সকালে কফি পান করলে হৃদরোগে মৃত্যুর ঝুঁকি কমে: গবেষণা
নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সকালে কফি পান করেন তাদের হৃদরোগে মারা যাওয়ার ঝুঁকি কম এবং সারাদিন কফি পান করা লোকদের তুলনায় তাদের মৃত্যু ঝুঁকিও কম। খবর বিবিসি'র।
বুধবার (৮ জানুয়ারি) 'ইউরোপিয়ান হার্ট জার্নাল'-এ গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে।তবে, এ ধরনের ফলাফলের পেছনে কফি একমাত্র কারণ কি না, তা নিশ্চিত হতে পারেননি গবেষকরা।
টুলেইন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওবেসিটি রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক এবং প্রধান গবেষক ড. লু কি বলেছেন, গবেষণাটি যদিও পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করতে পারেনি কেন সকালে কফি পান করলে মৃত্যুর ঝুঁকি কমে। তবে একটি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে, দিনের বাকি সময় কফি পান করলে মানুষের অভ্যন্তরীণ 'বডি ক্লক'-এর (দেহঘড়ি) ব্যাঘাত ঘটে।
ড. লু কি বলেছেন, তাদের পাওয়া ফলাফল অন্য ব্যক্তিদের ওপর কীভাবে প্রভাব ফেলে, তা জানার জন্য আরও গবেষণার প্রয়োজন। তিনি বলেন, "আমাদের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল প্রয়োজন, যাতে মানুষের কফি পানের সময় পরিবর্তনের সম্ভাব্য প্রভাব পরীক্ষা করা যায়।"
তিনি আরও বলেন, " কেন সকালে কফি পান করলে হৃদরোগে মৃত্যু ঝুঁকি কমে, সেটি এই গবেষণা আমাদের বলতে পারেনি। একটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা হলো, দুপুর বা সন্ধ্যায় কফি পান করলে সার্কাডিয়ান রিদম (শরীরের ২৪ ঘণ্টার শারীরিক, মানসিক ও আচরণগত পরিবর্তনের চক্র) এবং মেলাটোনিনের মতো হরমোনের মাত্রা বিঘ্নিত হতে পারে।"
ড. লু বলেন, "ফলস্বরূপ, এটি হৃদরোগের ঝুঁকি সম্পর্কিত কারণগুলো যেমন প্রদাহ এবং রক্তচাপের পরিবর্তন ঘটায়।"
নিউ অরলিন্সের টুলেইন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা ৪০ হাজার ৭২৫ জন প্রাপ্তবয়স্কের ওপর গবেষণা চালিয়েছেন। তারা ১৯৯৯ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল হেলথ অ্যান্ড নিউট্রিশন এক্সামিনেশন সার্ভে-তে অংশ নিয়েছিলেন।
তাদেরকে দৈনন্দিন খাদ্য ও পানীয় সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয় এবং তারা কফি পান করেন কি না, কতটুকু এবং কখন পান করেন, তা জানতে চাওয়া হয়।
ড. লু বলেন, "আমাদের শরীরে ক্যাফেইনের যে প্রভাব আছে, তার ভিত্তিতে আমরা দেখতে চেয়েছিলাম কফি পান করার সময় হৃদরোগের ওপর কোনো প্রভাব পড়ে কি না।"
তিনি বলেন, অতীতের গবেষণায় দেখা গেছে, পরিমিত কফি পান স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হতে পারে। তবে এটি ছিল "প্রথম গবেষণা, যেখানে কফি পান করার সময় এবং স্বাস্থ্যের ওপর এর প্রভাব পরীক্ষা করা হয়েছে।"
গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, অংশগ্রহণকারীদের ৩৬ শতাংশ সকালে কফি পান করেন এবং ১৪ শতাংশ সারাদিন কফি পান করেন।
ড. লু কি এবং তার দল প্রায় এক দশক ধরে গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের পর্যবেক্ষণ করেছেন। তাদের বিভিন্ন তথ্য ও মৃত্যুর কারণ নিয়ে গবেষণা করেছেন।
প্রায় ১০ বছরের গবেষণা চলাকালীন ৪ হাজার ২৯৫ জনের মৃত্যু হয়। তাদের মধ্যে ১ হাজার ২৬৮ জন হৃদরোগজনিত কারণে মারা যান।
গবেষকরা দেখতে পান, যারা কফি পান করেন না তাদের তুলনায়, যারা সকালে কফি পান করেন তাদের মৃত্যু ঝুঁকি ১৬ শতাংশ কম ছিল। এবং হৃদরোগে মৃত্যুর ঝুঁকি ৩১ শতাংশ কম ছিল।
গবেষকরা জানান, বেশি কফি খাওয়ার সাথে মৃত্যুর ঝুঁকি কমার সম্পর্ক রয়েছে, তবে এটি শুধু তাদের মধ্যে প্রযোজ্য যারা সকালে কফি পান করেন, সারাদিন কফি পানকারীদের তুলনায়।
লন্ডনের রয়্যাল ব্রম্পটন এবং হ্যারফিল্ড হাসপাতালের অধ্যাপক থমাস এফ লুশার একটি সম্পাদকীয়তে প্রশ্ন করেছেন, "দিনের কোন সময় কফি পান করা গুরুত্বপূর্ণ?"
তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, "সকালে সাধারণত দেহের সিস্টেম সক্রিয় হয়ে ওঠে, যা পুরো দিনের শেষে কমে যায় এবং ঘুমের সময় সর্বনিম্ন থাকে।"
অধ্যাপক লুশার আরও বলেন, যেমনটি গবেষকরা পরামর্শ দিয়েছেন, এটি "সম্ভব" যে দিন শেষে যখন আমাদের বিশ্রাম নেওয়ার সময়, তখন কফি পান আমাদের দেহের অভ্যন্তরীণ ঘড়িকে বিঘ্নিত করতে পারে।
তিনি যোগ করেছেন, "সত্যিই, অনেক সারাদিন কফি পানকারী মানুষ ঘুমের সমস্যা ভোগে," এবং কফি মেলাটোনিন [মস্তিষ্কে ঘুম আনার জন্য জরুরি হরমোন] নষ্ট করতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।
গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, যারা সকালে কফি পান করেন, তারা সাধারণত চা এবং ক্যাফেইনযুক্ত সোডা পান করেন। তবে, সারাদিন কফি পানকারীদের তুলনায় তারা কম কফি পান করেন।