শেষমুহূর্তে জনসন সরকারের পতন নিশ্চিতকারী নাদিম জাহাভি কে? খলনায়ক নাকি উচ্চাকাঙ্ক্ষী রাজনীতিক!
যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে ঘটে চলেছে একের পর এক নাটকীয়তা। ঘরোয়া ব্রিটিশ রাজনীতির এমন ধারা অবশ্য নতুন নয় । তবুও অতি দ্রুত যা ঘটে চলেছে তাকে কম বিস্ময়কর- বলা যায় না।
এর আগে গত মঙ্গলবার অর্থমন্ত্রী ঋসি সুনাক ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ পদত্যাগ করেন। এরপর অর্থমন্ত্রীর পদ নাদিম জাহাভিকে দেন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। জাহাভি আগে দেশটির শিক্ষা সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ঝানু রাজনীতিক ও ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিতি আছে তার।
মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই দেশটির নবনিযুক্ত অর্থমন্ত্রী নাদিম জাহাভি প্রকাশ্যে বরিস জনসনকে তার পদ থেকে সরে যেতে অনুরোধ করেন।
তার পাশাপাশি, প্রতিরক্ষা সচিব বেন ওয়ালেসও জনসনকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানান।
বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) মাত্র দুই ঘণ্টায় দুই পররাষ্ট্র সচিবসহ ৮ জন মন্ত্রীর পদত্যাগ করে জনসনের সরকার থেকে। আগের বুধবার করেন আরও ছয় মন্ত্রী। প্রায় নিশ্চিতই ছিল জনসনের সরকার পতন। তবু শেষ চেষ্টা তিনি করে যাচ্ছিলেন প্রধানমন্ত্রীত্ব ধরে রাখার। কিন্তু, একের পর এক প্রভাবশালী সহকর্মীর অনাস্থায় আর সফল হতে পারেননি। জনসনের কফিনে শেষ পেরেক ঠোকেন বেন ওয়ালেস ও নাভিদ জাহাভি তাকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়ে।
অবশেষে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন আজ বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) কনজারভেটিভ (টোরি) নেতার পদ থেকে পদত্যাগ করবেন বলে জানিয়েছে বিবিসিসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম। তবে, নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বহাল থাকবেন তিনি।
নাদিম জাহাভি কে?
টোরি এমপি নাদিম একজন মাল্টি-মিলিয়নিয়ার। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত এবং তিন সন্তানের জনক। সুনাকের পদত্যাগের পর তাকে যখন দায়িত্ব দেওয়া হয়, ধারণা করা হয়েছিল তিনি জনসনের পাশেই থাকবেন।
কিন্তু, তিনি পরিত্রাতার বদলে জনসনের ঘাতক হয়েছেন। নাদিমকে এমন রুঢ়, নির্মম ও সুযোগ-সন্ধানী বিশ্বাসঘাতক বলে সমালোচনা করেছে জনসনপন্থী ব্রিটিশ গণমাধ্যম ডেইলি মেইল। তাদের দাবি, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষা আছে নাদিমের। আর সে প্রস্তুতি তিনি নিচ্ছেন দীর্ঘদিন ধরে। এমনকী জনসনের প্রধান নির্বাচনী কৌশলবিদের সাথে তিনি নিজের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার ছক কষেছেন।
ব্যবসায়ী হিসেবে ঝুঁকি নিতে পারার জন্য খ্যাতি আছে ৫৫ বছরের নাদিমের। আর হবেই বা না কেন, তার জীবনের গল্পও তো কম রোমাঞ্চকর নয়। বরং উপন্যাসকেও যেন হার মানায়।
নাদিম জাহাভির জন্ম ইরাকে, এক কুর্দি পরিবারে। তৎকালীন ইরাকি প্রেসিডেন্ট সাদ্দামের দমনপীড়ন থেকে প্রাণে বাঁচতে শরণার্থী হিসেব যুক্তরাজ্যে পরিবারের সাথে আসেন নাদিম। তখন তার বয়স মাত্র ৯ বছর। ইংরেজিতে যিনি কথাই বলতে জানতেন না, তিনিই আজকে দেশটির ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালী রাজনীতিক। বর্তমানে তিনি আরও আলোচিত, কারণ তিনি নাকি টোরি দলের প্রধান হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
নাদিম বিখ্যাত জরিপ সংস্থা ইউগভের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। এই প্রতিষ্ঠানের আয় থেকে অন্যান্য বিনিয়োগের মাধ্যমে গড়েছেন ১০০ মিলিয়ন ডলারের সম্পদ।
তবে সাবেক সহকর্মীরা নাদিমকে কনজারভেটিভ দলের প্রধান হওয়ার লক্ষ্য থেকে দূরে থাকারই পরামর্শ দিচ্ছেন। ইউগভে তার সাবেক জ্যেষ্ঠ সহকর্মী পিটার কেলনার নাদিমের উদ্দেশ্যে বলেছেন, 'বন্ধু আপনার সাথে আমি ১০ বছর একসাথে কাজ করেছি। আপনি বড় ভুল করছেন, ডুবন্ত জাহাজের সাথে নিজেকে রশি দিয়ে বাঁধা কোনো বুদ্ধিমানের কাজ নয়।"
সতর্কবাণী সত্যে রূপ নেয় কিনা- তা সত্যিই দেখা বিষয়। ব্রিটিশ রাজনীতির প্রতি বাঁকে নাটকীয়তা কোনো অংশেই কম নয়। যদিও কনজারভেটিভ দলের জনসন নেতৃত্বাধীন সরকার পতন প্রায় নিশ্চিত। নাদিম হয়তো নিজে দলের নেতৃত্ব নিশ্চিত করে নতুন সরকার গঠনের কথা ভাবছেন।
- সূত্র: ডেইলি মেইল, দ্য টেলিগ্রাফ