ইসরায়েলকে সহায়তা করলে তেলসমৃদ্ধ মার্কিন মিত্র দেশে হামলা করতে পারে ইরান
গোপনে যুক্তরাষ্ট্রের তেলসমৃদ্ধ মিত্রদেরকে হুমকি দিয়েছে ইরান এবং জানিয়েছে, যদি তাদের (মিত্র) ভূখণ্ড বা আকাশসীমা ইসরায়েলি আক্রমণের জন্য ব্যবহার করা হয়, তাহলে ইরান সেগুলোতে হামলা চালাবে।
ইসরাইলের কর্মকর্তারা ইরানের পারমাণবিক অথবা তেল অবকাঠামোর ওপর আঘাত হানার জন্য চাপ দিচ্ছেন কারণ এই মাসের শুরুতে ইরান ইসরায়েলে ১৮০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়েছে।
দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইরান জবাবে সতর্ক করে বলেছে, তারা ইসরায়েলের নাগরিক অবকাঠামো এবং ইসরায়েলি হামলাকে সহায়তাকারী যেকোনো আরব দেশকে আঘাত করবে।
ইরান মার্কিন সৈন্যরা অবস্থান করছে এরকম দেশকে হুমকি দিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে জর্ডান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব এবং কাতার। এই দেশগুলো বাইডেন প্রশাসনকে জানিয়েছে, তারা ইরানের বিরুদ্ধে আক্রমণের জন্য তাদের সামরিক সুবিধা বা আকাশসীমা ব্যবহারের অনুমতি দিতে চায় না।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র এখনও বিশ্বাস করে, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেয়নি; যদিও তেহরান সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েলের হাতে হিজবুল্লাহ নেতাদের হত্যার ঘটনায় দেশটিতে দুটি ব্যর্থ হামলা চালিয়েছে।
ইরানের হুমকি নির্দিষ্ট না হলেও আরব কর্মকর্তারা উদ্বিগ্ন কারণ, যদি এই সংঘাত বাড়ে তাহলে তাদের তেল স্থাপনায় ইরানের মিত্ররা আক্রমণ চালাতে পারে । তারা আরও বলছেন , তেলসমৃদ্ধ পারস্য উপসাগরে অবস্থিত মার্কিন সামরিক ঘাঁটি এবং সামরিক বাহিনীও হামলার
ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
কথিত আছে, গালফ রাষ্ট্রগুলো ওয়াশিংটনকে চাপ দিচ্ছে যাতে ইসরায়েল ইরানের তেল স্থাপনায় আক্রমণ না করে।
মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন, কিছু আঞ্চলিক অংশীদার ইসরায়েলি বিমানগুলোকে তাদের ভূখণ্ডে উড়তে দিতে চায় না।
আরব দেশগুলো বলেছে, মার্কিন বাহিনী নিজেদের আত্মরক্ষার জন্য কাজ করতে পারে। তবে তারা চান না, মার্কিন সৈন্যরা তাদের ভূখণ্ড বা আকাশসীমা থেকে আক্রমণ চালাক।
এই অনুরোধগুলো এখন "অবশ্যই" বিবেচিত হচ্ছে। গত বছর ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে আরব দেশগুলো মার্কিন সামরিক কার্যক্রমের ওপর 'বারবার শর্ত আরোপ ও প্রত্যাহার করেছে'।
তবে, সংঘাতটি ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সংঘর্ষে পরিণত হওয়ার পর আরব রাষ্ট্রগুলো "বেশি আত্মবিশ্বাসী" হয়ে উঠেছে।
ইরান হামাস এবং হিজবুল্লাহসহ অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন করে। গত সপ্তাহে হামাস এবং হিজবুল্লাহর শীর্ষ নেতাদের হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে প্রায় ১৮০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের দিকে নিক্ষেপ করে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বুধবার বলেন, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জবাবে ইসরায়েল "ভয়াবহ" এবং "অপ্রত্যাশিত" প্রতিক্রিয়া দেখাবে; তবে তিনি বিস্তারিত কিছু বলেননি।
এদিকে, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এ নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। তবে মার্কিন কর্মকর্তারা দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে জানিয়েছেন, ইসরায়েল কখন আঘাত হানবে বা তাদের লক্ষ্য কী হবে তারা তা জানেন না।
এদিকে, মার্কিন কর্মকর্তাদের মধ্যে বাইডেন প্রশাসনের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এবং জাতীয় গোয়েন্দা বিভাগের (ওডিএনআই) মুখপাত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, তারা মনে করেন না যে ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সিআইএ পরিচালক উইলিয়াম বার্নসের এই সপ্তাহের শুরুতে দেওয়া বক্তব্যের সাথে এটি সংগতিপূর্ণ, যেখানে তিনি বলেন, ইরানের নেতৃত্ব ২০০৩ সালে তাদের পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেছে এমন কোনও প্রমাণ দেখা যায়নি।
ওডিএনআই মুখপাত্র আরও বলেন, "ইরানের সর্বোচ্চ নেতা, আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি ২০০৩ সালে স্থগিত করা পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি পুনরায় চালু করার সিদ্ধান্ত নেননি বলে আমরা ধারণা করছি।"
এই গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণ করলে অনেকটা বোঝা যায়, তেহরানের সাম্প্রতিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পরেও কেন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে সম্ভাব্য ইসরায়েলি হামলার বিরোধিতা করছে।