বিশ্বে গাধার সংখ্যায় পাকিস্তান তৃতীয়
ধুঁকতে থাকা অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য পাকিস্তান কৃষি ও প্রাণীসম্পদকে অগ্রাধিকার দিয়ে আসছে; গাধার সংখ্যার নিরিখে সারা বিশ্বে পাকিস্তানের অবস্থান এখন তৃতীয়।
চীনে দেশটির রপ্তানির একটি বড় অংশ জুড়ে থাকে গাধা। সম্প্রতি প্রকাশিত পাকিস্তানের ২০২১-২২ অর্থবছরের অর্থনৈতিক সমীক্ষাও বলছে, দেশটিতে গাধার সংখ্যা ফের বেড়েছে।
জরিপের তথ্যমতে, ২০২১-২২ সালে পাকিস্তানে গাধার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৭ লাখে। আগের বছর এটা ছিল ৫৬ লাখ, তারও আগে ২০১৯-২০ এ ছিল ৫৫ লাখ।
পাকিস্তানের এই চারপেয়ে প্রাণী চীনে এতটাই প্রভাবশালী যে, পাকিস্তানে তৈরি 'দ্য ডাঙ্কি কিং' নামের অ্যানিমেটেড ছবিটি চীনেও রিলিজ করা হয়!
গত বছর জাতীয় পরিষদের বাজেট অধিবেশনে কঠোর বিরোধিতার মুখোমুখি হয়েছিলেন ইমরান খান। তার আমলেই পাকিস্তানে গাধার এই বাড়বাড়ন্ত। ফলে ইমরান বিরোধীরা 'ডাঙ্কি রাজা কি সরকার নেহি চালেগি' বলে স্লোগান তুলেছিল পাক সংসদে।
পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী মিফতাহ ইসমাইল সম্প্রতি যে সমীক্ষা প্রকাশ করেছেন তাতে দেখা গেছে, পাকিস্তানের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ইমরান খান সরকারের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দ্রুত বেড়েছে। দেশটিতে রাজনৈতিক অস্থিরতা থাকা সত্ত্বেও জিডিপি প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা ৫.৯৭ শতাংশ ধরা হয়েছে। যেভাবে গাধার সংখ্যা ফিবছর এক লাখ করে বাড়ছে, তাতে স্পষ্ট যে ঋণে জর্জরিত দেশটি এখন প্রাণীসম্পদ রপ্তানির দিকে আগের চেয়েও বেশি মনোযোগ দিবে।
তবে ভেড়া, মহিষ, ছাগল ইত্যাদি পালনেও পিছিয়ে নেই পাকিস্তান। সেখানে ৪.৩৭ কোটি মহিষ, ৩.১৯ কোটি ভেড়া এবং একই সংখ্যক ছাগল রয়েছে। এছাড়া রয়েছে ১১ লাখ উট, ৪ লাখ ঘোড়া ও ২ লাখ খচ্চর। তবে ২০১৭-১৮ সাল থেকে তাদের সংখ্যার কোন পরিবর্তন হয়নি।
দেশটির ২০২১-২২ অর্থনৈতিক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, "সরকার দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, খাদ্য নিরাপত্তা এবং দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য প্রাণিসম্পদ খাতে নতুন করে মনোযোগ দিচ্ছে।"
পাকিস্তানের জিডিপিতে যদি কৃষির অবদান ৬১.৯ শতাংশ হয়, তবে প্রাণীসম্পদের অবদানও ১৪ শতাংশ।
তথ্যমতে, এশিয়ার বিভিন্ন দেশের অর্থনীতি একসময় পুরোপুরি প্রাণীনির্ভর ছিল। বিশেষত, ভারতের কৃষি অর্থনীতিতে গরুর একটি বড় ভূমিকা ছিল।
তবে ভারত-পাকিস্তান দুই প্রতিবেশি দেশের প্রাণিসম্পদ ও পশুপালনে রয়েছে আশ্চর্য বৈপরীত্য। যেখানে পাকিস্তান তার ক্ষয়িষ্ণু অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে গাধার উৎপাদনে জোর দিচ্ছে, সেখানে ভারতে এই প্রাণীটির সংখ্যা ক্রমশ কমছে। ২০১৯ সালে ভারতের পশুশুমারি থেকে জানা যায়, সেখানে গাধার সংখ্যা ১৫% হ্রাস পেয়েছে।
বর্তমানে পাকিস্তানে ৮০ লাখেরও বেশি গ্রামীণ পরিবার গবাদিপশু পালনে নিয়োজিত।
জিও নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, "গবাদিপশুর মোট মূল্য সংযোজন (গ্রস ভ্যালু এডিশন) ৫,২৬৯ বিলিয়ন রূপি (২০২০-২১) থেকে বেড়ে ৫,৪৪১ বিলিয়ন রূপি (২০২১-২২) হয়েছে।"
পাকিস্তানে গাধার সংখ্যা বাড়তে থাকায় অনেক কৌতুক এবং হাস্যরসাত্মক মিমও কিন্তু তৈরি হয়েছে নেটমাধ্যমে। পাকিস্তানের সাংবাদিক হামিদ মীর যেমন ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্য করে বলেন, "আশা করি, লাহোরে কাবাবগুলোতে গাধার মাংস পরিবেশন করা হচ্ছে না।"
গাধার প্রয়োজন চীনে
চীনে এতো বেশি গাধা রপ্তানির পেছনে অন্যতম কারণ, চীনাদের প্রাণীপ্রীতি। চীনা মেডিসিনেও ডাঙ্কি হাইড-জেলাটিনের (গাধার চামড়া থেকে নির্যাসকৃত জেলাটিন) বিপুল চাহিদা।
একেকটি গাধার চামড়া থেকে পাকিস্তান ১৮ থেকে ২০ হাজার রূপি আয় করে থাকে। চীনে ক্রমাগত গাধা রপ্তানির পরেও পাকিস্তানে গাধার সংখ্যা কমেনি, বরং বেড়েছে।
পাঞ্জাব এবং খাইবার পাখতুনখোয়া- উভয় সরকারই চীনে গাধা রপ্তানির জন্য বিশেষভাবে খামার স্থাপন করেছে। চীনা কোম্পানিগুলো নাকি পাকিস্তানে গাধা পালনের জন্য ৩ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ করতেও প্রস্তুত ছিল।
চীন বিশ্বে গাধার সবচেয়ে বড় প্রজননকারী দেশ। সর্বভুক চীনা লোকজনের গাধার মাংস খেতেও আপত্তি নেই। তবে খাদ্য বা পালনের জন্য নয়, মূলত তাদের বায়োটেকনোলজি ইন্ডাস্ট্রি গাধার চামড়া (হাইড) ব্যবহার করে 'এজিয়াও' নামক একটি ঐতিহ্যবাহী ওষুধ তৈরী করে থাকে। রক্ত সঞ্চালনা, রক্তাল্পতা এবং প্রজনন সমস্যায় এর বহুল ব্যবহার রয়েছে। যদিও চিকিৎসা ক্ষেত্রে এর কার্যকারিতা এখনও সেভাবে প্রমাণিত হয়নি।
- সূত্র- দ্য প্রিন্ট , ওয়ালি নিউজ