিক চুক্তি ও ঘোষণাগুলোর পরিবর্তে নতুন চুক্তিটি কার্যকর হবে।
রাশিয়ার বার্তাসংস্থাগুলো জানায়, কিমের সাথে বৈঠকের পরে পুতিন বলেছেন, নতুন চুক্তিটি মূলত আত্মরক্ষামূলক। দুই দেশের কেউ যদি আক্রান্ত হয়– তাহলে পারস্পরিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি রয়েছে এতে।
চুক্তিটিকে 'যুগান্তকারী' বর্ণনা করে পুতিন বলেন, এটি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।
লাল গালিচা সংবর্ধনা
বুধবার ভোরের আগেই উ. কোরিয়ার রাজধানী পিয়ংইয়ংয়ের বিমানবন্দরে অবতরণ করে পুতিনকে বহনকারী বিমান। শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাথে নিয়ে সেখানে তাঁকে স্বাগত জানাতে অপেক্ষা করছিলেন কিম জং উন।
কিম-পুতিনের হ্যান্ডশেকের আনুষ্ঠানিকতার পরে ঐতিহ্যবাহী কোরীয় পোশাক হানবক পরা একজন নারী পুতিনকে লাল গোলাপের তোড়া দিয়ে অভ্যর্থনা জানান।
বিমানবন্দর থেকে একটি মোটরশোভাযাত্রা করে পিয়ংইয়ংয়ের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে কুমসুসান রাষ্ট্রীয় অতিথিশালায় যান পুতিন। এসময় পুতিনের বিশেষ লিমুজিনে তাঁর যাত্রাসঙ্গী হন কিম। সড়কের দুই পাশে রাশিয়ার জাতীয় পতাকা ও রুশ নেতার ছবি দিয়ে সাজসজ্জা করা হয়েছিল।
কিম ইল সুং চত্বরে পুতিনের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে লাল গালিচা সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সারিবদ্ধ উ. কোরীয় সেনারা তাঁকে সম্মান প্রদর্শনে গার্ড অব অনার দেয়। বেলুন, ও দুই দেশের পতাকা হাতে উপস্থিত ছিল একদল শিশু।
উ. কোরিয়ায় পুতিনের সফরসঙ্গী হয়েছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী আন্দ্রেই বেলুসভ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ এবং উপ-প্রধানমন্ত্রী ডেনিস মানট্রুটভসহ রাশিয়ার শীর্ষ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা।
অনুবাদ: নূর মাজিদ