২০২৪ সালে বিশ্বব্যাপী সরকারি ঋণ ১০০ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে: আইএমএফ
২০২৪ সালে প্রথমবারের মতো বিশ্বব্যাপী মোট সরকারি ঋণ ১০০ ট্রিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করতে যাচ্ছে এবং এটি পূর্বাভাসের চেয়ে আরও দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। আজ মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আইএমএফ জানিয়েছে, উচ্চ ব্যয়ের প্রতি রাজনৈতিক আগ্রহ এবং ধীরগতির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঋণগ্রহণের প্রয়োজন ও খরচ বাড়িয়ে তুলছে।
আইএমএফ-এর সর্বশেষ ফিসকাল মনিটর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ বৈশ্বিক সরকারি ঋণ বিশ্বব্যাপী মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৯৩ শতাংশে পৌঁছাবে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে এটি ১০০ শতাংশে পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে। যা কোভিড-১৯ মহামারির সময়কার ৯৯ শতাংশের শীর্ষ পর্যায়কেও অতিক্রম করবে। ২০১৯ সালের তুলনায় [যখন মহামারির আগে সরকারি ব্যয় নিয়ন্ত্রিত ছিল] এটি ১০ শতাংশ পয়েন্ট বেশি হবে।
ওয়াশিংটনে আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক বৈঠকের এক সপ্তাহ আগে প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ভবিষ্যতে ঋণের স্তর বর্তমান পূর্বাভাসের চেয়ে অনেক বেশি হতে পারে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের মতো বৃহত্তম অর্থনীতিগুলোর ব্যয় বৃদ্ধির প্রবণতার কারণে এই আশঙ্কা বাড়ছে।
প্রতিবেদনে আইএমএফ বলেছে, "আর্থিক নীতির অনিশ্চয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং করের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক অবস্থান আরও দৃঢ় হয়েছে। সবুজ (গ্রিন) প্রযুক্তিতে রূপান্তর, জনসংখ্যার বয়স বৃদ্ধি, নিরাপত্তা উদ্বেগ এবং দীর্ঘদিনের উন্নয়নমূলক চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলার জন্য ব্যয় বাড়ছে।"
নির্বাচনী ব্যয়ের প্রতিশ্রুতি
ঋণের স্তর বৃদ্ধির বিষয়ে আইএমএফ-এর উদ্বেগ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তিন সপ্তাহ আগে এসেছে, যেখানে উভয় প্রার্থী [কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্প] নতুন কর ছাড় এবং ব্যয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যেটি ট্রিলিয়ন ডলারের ফেডারেল ঘাটতি বাড়াতে পারে।
ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কামালা হ্যারিসের পরিকল্পনার তুলনায় রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের কর অব্যাহতির পরিকল্পনাগুলো ১০ বছরে প্রায় ৭.৫ ট্রিলিয়ন ডলার নতুন ঋণ যোগ করবে, যা ৩.৫ ট্রিলিয়ন ডলারের চেয়ে বেশি। এই তথ্য কমিটি ফর আ রেসপন্সিবল ফেডারেল বাজেট (সিআরএফবি) এর করা প্রাথমিক অনুমান থেকে জানা গেছে।
প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ঋণের পূর্বাভাস বাস্তব ফলাফলের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম হয়ে থাকে এবং পাঁচ বছর পরে বাস্তবায়িত ঋণ থেকে জিডিপি অনুপাত সাধারণত ১০ শতাংশ বেশি থাকে।
এছাড়াও, দুর্বল প্রবৃদ্ধি, কঠোর আর্থিক পরিস্থিতি এবং যুক্তরাষ্ট্র ও চীনসহ গুরুত্বপূর্ণ অর্থনীতিগুলোর মধ্যে আরও বেশি আর্থিক এবং মুদ্রানীতির অনিশ্চয়তা ঋণ বাড়াতে উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রাখতে পারে। প্রতিবেদনে "গুরুতর অস্বাভাবিক পরিস্থিতি" নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এসব পরিস্থিতির কারণে বৈশ্বিক সরকারি ঋণ মাত্র তিন বছরের মধ্যে ১১৫ শতাংশে এ পৌঁছাতে পারে, যা বর্তমান অনুমানের চেয়ে ২০ শতাংশ পয়েন্ট বেশি।
ব্যয়ের কড়াকড়ি
আইএমএফ আরও একবার আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্য আহ্বান জানিয়ে বলেছে, শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি এবং নিম্ন বেকারত্বের বর্তমান পরিস্থিতি এটি নিশ্চিত জন্য একটি আদর্শ সময়। কিন্তু সংস্থাটি জানিয়েছে, ২০২৩ থেকে ২০২৯ সালের মধ্যে গড়ে ১ শতাংশ জিডিপি ঋণ কমানো বা স্থিতিশীল করার জন্য পর্যাপ্ত নয়।
এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য ৩.৮ শতাংশ ঋণের সংকোচন প্রয়োজন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র, চীন এবং অন্যান্য দেশে যেখানে জিডিপি স্থিতিশীল হওয়ার পূর্বাভাস নেই, সেখানে উল্লেখযোগ্যভাবে বড় আর্থিক সংকোচন প্রয়োজন হবে।
কংগ্রেশনাল বাজেট অফিসের এই মাসের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে ২০২৪ সালের জন্য প্রায় ১.৮ ট্রিলিয়ন ডলারের ঘাটতির রিপোর্ট আসবে, যা জিডিপির ৬.৫ শতাংশেরও বেশি।
প্রতিবেদনটি উল্লেখ করেছে, যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশ, যেমন ব্রাজিল, ব্রিটেন, ফ্রান্স, ইতালি এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় যেখানে ঋণের বৃদ্ধির পূর্বাভাস রয়েছে, সেসব দেশ ব্যয়বহুল পরিণতির মুখোমুখি হতে পারে।
আইএমএফ-এর ডেপুটি ফিসকাল অ্যাফেয়ার্স ডিরেক্টর এরা ডাবলা-নরিস বলেছেন, "সমন্বয় স্থগিত করা মানে হচ্ছে শেষ পর্যন্ত একটি বড় সংশোধনের প্রয়োজন হবে এবং অপেক্ষা করাও ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। কারণ অতীতের অভিজ্ঞতা দেখায়, উচ্চ ঋণ এবং বিশ্বাসযোগ্য আর্থিক পরিকল্পনার অভাব নেতিবাচক বাজার প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে এবং ভবিষ্যতের সংকট মোকাবিলায় দেশের সম্ভাবনা সীমিত করতে পারে।"
তিনি আরও বলেন, জন বিনিয়োগ বা সামাজিক ব্যয়ের কাটছাঁট সাধারণত বিপরীতে দুর্বলভাবে লক্ষ্যযুক্ত ভর্তুকির তুলনায় প্রবৃদ্ধির ওপর অনেক বড় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, যেমন জ্বালানির ক্ষেত্রে। কিছু দেশ তাদের করের ভিত্তি সম্প্রসারণের এবং কর সংগ্রহের দক্ষতা উন্নত করার সুযোগ পেতে পারে। অন্যরা মূলধন লাভ এবং আয়ের ওপর আরো কার্যকরভাবে কর আরোপ করে তাদের কর ব্যবস্থাকে আরও গতিশীল করে তুলতে পারে।