ইউক্রেনে মার্কিন সহায়তা হয়ত কমবে: ডোনাল্ড ট্রাম্প
ক্ষমতা গ্রহণের পর ইউক্রেনের সহায়তা কমিয়ে দিতে পারেন বলে জানিয়েছেন সদ্য নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সম্প্রতি ট্রাম্প মস্কো ও কিয়েভকে তাৎক্ষণিক যুদ্ধ বিরতির আহ্বান জানিয়েছেন। এ আহ্বান জানানোর পরই তিনি এ সহায়তা কমিয়ে দেওয়ার কথা বলেন।
গতকাল রোববার এনবিসি নিউজে সম্প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করা হয়, অভিষেকের পর যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সহায়তা কমে যাওয়ার বিষয়ে ইউক্রেনের কি প্রস্তুত হওয়া উচিত। এর উত্তরে ট্রাম্প বলেন, "হ্যাঁ, সম্ভবত নিশ্চিতই বলা যায়।"
পেন্টাগনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের জন্য ১৩১.৩৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দ দিয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ৯০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ইতোমধ্যে দিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জার্মানির কিয়েল ইনস্টিটিউট ফর দ্য ওয়ার্ল্ড ইকোনমি জানিয়েছে।
নির্বাচনী প্রচারণার সময়, ডোনাল্ড ট্রাম্প বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে তিনি ক্ষমতা গ্রহণের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ইউক্রেন সংঘাতের অবসান ঘটাবেন। তবে, এটি কীভাবে সম্ভব করবেন, তা নিয়ে কোনো নির্দিষ্ট ব্যাখ্যা দেননি।
বিশ্লেষকদের ধারণা, তিনি ইউক্রেনীয় নেতা ভলোদিমির জেলেনস্কিকে আলোচনায় বসতে বাধ্য করতে সহায়তা কমানোর হুমকি দিতে পারেন। একইভাবে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে আলোচনায় টানতে সহায়তা বাড়ানোর কথা বলতে পারেন।
শনিবার প্যারিসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে আকস্মিক এক বৈঠক করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যদিও বৈঠকটি প্রাথমিকভাবে উপস্থিত হতে তিনি অনাগ্রহী ছিলেন ট্রাম্প। ৪০ মিনিটের এই বৈঠকের পরে তিন নেতার কেউই সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেননি বা কোনো বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেননি বলে জানা গেছে।
রোববার সামাজিক মাধ্যমে ট্রাম্প দাবি করেন, "জেলেনস্কি এবং ইউক্রেন একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে চায় এবং এই উন্মাদনা বন্ধ করতে চায়।" তিনি আরও বলেন, "সংঘাতকে আরও বড় এবং ভয়ংকর কিছুতে পরিণত হওয়া থেকে রোধ করতে তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি ও আলোচনা প্রয়োজন।"
ট্রাম্প আরও দাবি করেন, "২০২২ সাল থেকে ইউক্রেন ৪ লাখ সেনা হারিয়েছে। তবে, এই সংখ্যা কিয়েভ বা তাদের পশ্চিমা মিত্রদের প্রকাশিত যেকোনো হিসাবের চেয়ে অনেক বেশি।"
রোববার আরেক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেন, এই সংঘাতে রাশিয়া ৬ লাখ সেনা হারিয়েছে।" ক্রেমলিন দাবি করছে, ইউক্রেনের প্রচারিত ভুয়া তথ্যের ভিত্তিতে এসব অভিযোগ করা হচ্ছে।
এদিকে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি দ্রুত সমঝোতার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। রোববার তিনি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম এক্স-এ লেখেন, "কিছু সই এবং একটি চুক্তি দিয়ে এই সংঘাত শেষ হতে পারে না।"
তিনি আরও বলেন, "পুতিনকে কেবল শক্তির মাধ্যমেই থামানো সম্ভব এবং ইউক্রেন কেবল একটি ন্যায়সংগত শান্তিতেই সন্তুষ্ট হবে।"
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি তার দশ দফা 'শান্তি প্রস্তাবনাকে' সংঘাতের সমাপ্তির একমাত্র কার্যকর রোডম্যাপ বলে জোর দাবি জানান। প্রস্তাবনায় রাশিয়াকে ১৯৯১ সালের সীমান্ত অনুযায়ী ইউক্রেনের ভূখণ্ড ফিরিয়ে দেওয়া, ক্ষতিপূরণ দেওয়াসহ আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধীদের আত্মসমর্পণের দাবি জানানো হয়েছে।
তবে ক্রেমলিন এই প্রস্তাবকে 'অবাস্তব' বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। মস্কো জানিয়েছে, কোনো শান্তি সমঝোতা তাদের শর্ত ও ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতার ভিত্তিতে হতে হবে।
মস্কো জানিয়েছে, যেকোনো শান্তি সমঝোতা শুরু করতে হবে ইউক্রেনের সামরিক অভিযান বন্ধ এবং তথাকথিত 'ভৌগোলিক বাস্তবতা' স্বীকার করতে হবে। এর অর্থ, ইউক্রেন কখনোই ডোনেৎস্ক, লুহানস্ক, খেরসন, জাপোরিঝিয়া এবং ক্রিমিয়ার উপর পুনর্নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না।
এছাড়া ক্রেমলিন জোর দিয়েছে যে তাদের সামরিক অভিযানের লক্ষ্য অনুসারে ইউক্রেনের নিরপেক্ষ অবস্থান ও নিরস্ত্রীকরণ সম্পন্ন করতে হবে।
এনবিসি'র উপস্থাপক ক্রিস্টেন ওয়েলকারের প্রশ্নে ট্রাম্প জানিয়েছেন, গত মাসে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ের পর তিনি ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে কথা বলেছেন কিনা, সে বিষয়ে তিনি কিছু বলতে চান না। ট্রাম্প বলেন, "আমি এ নিয়ে কিছু বলতে চাই না, কারণ আমি এমন কিছু করতে চাই না যা আলোচনায় বাধা সৃষ্টি করতে পারে।"