নেতানিয়াহু, গালান্ত ও হামাস নেতার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি আইসিসি’র
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) বিচারকরা ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও তার সাবেক প্রতিরক্ষা প্রধান ইয়োভ গালান্ত এবং হামাস নেতা ইব্রাহিম আল-মাসরির বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) আদালত এ তথ্য জানিয়েছেন।
তবে ইসরায়েল হেগভিত্তিক আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের এখতিয়ার প্রত্যাখ্যান করেছে এবং গাজায় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির ঘোষণায় আইসিসি'র বিচারকরা বলেছেন, গাজার দুর্ভিক্ষ এবং ফিলিস্তিনিদের ওপর নিপীড়নের জন্য নেতানিয়াহু ও গালান্ত অপরাধমূলকভাবে দায়ী বলে বিশ্বাস করার যৌক্তিক কারণ রয়েছে।
অন্যদিকে, আল-মাসরির বিরুদ্ধে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার সময় করা গণহত্যা, ধর্ষণ এবং জিম্মি করার মতো অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।
প্রসিকিউশন জানিয়েছে, আল-মাসরির কথিত মৃত্যুর বিষয়ে তারা আরও তথ্য সংগ্রহ করবে।
কারণ ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা আল-মাসরি, যিনি মোহাম্মদ দেইফ নামেও পরিচিত, তাকে বিমান হামলা করে হত্যা করেছে।
তবে হামাস এই দাবিটি নিশ্চিত বা অস্বীকার করেনি।
আইসিসি'র প্রসিকিউটর কারিম খান গত ২০ মে ঘোষণা করেছিলেন যে, তিনি ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলা এবং গাজায় ইসরায়েলি সামরিক অভিযান সংক্রান্ত অপরাধের জন্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চান।
গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির বিষয়ে ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেত বলেছেন, আইসিসির নেতানিয়াহু ও গালান্তের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির সিদ্ধান্ত, আদালতের জন্যই 'লজ্জার বিষয়'।
ইসরায়েলের প্রধান বিরোধী দলীয় নেতা ইয়াইর লাপিদও আদালতের এই পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়ে একে 'সন্ত্রাসবাদের পুরস্কার' বলে অভিহিত করেছেন।
এর আগে, ইসরায়েলি এবং হামাস নেতারা যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
আদালতের নিজস্ব পুলিশ বাহিনী নেই, তাই গ্রেপ্তারি কার্যকর করতে আদালত তার সদস্য রাষ্ট্রগুলোর ওপর নির্ভর করে। আইসিসি'র সদস্য দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে- সব ইউরোপীয় ইউনিয়ন দেশ, ব্রিটেন, জাপান, ব্রাজিল, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা এবং মধ্যপ্রাচ্যে ফিলিস্তিন ও জর্ডান।
গ্রেপ্তারি পরোয়ানাকে 'উদ্ভট' ও 'রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত' দাবি নেতানিয়াহুর কার্যালয়ের
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির ঘটনায় ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। এই পরোয়ানাকে 'অ্যান্টি-সেমেটিক' বা ইহুদি-বিদ্বেষী বলে উল্লেখ করে এক বিবৃতি দেওয়া হয়েছে।
বিবৃতিতে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গাজায় যুদ্ধাপরাধ সংগঠনের যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, সেগুলোকে 'উদ্ভট' ও 'বৈষম্যমূলক' বলেও অভিহিত করা হয়।
বিংশ শতকের শুরুতে ফ্রান্সের সামরিক বাহিনীর কিছু ইহুদি কর্মকর্তাকে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে দণ্ডিত করা হয়, যা ড্রাইফাস ট্রায়াল নামে পরিচিত। আইসিসির বিচার প্রক্রিয়াকে বর্তমান সময়ের ড্রাইফাস ট্রায়াল বলে নিন্দা করেছে নেতানিয়াহুর কার্যালয়।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, 'ইসরায়েল-বিরোধী কোনো সিদ্ধান্তই ইসরায়েল রাষ্ট্রকে তার নাগরিকের সুরক্ষা বিধান থেকে বিরত রাখতে পারবে না। প্রধানমন্ত্রী কোনো চাপের কাছে নতিস্বীকার করবেন না, ভীত হবেন না, এবং যুদ্ধের সব লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত পিছু হটবেন না।'
'ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আইসিসির আনীত এসব উদ্ভট ও মিথ্যা অভিযোগ সর্বান্তকরণে অস্বীকার করছে ইসরায়েল, এই আদালত একটি বিতর্কিত ও বৈষম্যমূলক রাজনৈতিক সত্ত্বা।'
ভাবানুবাদ: তাবাসসুম সুইটি