বেইজিংয়ের পালটা শুল্ক আরোপ: বাণিজ্যযুদ্ধ কি এড়াতে পারবে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র?
![](https://tbsnews.net/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2025/02/05/trump_xi_.jpg)
বেইজিং অবশেষে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কয়েকদিন ধরে পালটা ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি ও ওয়াশিংটনকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানানোর পর চীনও এবার মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিল।
চীন জানিয়েছে, আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা কয়লা ও তরল প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) ওপর ১৫ শতাংশ শুল্ক এবং অপরিশোধিত তেল, কৃষি যন্ত্রপাতি ও বৃহৎ ইঞ্জিনযুক্ত গাড়ির ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক বসানো হবে। খবর বিবিসির।
তারিখটি গুরুত্বপূর্ণ। এটি ইঙ্গিত দেয় যে, বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতি এখনো বাণিজ্যযুদ্ধ থেকে সরে আসার সুযোগ হাতে রেখেছে।
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, এই সপ্তাহের শেষের দিকে দুই দেশের নেতারা একটি ফোনালাপ করবেন। আজকের ঘোষণার পরও আলোচনার দরজা পুরোপুরি বন্ধ হয়নি, বরং চীন এখনো আলোচনার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
প্রথমত, যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যগুলোর ওপর চীনের পালটা ব্যবস্থা তুলনামূলক সীমিত। এর বিপরীতে, ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনা পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক বসানোর ঘোষণা দিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বে সবচেয়ে বেশি তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানি করে, তবে চীনের বাজারে এর পরিমাণ মাত্র ২ দশমিক ৩ শতাংশ। এছাড়া, চীনের বড় ইঞ্জিনচালিত গাড়ির আমদানির প্রধান উৎস ইউরোপ ও জাপান।
এ থেকে ধারণা করা যায়, চীন কৌশলগতভাবে বেছে নেওয়া কিছু পণ্যের ওপর শুল্ক বসিয়ে আলোচনার টেবিলে বাড়তি সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করছে।
চীনের কর্মকর্তারা হয়ত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইতিবাচক সম্পর্কের সাম্প্রতিক ধারায় উৎসাহিত। ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর, তিনি প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে 'খুব ভালো' ফোনালাপ করেছেন। এমনকি তার অভিষেক অনুষ্ঠানে চীন সর্বোচ্চ পর্যায়ের একজন কর্মকর্তাকে পাঠিয়েছিল, যা ইতিবাচক বার্তা দেয়। এছাড়া, ট্রাম্প ইউক্রেন যুদ্ধের সমাধানে শি-এর সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছাও প্রকাশ করেছেন।
বর্তমানে চীনের অর্থনীতি কিছুটা চাপে আছে। তাই, শি জিনপিং এখনই ট্রাম্পের সঙ্গে বড় কোনো দ্বন্দ্বে জড়াতে চাইবেন না।
ট্রাম্প প্রশাসন বেইজিংকে বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খল থেকে বিচ্ছিন্ন করার লক্ষ্যে কাজ করছে। ফলে, এবার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করা মেক্সিকো ও কানাডার তুলনায় অনেক কঠিন হবে।
ট্রাম্প যদি চীনের ওপর অতিরিক্ত শর্ত আরোপ করেন, তাহলে শি জিনপিং নিজেকে পিছু হটার অবস্থানে না এনে আলোচনা থেকে সরে আসার পথ বেছে নিতে পারেন।
তবে, বর্তমান পরিস্থিতি আগের মতো নয়। চীন এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী। গত দুই দশকে তারা বৈশ্বিক বাণিজ্যে নিজেদের অবস্থান শক্ত করেছে এবং ১২০টির বেশি দেশের প্রধান বাণিজ্য অংশীদার হয়ে উঠেছে।
এছাড়া, চীন তার অভ্যন্তরীণ উৎপাদনও বাড়িয়েছে। আগে যেখানে আমদানি-রপ্তানি চীনের জিডিপির ৬০ শতাংশ ছিল, এখন তা নেমে এসেছে ৩৭ শতাংশে।
এ কারণে, ১০ শতাংশ শুল্কের চাপ চীন কিছুটা সহ্য করতে পারবে। তবে আশঙ্কা হলো, ট্রাম্প যদি শুল্ক ৬০ শতাংশে উন্নীত করেন বা কৌশলগতভাবে এটি ব্যবহার করেন, তাহলে চীনের জন্য পরিস্থিতি কঠিন হয়ে উঠবে।
২০১৮ সালে দুই দেশ শত শত বিলিয়ন ডলারের পণ্যের ওপর পালটা শুল্ক আরোপ করেছিল।
দুই বছরের বেশি সময় ধরে চলা ওই বাণিজ্যযুদ্ধের পর, ২০২০ সালে চীন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে বছরে অতিরিক্ত ২০০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য কেনার প্রতিশ্রুতি দেয়। তবে, কোভিড মহামারির কারণে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি।
চীন এখন আগের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিচ্ছে। তারা শুধু শুল্ক আরোপের পথেই সীমাবদ্ধ না থেকে অন্যান্য কৌশলগত প্রতিক্রিয়ার দিকেও নজর দিচ্ছে।
যদিও এই পরিস্থিতি এখনো পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্যযুদ্ধে রূপ নেয়নি, তবে সময় দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। বিশ্বজুড়ে ব্যবসায়ীরা নজর রাখছে—দুই নেতা কি শেষ পর্যন্ত কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারবেন?