ট্রাম্পের গ্রিনল্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশের পর দ্বীপের নিরাপত্তা জোরদার করল ডেনমার্ক
যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আর্কটিক অঞ্চলের দ্বীপ গ্রিনল্যান্ড যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশের কয়েক ঘণ্টা পরেই, গ্রিনল্যান্ডের প্রতিরক্ষা খাতে বড় অঙ্কের বরাদ্দ ঘোষণা করেছে ডেনমার্ক সরকার।
ডেনমার্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী টোয়েলস লুন্ড পোলসেন জানান, এই বরাদ্দের পরিমাণ অন্তত ১.৫ বিলিয়ন ডলার। তিনি এই ঘোষণা দেওয়ার সময়কে "ভাগ্যের নির্মম পরিহাস" বলে উল্লেখ করেন।
সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এই বিশাল দ্বীপের মালিকানা নেওয়া "অত্যন্ত জরুরি"।
গ্রিনল্যান্ড একটি স্বায়ত্তশাসিত ডেনিশ অঞ্চল। এখানে একটি বড় মার্কিন মহাকাশ কেন্দ্র রয়েছে। এছাড়াও দ্বীপটি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত রুটের মাঝে অবস্থিত। এখানে মূল্যবান খনিজ সম্পদের মজুদও আছে।
পোলসেন জানান, এই বরাদ্দ দিয়ে দুইটি নতুন পরিদর্শন জাহাজ, দুইটি দীর্ঘপাল্লার ড্রোন এবং দুইটি অতিরিক্ত কুকুর চালিত স্লেজ দল কেনা হবে।
এছাড়া, বরাদ্দের মধ্যে আর্কটিক কমান্ডে অতিরিক্ত কর্মী নিয়োগ এবং নুক শহরে গ্রিনল্যান্ডের একটি বেসামরিক বিমানবন্দরকে এফ-৩৫ সুপারসনিক যুদ্ধবিমান ব্যবহারের উপযোগী করতে উন্নীত করার জন্য অর্থায়ন থাকবে।
তিনি বলেন, "আমরা বহু বছর ধরে আর্কটিকে যথেষ্ট বিনিয়োগ করিনি। এখন আমরা সেখানে শক্তিশালী উপস্থিতির পরিকল্পনা করছি।" তবে তিনি বরাদ্দের নির্দিষ্ট অংক জানাননি। ডেনমার্কের গণমাধ্যম ধারণা করছে এটি ১২ থেকে ১৫ বিলিয়ন ক্রোন (প্রায় ১.৬৮ থেকে ২.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) হতে পারে।
এর আগে ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যাল-এ বলেন, "বিশ্বজুড়ে জাতীয় নিরাপত্তা ও স্বাধীনতার স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গ্রিনল্যান্ডের মালিকানা নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।"
গ্রিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মুতে এগেডে ট্রাম্পের মন্তব্যের জবাবে বলেন, "আমরা বিক্রির জন্য নই।" তবে তিনি আরও বলেন, গ্রিনল্যান্ডের জনগণের উচিত সহযোগিতা ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে, উন্মুক্ত থাকা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পরিকল্পনাটি অনেকদিন ধরেই আলোচনায় ছিল। এটি ট্রাম্পের মন্তব্যের সরাসরি প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা উচিত নয়।
এখন পর্যন্ত ডেনমার্ক গ্রিনল্যান্ডে তার সামরিক ক্ষমতা বাড়াতে খুব ধীর গতিতে কাজ করেছে। তবে তারা যদি চীন ও রাশিয়ার আক্রমণের বিরুদ্ধে গ্রিনল্যান্ডের পানির সুরক্ষা দিতে না পারে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণের দাবি বাড়তে পারে।
ডেনিশ ডিফেন্স অ্যাকাডেমির সেনাবাহিনীর মেজর স্টিন কেজারগার্ড মনে করেন, ট্রাম্পের উদ্দেশ্য হয়ত ডেনমার্ককে এমন পদক্ষেপ নিতে চাপ দেয়া ছিল।
তিনি বিবিসি-কে বলেন, "এটি সম্ভবত ট্রাম্পের নতুন করে গ্রিনল্যান্ডের আশপাশের আকাশ এবং সমুদ্র নিয়ন্ত্রণের ওপর গুরুত্বারোপের এবং সেখানে কিছু মানুষের অভ্যন্তরীণ চাহিদার ফল। তারা যুক্তরাষ্ট্রের দিকে নজর দিচ্ছে– নিউক শহরে একটি নতুন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রতি উদ্বোধন হয়েছে।"
কেজারগার্ড বলেন, "আমি মনে করি ট্রাম্প বুদ্ধিমান... তিনি ডেনমার্ককে তার আর্কটিক সামরিক সক্ষমতাকে প্রাধান্য দিতে চাপ দিচ্ছেন। কিন্তু তাকে গ্রিনল্যান্ডের কল্যাণকর ব্যবস্থার দায়িত্ব নিতে হচ্ছে না।"
২০১৯ সালে ট্রাম্পের গ্রিনল্যান্ড কেনার প্রস্তাব গ্রিনল্যান্ডের নেতাদের কাছ থেকে তীব্র সমালোচনার সৃষ্টি করেছিল।
তখন ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেট ফ্রেডরিকসেন এই ধারণাটিকে "অযৌক্তিক" বলে অভিহিত করেছিলেন। এর পর ট্রাম্প সেখানে একটি রাষ্ট্রীয় সফর বাতিল করেন।
তিনি গ্রিনল্যান্ড কেনার প্রস্তাব দেওয়া প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট নন। এই ধারণাটি প্রথম ১৮৬০-এর দশকে এন্ড্রু জনসনের প্রেসিডেন্সির সময় উঠেছিল।