ট্রাম্পের জয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন হারাতে পারে ইউক্রেন
ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে হারিয়ে ৪৭তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ায় ইউক্রেনের জন্য মার্কিন সমর্থন বড় অংশে কমে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এতে রাশিয়ার সঙ্গে দেশটির চলমান যুদ্ধে তীব্র প্রভাব পড়তে পারে।
নির্বাচনি প্রচারের সময় রিপাবলিকান ট্রাম্প ও তার রানিংমেট জেডি ভ্যান্স ইউক্রেনকে মার্কিন সহায়তার বিষয়ে প্রায়ই দ্বিমত প্রকাশ করেন। রাশিয়ার আক্রমণের আড়াই বছর পার হলেও ইউক্রেনের প্রতি এ সহায়তা অব্যাহত রাখা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কতটা যৌক্তিক, তা নিয়ে তারা প্রশ্ন তোলেন। ট্রাম্প এমন মন্তব্যও করেন যা ইঙ্গিত দেয় যে, যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে ইউক্রেনকে বাধ্য করতে পারে।
ট্রাম্প এমন এক সময়ে বিজয়ী হলেন যখন ইউক্রেন এ যুদ্ধে এক সংকটময় মুহূর্তের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ান বাহিনী বর্তমানে পূর্ব দনবাস অঞ্চলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন এ অঞ্চল পুরোপুরি নিজের করায়ত্ত করতে চান।
ইউক্রেনীয় সেনাপ্রধান অলেক্সান্ডার সিরস্কি শনিবার টেলিগ্রামে জানান, রণাঙ্গনের সম্মুখযুদ্ধের পরিস্থিতি এখনও 'কঠিন' এবং নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চলে 'ইউক্রেনীয় বাহিনীর রসদের অব্যহত সরবরাহ প্রয়োজন'।
অন্যদিকে, রাশিয়া সেনাবল বাড়াতে উত্তর কোরিয়ার সৈন্যদের সহায়তা নিচ্ছে বলে জানা গেছে। মার্কিন কর্মকর্তারা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, প্রায় ১০ হাজার উত্তর কোরীয় সেনা বর্তমানে রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে অবস্থান করছে এবং তারা শিগগিরই ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যোগ দিতে পারে।
বাইডেন প্রশাসনের অধীনে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে অস্ত্র ও বাজেট সহায়তা হিসেবে কয়েক বিলিয়ন ডলার দিয়েছে। ট্রাম্প দায়িত্ব গ্রহণের আগ পর্যন্ত কিয়েভকে এ সহায়তা অব্যাহত রাখার পরিকল্পনা রয়েছে প্রশাসনের।
ট্রাম্প বারবার পুতিনের প্রশংসা এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সমালোচনা করেছেন। তবে বুধবার জেলেনস্কি ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, তিনি ট্রাম্পের 'শক্তির মাধ্যমে শান্তি' প্রত্যয়কে সম্মান করেন।
'আমরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিশালী ভূমিকা দেখতে আগ্রহী এবং ইউক্রেনের জন্য দ্বিদলীয় সমর্থন অব্যাহত থাকবে বলে আশা করছি,' সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন জেলেনস্কি। 'আমরা এমন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার অপেক্ষায় আছি যা উভয় দেশের জন্য উপকারী হবে।'
ট্রাম্প বারবার বলেছেন, তিনি প্রেসিডেন্ট থাকলে ইউক্রেন–রাশিয়া যুদ্ধ শুরুই হতো না। এমনকি ক্ষমতায় এলে একদিনেই যুদ্ধ থামাতে পারবেন বলেও দাবি করেছেন। জুলাইয়ে তিনি বলেন, 'একদিনেই বিরোধ মিটিয়ে ফেলতে পারি।'
সেপ্টেম্বরে এক সমাবেশে তিনি বলেন, 'একটু সমঝোতা' করে হলেও যেকোনো চুক্তি, এমনকি খারাপ চুক্তিও বর্তমান পরিস্থিতির চেয়ে ভালো।
'যদি তারা একটি খারাপ চুক্তিও করে, তা বর্তমান পরিস্থিতির চেয়ে ভালো হতো। কিছুটা ছাড় দিলে হয়তো সবাই বেঁচে থাকতে পারত,' মন্তব্য করেছিলেন ট্রাম্প।
২৭ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক সিটিতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের সময় ট্রাম্প বলেন, তিনি 'উভয় পক্ষের' জন্য একটি ভালো চুক্তি নিশ্চিতে কাজ করবেন।
'আমাদের মধ্যে খুব ভালো সম্পর্ক রয়েছে, এবং আমি প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গেও খুব ভালো সম্পর্ক রেখেছি। আমি বিশ্বাস করি, আমরা যদি জিতি, তাহলে আমরা দ্রুত এটা সমাধান করতে পারব,' ট্রাম্প বলেন।
'আমার মনে হয়, ২০ জানুয়ারির আগে, অর্থাৎ আমি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আগেই, আমরা এমন কিছু করতে পারব যা উভয় পক্ষের জন্যই ভালো হবে। এখন সময় এসেছে,' তিনি যোগ করেন।
জেলেনস্কি একটি 'বিজয় পরিকল্পনা' তৈরি করেছেন এবং বলেছেন তিনি আলোচনার বিরোধী নন, তবে সেসব আলোচনা 'শক্ত অবস্থান' থেকে হতে হবে। অক্টোবরের শেষদিকে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, 'ট্রাম্প অনেক কিছু বলেন, কিন্তু আমি তাকে কখনও ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন কমানোর কথা বলতে শুনিনি।'
বুধবার জেলেনস্কি জানান, সেপ্টেম্বরের বৈঠকে তিনি ও ট্রাম্প 'ইউক্রেন–যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত অংশীদারিত্ব, বিজয় পরিকল্পনা এবং রুশ আগ্রাসন মোকাবেলার উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন'।
এদিকে, দক্ষিণ কোরিয়ার কেবিএস-এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি স্বীকার করেন, 'পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন শক্তিশালী বা দুর্বল করতে পারেন।'
'যদি সমর্থন দুর্বল হয়, রাশিয়া আরও এলাকা দখল করবে, এবং এতে আমাদের এ যুদ্ধে জয় লাভ বাধাগ্রস্ত হবে। এটাই বাস্তবতা। আমাদের অবস্থান আঞ্চলিক ছাড়ের জন্য নয়, বরং এমন কূটনৈতিক পথ খোঁজা যা যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন অক্ষুণ্ণ রাখার ওপর নির্ভর করে। এ যুদ্ধ দ্রুত শেষ করতে যুক্তরাষ্ট্রের ইচ্ছা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ,' তিনি বলেন।
নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্র ও এটির মিত্ররা ইউক্রেনের প্রতি মার্কিন সমর্থনকে 'ট্রাম্প-প্রুফ' করার উপায় খুঁজছিল। চলতি বছরের শুরুর দিকে ন্যাটো ঘোষণা করে, ইউক্রেনের জন্য সামরিক সরঞ্জাম ও প্রশিক্ষণ প্রদান সমন্বয়ের জন্য একটি মিশন চালু করা হবে, যা মূলত যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পরিচালিত হবে।
বাইডেন প্রশাসন ইতোমধ্যে জি৭-এর ৫০ বিলিয়ন ডলারের ঋণ প্যাকেজের মধ্যে থেকে ২০ বিলিয়ন ডলার ইউক্রেনে পাঠিয়েছে। এ অর্থ এসেছে স্থগিত করা রাশিয়ান সম্পদ থেকে।