প্রাচীন ইউরোপীয়রা হয়ত তাদের শত্রুর মগজ খেতেন: গবেষণা
![](https://tbsnews.net/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2025/02/13/image-2-20250211134020721.jpg)
একটি নতুন গবেষণায় বলা হয়েছে, ইউরোপের প্রাচীন মানুষ সম্ভবত তাদের মৃত শত্রুদের মস্তিষ্ক থেকে মগজ বের করে খেত।
গবেষণাটি গত সপ্তাহে 'সায়েন্টিফিক রিপোর্টস' জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে গবেষকরা ম্যাগডালেনিয়ান সংস্কৃতির অন্তত ১০ জন মানুষের হাড় পরীক্ষা করেছেন, যারা ১১ হাজার থেকে ১৭ হাজার বছর আগে ইউরোপে বাস করতেন।
ফ্রান্স, স্পেন এবং পোল্যান্ডের প্রতিষ্ঠানগুলোর গবেষক দলের সদস্যরা ইমেজিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভিন্ন "লম্বা হাড় থেকে মজ্জা এবং খুলি থেকে মস্তিষ্ক অপসারণের সাথে সম্পর্কিত চিহ্ন" শনাক্ত করেছেন।
অন্যান্য বেশ কিছু গবেষণায় জানা গেছে, ম্যাগডালেনিয়ান মানুষদের মধ্যে ক্যানিবালিজম (নরমাংস ভক্ষণ) তুলনামূলকভাবে সাধারণ ঘটনা ছিল। সাধারণত মৃত্যুসংক্রান্ত আচার অনুষ্ঠান এবং সহিংসতার কারণে এমনটি ঘটত।
তবে এই বিশেষ ঘটনা "যুদ্ধের একটি ঘটনা ছিল," বলে দাবি করেছেন গবেষণার সহ-লেখক ফ্রানসেস্ক মারগিনেদাস। তিনি জানান, এখানে "অন্যান্য ম্যাগডালেনিয়ান সাইটগুলোর তুলনায় কোনো বিশেষ আচরণ ছিল না এবং খুলি কাপের উপস্থিতিও ছিল না, যা দেহের আচার অনুষ্ঠানের সাথে সম্পর্কিত।"
![](https://tbsnews.net/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2025/02/13/image-4-20250211133928877.jpg)
স্পেনের কাতালান ইনস্টিটিউট অব হিউম্যান প্যালিওইকোলজি অ্যান্ড সোশ্যাল ইভোলিউশন-এর প্রত্নতত্ত্ববিদ মারগিনেদাস একটি দল নিয়ে পোল্যান্ডের ক্রাকোভের কাছাকাছি মাশজিকা গুহায় সংগৃহীত হাড়গুলো অধ্যয়ন করেছিলেন। এটি একটি সুপরিচিত প্রাগৈতিহাসিক স্থান এবং কয়েক দশক ধরে এটি নিয়ে গবেষণা করা হয়েছে।
তৎকালীন সময়ে প্রাচীন ম্যাগডালেনিয়ানরা মৃতদের মগজ কেন খেয়েছে, সে বিষয়ে বিভিন্ন তত্ত্ব দেওয়া হয়েছে।
১৯৯০-এর দশকে একটি গবেষণা জানায়, এই প্রাচীন মানুষগুলো তাদের শত্রুদের মগজ খেয়েছিল। তবে পরবর্তী গবেষণাগুলো খুলিতে মানুষের দাঁতের চিহ্ন অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি তুলে ধরেছে, যা ক্যানিবালিজমের তত্ত্বকে দুর্বল করে দিয়েছিল।
তবে গবেষণার সহ-লেখক মারগিনেদাসে মঙ্গলবার সিএনএনকে বলেছেন, সমস্ত প্রমাণ "আমাদের মনে করায় যে এটি মৃত্যুসংক্রান্ত আচারের চেয়েও সহিংসতা এবং সংঘাতের সঙ্গে বেশী সম্পর্কিত।"
তিনি এবং তার দল ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ ব্যবহার করে হাড়গুলো অধ্যয়ন করেছেন। ৬৮ শতাংশ হাড়ে চিহ্ন ও কাটার সংকেত পেয়েছেন এবং প্রমাণ করেছেন, এগুলো প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া নয় বরং মানুষের তৈরি।
এই হাড়গুলো অন্তত ১০ জন ব্যক্তির ছিল– ছয়জন প্রাপ্তবয়স্ক এবং চারজন কিশোর। তারা একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে এবং তা নিশ্চিত করতে আরও ডিএনএ বিশ্লেষণ প্রয়োজন বলে মারগিনেদাস জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, তারা দীর্ঘ সময় আগে মারা যাওয়ায় "এটি যুদ্ধকালীন ক্যানিবালিজমের ঘটনা কি না তা শতভাগ নিশ্চিত করা খুবই কঠিন।"
![](https://tbsnews.net/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2025/02/13/image-1-20250211133829891.jpg)
মারগিনেদাস বলেন, "টাফোনোমিক বিশ্লেষণের সময় (মৃত্যুর পর জৈব পদার্থের ওপর ঘটে যাওয়া প্রক্রিয়া) সময়ে আমরা সম্পূর্ণ হাড়ের পৃষ্ঠে এমন কিছু চিহ্ন খুঁজে পেয়েছি যা আমাদের ঘটনার বিষয়ে কিছু ধারণা দিতে পারে। আমরা চিহ্নিত করেছি ... বাহু ও পায়ের হাড়গুলো কাটা এবং ভাঙা হয়েছিল... মজ্জা বের করতে এবং খেতে।"
প্রাণীবিদ এবং 'ক্যানিবালিজম: এ পারফেক্টলি ন্যাচারাল হিস্ট্রি' বইয়ের লেখক বিল শাট সিএনএনকে বলেছেন, "এটি খুব ভালোভাবে লেখা একটি পেপার এবং সত্যিই একটি ভালো গবেষণা।" তিনি এই গবেষণায় অংশগ্রহণ করেননি।
তবে তিনি সতর্ক করে বলেছে, এটি ক্যানিবালিজমের একটি উদাহরণ হিসেবে ধরে নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো উচিত নয়।
তিনি বলেন, "তখনকার সময়ে কী ঘটেছিল, সে বিষয়ে বিকল্প উত্তর রয়েছে।" তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, "আমরা ম্যাগডালেনিয়ান সংস্কৃতির বিষয়ে যথেষ্ট জানি না।"
বিল শাট বলেন, "কেউ জানে না, এই মানুষগুলো কী করছিল? তারা কি মৃতদেহের খুলি ভেঙে ফেলাকে সম্মানজনক মনে করত? এমন কিছু সংস্কৃতি আছে যেখানে মৃত্যুসংক্রান্ত আচার হিসেবে দেহ থেকে মাংস আলাদা করা হতো।"