তিন লাখ ডলারের উপহার গ্রহণের অভিযোগে সিঙ্গাপুরের সাবেক মন্ত্রীর কারাদণ্ড
সিঙ্গাপুরের সাবেক পরিবহণ মন্ত্রী সুব্রামনিয়াম ঈশ্বরানকে ক্ষমতায় থাকাকালীন ন্যায়বিচারের বাধা দেওয়া ও তিন লাখ ডলারের বেশি মূল্যের উপহার নেওয়ার অভিযোগে এক বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন দেশটির আদালত।
৬২ বছর বয়সী ঈশ্বরান পাবলিক অফিসে থাকার সময় ৪ লাখ ৩ হাজার সিঙ্গাপুর ডলার (প্রায় ৩ লাখ ১১ হাজার ৮৮২ ডলার) মূল্যের উপহার গ্রহণের অভিযোগ স্বীকার করেছেন। পাশাপাশি তিনি বিচার প্রক্রিয়ায় বাধা প্রদান করেন।
উপহারগুলোর মধ্যে ছিল ফরমুলা ১ গ্রাঁ প্রি-এর টিকেট, একটি ব্রম্পটন টি-লাইন বাইক, মদ এবং একটি প্রাইভেট জেটে ভ্রমণের সুযোগ।
সিঙ্গাপুরের হাইকোর্টের বিচারক ভিনসেন্ট হুং এই মামলাটি তত্ত্বাবধান করে বলেছেন, সাবেক পরিবহণ মন্ত্রীর অপরাধগুলো ক্ষমতার অপব্যবহার করার পাশাপাশি জনগণের বিশ্বাসকে ক্ষুণ্ন করেছে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, ঈশ্বরান মনে করছিলেন যে তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হবেন।
বিচারক হুং বলেন, "প্রধানমন্ত্রীকে লেখা তার চিঠিতে তিনি অভিযোগগুলো প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং তিনি দৃঢ় বিশ্বাস প্রকাশ করেন যে তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হবেন।"
সুব্রামনিয়াম ঈশ্বরানকে ৭ অক্টোবর কারাগারে রিপোর্ট করতে হবে।
সাবেক এই মন্ত্রীকে চাঙ্গি কারাগারে সাজা ভোগ করতে হবে। এই কারাগারে সাধারণত সিঙ্গাপুরের মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দীদের রাখা হয়। কারাগারের সেলগুলিতে ফ্যান নেই এবং বেশিরভাগ কয়েদি বিছানার পরিবর্তে খড়ের মাদুরে ঘুমান।
ঈশ্বরান সিঙ্গাপুরের প্রথম রাজনৈতিক ব্যক্তি যিনি প্রায় ৫০ বছর পর দেশটির সর্বোচ্চ আদালত থেকে শাস্তি পেলেন। এই মামলার আগে সিঙ্গাপুরে সর্বশেষ বড় দুর্নীতির তদন্ত হয়েছিল ১৯৮৬ সালে জাতীয় উন্নয়ন মন্ত্রী তেহ চিয়াং ওয়ান-এর বিরুদ্ধে । তবে তিনি অভিযোগ ওঠার আগেই আত্মহত্যা করেন। ১৯৭৫ সালে সাবেক পরিবেশমন্ত্রী উই টুন বুন ৮০ হাজার ডলারের বেশি অর্থ সংশ্লিষ্ট একটি মামলায় ১৮ মাসের কারাদণ্ড পান।
সিঙ্গাপুরের আইন প্রণেতারা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেতনভোগীদের মধ্যে রয়েছেন। কয়েকজন মন্ত্রী বছরে ১ মিলিয়ন সিঙ্গাপুর ডলারের বেশি অর্থ উপার্জন করেন। এই উচ্চ বেতন দুর্নীতিকে প্রতিরোধ করে বলে নেতারা তাদের উচ্চ বেতনের পক্ষে সাফাই গাইতেন। সিঙ্গাপুর দুর্নীতিমুক্ত পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি নিয়ে গর্ব করলেও ঈশ্বরানের মামলাটি সেই ভাবমূর্তি এবং শাসক দল পিপলস অ্যাকশন পার্টির (পিএপি) সুনামকে আঘাত করেছে।
ঈশ্বরানের বিরুদ্ধে মোট ৩৫টি অভিযোগ আনা হয়েছিল, যার বেশির ভাগই দুর্নীতিসংক্রান্ত অভিযোগ। তবে সুপ্রিম কোর্টে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর কৌঁসুলিরা ৩৫টি অভিযোগের মধ্যে শুধু পাঁচটি অভিযোগ নিয়ে এগোতে থাকেন। এর মধ্যে চারটি ছিল উপহার সংক্রান্ত অভিযোগ এবং একটি ছিল বিচারকাজে বাঁধা দেওয়ার অভিযোগ। এই পাঁচটি অভিযোগই স্বীকার করেছেন তিনি।
সিঙ্গাপুর সরকারের কাছে বাজার মূল্য পরিশোধ না করে দেশটির মন্ত্রীরা উপহার রাখতে পারেন না এবং তারা যে কোনো উপহার পেলে সেটি ঘোষণা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে, বিশেষ করি যদি সেটি ব্যবসায়িক সম্পর্কের কারণে পেয়ে থাকেন।
সিঙ্গাপুর ম্যানেজমেন্ট ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ইউজিন তান বলেন, "তার (ঈশ্বরান) বছরের পর বছর দিয়ে আসা সেবার তুলনায় এটি তেমন বড় কোনো অর্থ নয়। তবে তার বেতনের কথা বিবেচনা করলে, তিনি এই উপহারগুলো না নিলেও পারতেন। আদালতের কাছ থেকে জনগণ এমন আচরণের প্রতি কোনো প্রকার সহানুভূতি না দেখানোর প্রত্যাশা রেখেছিল।"
ঈশ্বরানের বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগ উঠেছিল গত বছর জুলাই মাসে। তার বিরুদ্ধে প্রায় সব অভিযোগই বিলিয়নিয়ার ও বিজনেস টাইকুন ওং বেং সেং-এর সঙ্গে তার সম্পর্কের কারণে এসেছে। ওং বেং সিঙ্গাপুরে ফরমুলা ১ গ্রাঁ প্রি নিয়ে আসার ক্ষেত্রে সহায়কের ভূমিকা পালন করেছেন। বর্তমানে তার বিরুদ্ধেও তদন্ত চলছে।