গৃহকর্মীদের শোষণের দায়ে যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে ধনী হিন্দুজা পরিবারের সদস্যদের কারাদণ্ড
যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে ধনী হিন্দুজা পরিবারের চার সদস্যকে জেনেভায় অবস্থিত নিজেদের ভিলায় ভারত থেকে আনা গৃহকর্মীদের শোষণ করার দায়ে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
প্রকাশ ও কমল হিন্দুজা এবং তাদের ছেলে অজয় ও পুত্রবধূ নম্রতাকে শোষণ এবং অবৈধভাবে চাকরিতে নেওয়ার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করেছেন এক সুইস আদালত। তাদেরকে চার থেকে সাড়ে চার বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
রায়ে প্রকাশ ও কমল হিন্দুজাকে সাড়ে চার বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আর অজয় ও নম্রতাকে চার বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
প্রায় ৪৮ বিলিয়ন ডলার সম্পদের মালিক হিন্দুজা পরিবারকে অবশ্য এরচেয়ে গুরুতর মানবপাচারের অভিযোগ থেকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
তাদের পক্ষের আইনজীবীরা বলেছেন, তারা এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন।
হিন্দুজাদের আইনজীবী রবার্ট আসায়েল বলেন, 'আমি স্তম্ভিত। আমরা শেষ পর্যন্ত লড়ব।'
হিন্দুজা পরিবারের বিরুদ্ধে জেনেভায় করা মামলার অভিযোগে বলা হয়, পরিবারটি তাদের আদিনিবাস ভারত থেকে সুইজারল্যান্ডে কর্মচারী নিয়ে আসত। ভারত থেকে নিয়ে আসা গৃহকর্মীদের দিনে ১৮ ঘণ্টা কাজ করার জন্য মাত্র ৮ ডলার বেতন দিত হিন্দুজারা—যা সুইস আইনে যতটুকু দেওয়ার কথা, তার দশ ভাগের এক ভাগ। সেইসঙ্গে কর্মীদের পাসপোর্টও কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ ছিল তাদের বিরুদ্ধে।
কর্মীরা আরও অভিযোগ করেছিলেন, তাদেরকে বাড়ি থেকে বলতে গেলে বেরই হতে দেওয়া হয় না।
বিচারের সময় কর্মীদের কৌঁসুলিরা অভিযোগ করেন, গৃহকর্মীর চেয়ে পোষা কুকুরের জন্য বেশি অর্থ ব্যয় করে হিন্দুজা পরিবার। পরিবারটি কুকুরের জন্য বছরে প্রায় ১০ হাজার ডলার খরচ করে বলে দাবি তাদের।
অন্যদিকে হিন্দুজা পরিবারের আইনজীবীরা দাবি করেন, কর্মীদের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা দেয় হিন্দুজা পরিবার। তাদের বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়নি এবং ইচ্ছামতো যেকোনো সময় ভিলা ছেড়ে বের হতে পারতেন বলেও দাবি করেন তারা।
আসায়েল দাবি করেন, 'উন্নত জীবন দেওয়ার জন্য' কর্মীরা 'হিন্দুজাদের প্রতি কৃতজ্ঞ'।
হিন্দুজাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা তিন কর্মচারীর সঙ্গে গোপনে একটি সমঝোতায় পৌঁছেছিল হিন্দুজা পরিবার। কিন্তু অভিযোগের ভয়াবহতার কথা বিবেচনা করে মামলাটি চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন কৌঁসুলিরা।
রায় ঘোষণার সময় আদালতে হিন্দুজা পরিবারের কোনো সদস্য উপস্থিত ছিলেন না। সত্তরোর্ধ্ব প্রকাশ ও কমল অসুস্থতার আবেদন জানিয়ে আদালতে হাজির হননি। অজয় ও নম্রতা আদালতে এলেও রায় শোনার সময় হাজির ছিলেন না।
হিন্দুজা পরিবার বহুজাতিক কোম্পানি হিন্দুজা গ্রুপের মালিক। গ্রুপটির তেল, গ্যাস, ব্যাংকিং ও স্বাস্থ্য খাতে ব্যবসা রয়েছে। বিশ্বের ৩৮টি দেশে এসব খাতে হিন্দুজা পরিবারের ব্যবসা আছে। বিশ্বজুড়ে তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় দুই লাখ।
লন্ডনের র্যাফলস হোটেলের মালিকও হিন্দুজা পরিবার।
উল্লেখ্য, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও সুইজারল্যান্ডের ধনী ব্যক্তিদের কেন্দ্র জেনেভায় কর্মীদের সঙ্গে অন্যায় আচরণের অভিযোগ আগেও এসেছে।
২০০৯ লিবিয়ার সাবেক শাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফির ছেলে হানিবাল গাদ্দাফিকে জেনেভার এক হোটেল থেকে গৃহকর্মীদের পেটানোর অভিযোগে সস্ত্রীক গ্রেপ্তার করা হয়। পরে অভিযোগটি তুলে নেওয়া হলেও এ নিয়ে সুইজারল্যান্ড ও লিবিয়ার মধ্যে ব্যাপক কূটনৈতিক বিরোধ দেখা দেয়।
গত বছরই ফিলিপাইনের চারজন গৃহকর্মী জাতিসংঘে জেনেভার এক কূটনৈতিক মিশনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তাদের অভিযোগ ছিল, ওই মিশন কয়েক বছর ধরে তাদের বেতন দিচ্ছিল না।