ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ হবে ‘বড় ভুল’: দক্ষিণ কোরিয়াকে পুতিনের হুঁশিয়ারি
রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইউক্রেনকে দক্ষিণ কোরিয়া অস্ত্র সরবরাহ করলে তা হবে 'বড় ভুল'; এমনটাই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ভ্লাদিমির পুতিন। গতকাল (বৃহস্পতিবার) ভিয়েতনাম সফরকালে রুশ প্রেসিডেন্ট এমন মন্তব্য করেন। খবর বিবিসির।
মূলত সম্প্রতি উত্তর কোরিয়া সফরে পুতিন কিম জং-উনের সাথে একটি কৌশলগত অংশীদারিত্ব চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন। আর এর প্রতিক্রিয়ায় দক্ষিণ কোরিয়ার পক্ষ থেকে ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহের সম্ভাবনা সামনে এসেছে।
এক্ষেত্রে সিউলের পক্ষ থেকে ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহের সম্ভাবনা প্রসঙ্গে পুতিন বলেন, "মস্কো (তখন) এমন সিদ্ধান্ত নেবে যাতে করে দক্ষিণ কোরিয়ার বর্তমান নেতৃত্বের খুশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না।"
একইসাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত রাখলে মস্কো পিয়ংইয়ংকে অস্ত্র দিতে ইচ্ছুক বলে জানান রুশ প্রেসিডেন্ট।
পুতিন বলেন, "যারা ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ করে তারা বিশ্বাস করে যে তারা আমাদের সাথে যুদ্ধ করছে না। তাহলে একইভাবে আমরা পিয়ংইয়ংসহ বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে অস্ত্র সরবরাহের অধিকার রাখি।"
সিউল এর আগে রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যকার চুক্তিকে তাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে আখ্যায়িত করে নিন্দা করেছিল। ঠিক তখনই দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা চ্যাং হো-জিন বলেছিলেন, "দক্ষিণ কোরিয়া ইউক্রেনে অস্ত্র সহায়তার বিষয়টি পুনর্বিবেচনার পরিকল্পনা করছে।"
এমনকি পুতিনের হুঁশিয়ারির পর দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কার্যালয় আজ (শুক্রবার) বলেছে যে, তারা ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহের জন্য 'বিভিন্ন বিকল্প' বিবেচনা করবে। তবে এক্ষেত্রে রাশিয়া কীভাবে এই ইস্যুতে অগ্রসর হয় তার উপর সেটি নির্ভর করবে।
একইসাথে উত্তর কোরিয়ার সাথে চুক্তির ফলে প্রতিবাদস্বরূপ রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত জর্জি জিনোভিয়েভকে তলব করেছিল দক্ষিণ কোরিয়া। দেশটি মস্কোর প্রতি অবিলম্বে পিয়ংইয়ংয়ের সাথে সামরিক সহযোগিতা বন্ধের আহ্বান জানায়।
এতদিন দক্ষিণ কোরিয়া ইউক্রেনকে মানবিক সহায়তা ও সামরিক সরঞ্জাম দিয়েছে। তবে এটি এখনও পর্যন্ত কিয়েভকে প্রাণঘাতী অস্ত্র সরবরাহ করেনি।
তবে সম্প্রতি ইউক্রেনের অনেকেই আশঙ্কা করছেন যে, মস্কো ও পিয়ংইয়ংয়ের মধ্যে গভীরতর সামরিক সহযোগিতা সিউলকে এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করবে। বিশ্লেষকরা আগেও বলেছিলেন যে, পুতিনের পিয়ংইয়ং সফরকে ব্যবহার করে নিজেদের সুবিধা আদায় করতে চাইবে ইউক্রেন।
পুতিন বুধবার (১৯ জুন) সন্ধ্যায় পিয়ংইয়ং থেকে হ্যানয় পৌঁছেছেন। তার ভিয়েতনাম সফরের লক্ষ্য, বাণিজ্য ও পারমাণবিক শক্তি সহযোগিতাসহ হ্যানয়ের সাথে সম্পর্ক জোরদার করা।
সফরকালের সাংবাদিকদের পুতিন জানান, "মস্কো পারমাণবিক অস্ত্র নীতিতে পরিবর্তন আনার কথা বিবেচনা করছে। কারণ পশ্চিমারা আরও সহজ ব্যবহারের জন্য ছোট ও হালকা পারমাণবিক বোমা তৈরি করছে।"
গত সপ্তাহে ইউক্রেনের দেওয়া শান্তি প্রস্তাবনার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে পুতিন বলেন, "রাশিয়া সবসময় আলোচনার জন্য উন্মুক্ত ছিল। কিন্তু ইউক্রেন এবং তার পশ্চিমা সমর্থকরা মিনস্ক চুক্তি ও ইস্তাম্বুলের আলোচনাকে নষ্ট করে দিয়েছে।"
তিনি ইউক্রেনকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, "রাশিয়ার শর্ত চিরকাল একই থাকবে না। ভূমির পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে আমাদের শর্ত পরিবর্তিত হবে।"