জন্মদিনের শুভেচ্ছায় পুতিনকে ‘ঘনিষ্ঠ সহযোদ্ধা’ বলে সম্বোধন করলেন কিম জং উন
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে জন্মদিনের বার্তা পাঠিয়েছেন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন। এতে পুতিনকে 'ঘনিষ্ঠ সহযোদ্ধা' বলে সম্বোধন করেছেন কিম। খবর বিবিসির
পুতিনের ৭২তম জন্মদিনে অভিনন্দন জানিয়ে কিম বলেন, দুই দেশের সম্পর্ক নতুন মাত্রায় উন্নীত হবে।
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে পিয়ংইয়ং ও মস্কোর মধ্যে সম্পর্ক আরও গভীর হয়েছে- যা পশ্চিমাদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।
মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) পৃথকভাবে কিম বলেন, পিয়ংইয়ং তার দেশকে পরমাণু অস্ত্রের অধিকারী সামরিক সুপার পাওয়ার হিসেবে গড়ে তোলার পদক্ষেপ ত্বরান্বিত করবে।
উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম কেসিএনএ'র বরাত দিয়ে ইয়োনহাপ নিউজ জানিয়েছে, গত জুনে পুতিনের পিয়ংইয়ং সফরের পর থেকে দুই দেশের সম্পর্কের প্রশংসা করে কিম বলেন, এ সম্পর্ক 'অপরাজেয় ও চিরন্তন' হয়ে উঠেছে।
উত্তর কোরিয়ার আনুষ্ঠানিক নাম ডেমোক্রেটিক পিপলস রিপাবলিক অব কোরিয়া (ডিপিআরকে) উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'আমাদের মধ্যে বৈঠক ও সহযোদ্ধাদের সম্পর্ক... ডিপিআরকে-রাশিয়া বন্ধুত্বের চিরন্তন ভিত্তিকে আরও সুসংহত করতে ইতিবাচক অবদান রাখবে।'
উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়ার মধ্যে সম্পর্ক কয়েক দশকের পুরনো, এর সূত্রপাত স্ট্যালিন ও বর্তমান কিমের দাদা কিম ইল-সাংয়ের সময়।
উত্তর কোরিয়ার যাত্রা শুরুর দিনগুলোতে অস্ত্র ও প্রযুক্তি দিয়ে সমর্থন করেছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন। পিয়ংইয়ং কখনোই চীনের ওপর পুরোপুরি নির্ভর করতে চায়নি, কারণ তারা চীনের প্রতি সম্পূর্ণ আস্থা রাখে না।
এ বছরের শুরুর দিকে পুতিন ও কিম একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। চুক্তিটি হবে এমন যে তাদের মধ্যে যে কোনো একটি দেশের ওপর কেউ 'আগ্রাসন' চালালে, উভয় দেশ একে অপরকে সহায়তা করবে; যদিও আগ্রাসন বলতে কী বোঝাবে তা পরিষ্কার করিনি তারা।
অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তার বিনিময়ে অস্ত্র সরবরাহ করে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে রাশিয়াকে সহায়তা করার অভিযোগ রয়েছে কিমের বিরুদ্ধে। রাশিয়া ইউক্রেনে উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করছে বলেও প্রমাণ পাওয়ার দাবি করেছে বিরোধীরা।
পুতিনের জন্য সম্পর্কটি সম্ভবত ট্যাকটিক্যালের চেয়ে বেশি স্ট্রাটেজিক্যাল। ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য তার সমর্থন প্রয়োজন এবং অবশ্যই অর্থের বিনিময়ে উত্তর কোরিয়ার কাছ থেকে যত খুশি অস্ত্র কিনতে পারবে রাশিয়া।
এর আগে জেমস মার্টিন সেন্টার ফর ননপ্রলিফারেশন স্টাডিজের পরিচালক জেফরি লুইস বলেছিলেন, কিম ও পুতিন উভয়ই আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার ক্ষতি কমানোর চেষ্টা করছেন, যাতে তারা যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে একটি বিকল্প বন্ধু ও সহযোগীদের নেটওয়ার্ক তৈরি করতে পারেন।
রাশিয়ার সামরিক প্রযুক্তিতে প্রবেশাধিকার থেকে উত্তর কোরিয়া অবশ্যই অনেক বেশি লাভবান হতে পারবে। কারণ সমস্যা থাকলেও, উত্তর কোরিয়ার দেশীয় এবং রিভার্স-ইঞ্জিনিয়ারড সিস্টেমের তুলনায় রাশিয়ার সামরিক প্রযুক্তি অনেক বেশি উন্নত।
উত্তর কোরিয়া মূলত তাদের পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র ভাণ্ডার উন্নত করার চেষ্টা করছে। দেশটি গত দশকে নতুন ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা তৈরি এবং পারমাণবিক ডিভাইসগুলোর আকার অনেক ছোট করে তোলার ক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। তবে রাশিয়ার আরও উন্নত থার্মোনিউক্লিয়ার ওয়ারহেড ডিজাইন, রি-এন্ট্রি ভেহিকল ডিজাইন এবং সলিড রকেট মোটর ডিজাইন প্রযুক্তি রয়েছে।
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে কিমের রাশিয়া সফরের সময় পুতিন উত্তর কোরিয়াকে তার উপগ্রহ উন্নয়নে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এর আগে পিয়ংইয়ং বেশ কয়েকবার উপগ্রহ উৎক্ষেপণের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার একজন আইনপ্রণেতা মঙ্গলবার দাবি করেছেন, সিউলের সামরিক বাহিনী উত্তর কোরিয়ার সম্ভাব্য পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন তৈরির স্পষ্ট লক্ষণ শনাক্ত করেছে।
কোরিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার বরাত দিয়ে রিপাবলিকান প্রতিনিধি ক্যাং দায়ে-সিক বলেন, নির্মাণকাজ এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে এবং 'এটি পারমাণবিক শক্তিচালিত কি না সে বিষয়ে আরও নিশ্চিত হওয়া দরকার'।
ভাবানুবাদ: তাবাসসুম সুইটি