পর্দার 'সুলেমান' বাস্তবে হতে চেয়েছিলেন গায়ক!
হালিথ আরগেঞ্চ এর কথা মনে আছে? 'সুলতান সুলেমান' পরিচয়ে তাকে বাংলাদেশের তুর্কি সিরিজ ভক্তরা চেনেন। মূল নামের দুর্বোধ্য উচ্চারণে কি আসে যায়? বাংলাদেশের ঘরে ঘরে তিনি না হয় তুর্কি ইতিহাসের দূত হয়েই রইলেন । 'সুলতান'রুপী প্রিয় অভিনেতার পর্দার বাইরের জীবন কিন্তু কম রোমাঞ্চকর নয়। ১৮ মাস নিউ ইয়র্কে স্বপ্ন পুষে বেঁচে ছিলেন। ভেবেছিলেন আর কখনও তুরস্কে ফেরা হবে না। ভাগ্যদেবীর সুতোর টান এদিক ওদিক হতেই পারত। হালিথ হয়ত হয়ে যেতেন নামকরা রেস্তোরাঁর শেফ!
অল্প বয়েসে হালিথ ভাবলেন- আমাকে গায়ক হতেই হবে। মিউজিকাল ঘরানার মঞ্চ নাটকে গানের পরিবেশনা অনিবার্য। এমন কোনো একটা থিয়েটারে জায়গা পেতে মরিয়া হয়ে উঠলেন তিনি। তুরস্কে সে সুযোগ মিলল। কিন্তু নজর বিশ্বমঞ্চে। নিউ ইয়র্কে থিতু হতে চাইলেন সেরাদের মাঝে। শুরু হল অডিশনের ধৈর্যপরীক্ষা। শহরের নাটকপাড়ায় হালিথের শুকতলা ক্ষয়পর্ব যেন শেষ হচ্ছিল না।
অবশেষে ডাক মিলেছিল। তবে বাচ্চাদের একটা নাটকে। হালিথ কাজ করলেন। গাইলেন প্রাণ ভরে। কিন্তু মন হয়ে গেল শুষ্ক, খটখটে। কেন যেন ব্যাটে বলে মিলছিল না। এই জীবন হালিথ চাননি। খুবই অনিশ্চিত এই ক্যারিয়ারের কক্ষপথ। রাস্তা পাল্টে অন্য পথে হাঁটতে চাইলেন তিনি। গায়ক আর হওয়া হবে না বোধহয়। শেফ হতে দোষ কি? রান্না শেখার স্কুলে কোর্স শুরু করা যায় নাকি ভাবলেন তিনি।
এমন অনিশ্চিত সময়ে মরুদ্যান দেখার আনন্দ নিয়ে একটি ফোন আসে হালিথের কাছে। ইস্তাম্বুলের নম্বর। নিজ দেশেই একটা মিউজিকালে কাজ করার ডাক। টিকেট কেটে বাড়ির পথ ধরলেন হালিথ। দুদিন সময় নিয়েছেন শুধু নিউ ইয়র্ক ছাড়তে। পথে যেতে যেতে বিমানের ডানায় চেপে নিজের স্বপ্নকে উড়তে দেখেন তিনি।
এবারও জীবন উপহাস করল হালিথের ভাগ্য নিয়ে। দেশে পা রেখেই জানতে পারলেন, যে মিউজিকালে সুযোগ পেয়েছেন, সেটার প্রযোজকরা পিছু হটেছেন। এর মানে আর কিছুই নয়। মিউজিকাল পিছিয়ে গেল অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য। হালিথ ভাবলেন, আমার চেয়ে নিঃসঙ্গ, দুঃখী আর কে আছে?
এ সমস্ত গল্প ২০০২ সালের ক্যালেন্ডারে আটকে আছে। আজ দুই দশক বাদে হালিথ আরগেঞ্চ একজন প্রতিষ্ঠিত অভিনেতা। মুসলিমপ্রধান দেশগুলোতে তার জনপ্রিয়তা বেশি। তবে অন্যান্য দেশেও হালিথের ভক্তকূল কম নয়। "সুলতান সুলেমান" হালিথের প্রথম ছোটপর্দার কাজ নয়। তবে তুরস্কের বাইরে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন এই ইতিহাসনির্ভর সিরিজ দিয়েই।
আরও একবার 'সুলতান' নামে হাজির হয়েছেন হালিথ। তবে অন্য এক তুর্কি সিরিজে। রাজ্যপ্রধান নয়, অর্থনীতির প্রফেসরের চরিত্রে। এই সিরিজের নাম "সুলেমান", যার নাম ভূমিকায় হালিথ নজর কেড়েছেন বরাবরের মত। ডিজিটাল এন্টারটেইনমেন্ট প্ল্যাটফর্ম টফি-তে ফ্রি দেখা যাবে এই সিরিজটি। যারা "সুলতান সুলেমান" উপভোগ করেছেন, তারা "সুলেমান" মিস করতে চাইবেন না। অভিজাত, সমসাময়িক তুরস্কের প্রেক্ষাপটে ন্যায়-অন্যায় বোধে দোদুল্যমান একজন প্রফেসর ও তার আশেপাশের মানুষদের নিয়ে এগিয়েছে এই সিরিজের গল্প।
মূল চরিত্র সুলেমানের জীবনে কঠিন আঘাত আসে যখন সে জানতে পারে একমাত্র পুত্রসন্তানের শরীরে বাসা বেঁধেছে দুরারোগ্য রোগ। এখানেই শেষ নয়। দুর্নীতিবাজ সহকর্মীর চক্রান্তে চাকরি খোয়াতে হয় তাকে। সন্তানকে বাঁচানোর টাকা যোগাতে অন্ধকার জগতে পা বাড়ায় সুলেমান। পরিবারকে ভালোবেসে এক সময়ের নীতিবান মানুষটি যখন অপরাধী হয়ে ওঠেন, তখন বিবেকের পাল্লা হয়ে ওঠে অশান্ত।
হালিথ এখন অভিনেতা হিসেবেই জনপ্রিয়তা উপভোগ করেন নিশ্চয়ই। তবে গানের প্রতি ভালোবাসা কিন্তু কমেনি। বাড়ি ফিরে নিয়মিত গান শোনেন। প্রিয় শিল্পীর তালিকায় আছেন বিইয়োক, স্টিং এবং আরও অনেকেই। মন খারাপ কিংবা ভালো, দুই সময়েই গলা ছেড়ে গেয়ে ফেলেন তিনি। অন্তর্জালে ঘাটলেই হালিথের গান পাওয়া যাবে। আর "সুলেমান" এর থ্রিল পাবেন টফি তে।