হিজবুল্লাহ, ইরান ও ইসরায়েল এরপর কী করবে?
সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর দীর্ঘদিনের নেতা হাসান নাসরুল্লাহকে হত্যার ঘটনায় লেবাননের সঙ্গে ইসরায়েলের চলমান যুদ্ধে উত্তেজনা আরও বেড়ে গেছে। এই অঞ্চলটি সম্ভবত আরও একটি বড় সংঘাতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, এর কারণে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রও এ সংঘাতে জড়িয়ে যাবে।
তাই ইসরায়েল পরিচালিত এ হত্যাকাণ্ড পরিস্থিতিকে কোন দিকে নিয়ে যাবে? তা এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাড়িয়েছে।
এটি মূলত নিম্নের এ তিনটি মৌলিক প্রশ্নের উপর নির্ভর করছে।
হিজবুল্লাহ কী করবে?
হিজবুল্লাহ এখন একের পর এক আঘাতে দিশেহারা অবস্থায় আছে।
এর কমান্ড কাঠামো কার্যত ধ্বংস হয়ে গেছে। এ গোষ্ঠীর শীর্ষস্থানীয় এক ডজনেরও বেশি কমান্ডারকে হত্যা করা হয়েছে। পেজার এবং ওয়াকি-টকির বিস্ফোরণের কারণে এর যোগাযোগ ব্যবস্থাও নষ্ট হয়ে গেছে এবং অনেক অস্ত্র বিমান হামলায় ধ্বংস করা হয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা বিশ্লেষক মোহাম্মদ আল-বাশা বলেন, "হাসান নাসরুল্লার মৃত্যু গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। এরই মধ্যে এ পরিস্থিতি গোষ্ঠীটিকে অস্থিতিশীল করবে এবং গোষ্ঠীটি এর রাজনৈতিক ও সামরিক কৌশলে স্বল্পমেয়াদি পরিবর্তনও আনতে পারে।"
তবে এই ইসরায়েলবিরোধী সংগঠনটি হাল ছেড়ে দিয়ে ইসরায়েলের শর্তে শান্তি চাইবে না। হিজবুল্লাহ ইতোমধ্যে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছে। এর এখনো হাজার হাজার যোদ্ধা রয়েছে যারা সিরিয়ায় সাম্প্রতিক যুদ্ধে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এবং তারাই প্রতিশোধের দাবি করছে।
এদের কাছে এখনও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ক্ষেপণাস্ত্রের মজুদ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে অনেকগুলোই দূরপাল্লার, নির্ভুলভাবে লক্ষ্যভেদকারী অস্ত্র যা সহজেই তেল আবিব এবং অন্যান্য শহরে আঘাত হানতে পারে। সংগঠনের ভেতরে এগুলো ব্যবহার করার জন্য চাপ রয়েছে, কারণ এগুলোও ধ্বংস হওয়ার আগে ব্যবহার করতে চায়।
কিন্তু তারা যদি এ অস্ত্র গুলো ব্যবহার করে গণহামলা চালায় এবং ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে ফেলে বেসামরিক লোকদের হত্যা করা শুরু করে তাহলে এর পরিণতি অনেক ভয়াবহ হবে। এতে লেবাননের অবকাঠামোর ওপর ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে, এমনকি ইরান পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে।
ইরান কী করবে?
এই হত্যাকাণ্ড ইরানের জন্য হিজবুল্লাহর মতোই একটি বড় ধাক্কা। ইরান ইতোমধ্যেই পাঁচ দিনের শোক ঘোষণা করেছে।
এছাড়াও, জরুরি সতর্কতা হিসেবে ইরানের নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে রাখা হয়েছে, যাতে তাকেও হত্যা না করা হয়।
তেহরানের একটি অতিথিশালায় জুলাই মাসে হামাসের রাজনৈতিক নেতা ইসমাইল হানিয়াহকে হত্যার ঘটনায় ইরান এখনও প্রতিশোধ নেয়নি। এখন যা ঘটেছে সে বিষয়ে প্রতিশোধের জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে ইরানের কট্টরপন্থী শাসক গোষ্ঠীকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যে ইরান সমর্থিত বেশ কয়েকটি ভারী অস্ত্র বহণকারী সশস্ত্র গোষ্ঠীর নেটওয়ার্ক রয়েছে। এ নেটওয়ার্ক 'অ্যাক্সিস অব রেজিসন্ট্যান্স' নামে পরিচিত।
হিজবুল্লাহ ছাড়াও ইয়েমেনের হুথি এবং সিরিয়া ও ইরাকে বিভিন্ন গোষ্ঠীকে সমর্থন দেয় ইরান। ইরান এই গোষ্ঠীগুলোকে ইসরায়েল এবং অঞ্চলের মার্কিন ঘাঁটিগুলোর ওপর আক্রমণ বাড়ানোর আহ্বান জানাতে পারে।
তবে ইরান যে প্রক্রিয়াই পছন্দ করুক নো কেন, সেটি একটি যুদ্ধ শুরু করার জন্য যথেষ্ট নয়। কারণ তারা কখনোই যুদ্ধে জয়ী হবে সে আশা করে না।
ইসরায়েল কী করবে?
এই হত্যাকাণ্ডের আগে যদি কারো কোনো সন্দেহ হয়ে থাকে তাহলে তা আর থাকবে না।
ইসরায়েল স্পষ্টভাবে তার সামরিক অভিযান বন্ধ করার কোনো ইচ্ছা দেখাচ্ছে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র এমন ১২টি দেশের ২১ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবেও তাদের মধ্যে থামার কোনো লক্ষণ নেই।
ইসরায়েলের সেনাবাহিনী মনে করছে তারা হিজবুল্লাহকে কোণঠাসা করে ফেলেছে। তাই ক্ষেপণাস্ত্রের হুমকি সম্পূর্ণভাবে দূর না হওয়া পর্যন্ত তারা তাদের আক্রমণ অব্যাহত রাখবে।
আপাতদৃষ্টিতে হিজবুল্লাহ আত্মসমর্পণ করবে না। তাছাড়া স্থলভাগে সেনা না পাঠিয়ে হিজবুল্লাহর হুমকি দূর করাও ইসরালের পক্ষে সম্ভব না।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিই) উদ্দেশ্যমূলকভাবে এরই মধ্যে সীমান্তের কাছাকাছি তাদের বাহিনীর প্রশিক্ষণের ভিডিও প্রকাশ করেছে।
কিন্তু হিজবুল্লাহ গত ১৮ বছর ধরে পরবর্তী যুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। নাসরুল্লার মৃত্যুর আগে শেষ বক্তৃতায় বলেছিলেন, "দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েলের আক্রমণ হবে তার ভাষ্যমতে 'একটি ঐতিহাসিক সুযোগ'।"
আইডিই'র জন্য লেবাননে প্রবেশ করা তুলনামূলকভাবে সহজ হতে পারে। কিন্তু সেখান থেকে বেরিয়ে আসা গাজা সংকটের মতোই মাসের পর মাস নিয়ে নিতে পারে।