কমতে শুরু করেছে ডিমের দাম
জ্বালানি তেলের ইস্যুতে হঠাৎ করে বাড়তে থাকা ডিমের দাম কমতে শুরু করেছে। ঢাকার বিভিন্ন বাজারে ডজন প্রতি ডিমের দাম ১০-১৫ টাকা কমেছে, ব্রয়লার মুরগির দামও কেজিতে ৫-১০ টাকা কমেছে। ডিম আমদানির বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির বক্তব্য, বেশি দামের কারণে ভোক্তা পর্যায়ে চাহিদা কমে যাওয়া ও বাজার মনিটরিং শুরু হওয়ার ঘোষণায় কমতে শুরু করেছে ডিমের দাম।
রাজধানীর কারওয়ানবাজার, রামপুরা, মিরপুর-১০, সেগুনবাগিচা সহ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, ব্রয়লার মুরগির এক হালি ডিম ৫৫ টাকা থেকে কমে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে যদি কেউ ডজন হিসেবে কিনতে চায় সেক্ষেত্রে আরও একটু সাশ্রয়ী দামে কেনা যাচ্ছে।
কারওয়ানবাজার থেকে কেউ ডিম কিনতে চাইলে সেক্ষেত্রে ১৩৫-১৪০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। তবে সেগুনবাগিচা কাচাবাজার থেকে কিনতে চাইলে সেটা পড়ছে ১৪০-১৪৫ টাকায়। তবে পাড়া মহল্লার কিছু কিছু দোকানি এখনো ১৫০ টাকায় ডিম বিক্রি করছে। একইভাবে ব্রয়লার মুরগির দামও ২০০ টাকা থেকে কমে ১৯০-১৯৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পোল্ট্রি খাতের উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে বাড়তে থাকা ফিডের দাম ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের খরচ বাড়িয়ে দিয়েছে। জ্বালানি তেলের খরচ বৃদ্ধির প্রভাবে সারাদেশেই পরিবহন খরচ বেড়ে যায়। এই সুযোগে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী বাজারে অস্থিরতা তৈরি করে সুযোগ নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন খরচ বেড়ে যাওয়ায় ডিমের দাম যতটা বৃদ্ধি পাওয়ার কথা তার চেয়েও বেশি পরিমাণে বেড়ে যায়।
গাড়িভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে ডিমের পাইকারি বিক্রেতারা জানান, টাঙ্গাইল থেকে যে ডিমের গাড়ি আসে তাতে ৬০-৮০ হাজার পর্যন্ত ডিম আনা যায়। সাড়ে ৬ হাজার থেকে গাড়ি ভাড়া বেড়ে এখন ৮ হাজার টাকায় দাঁড়িয়েছে।
হিসেব করে দেখা গেছে, ৬০ হাজার ডিমের একটি গাড়িতে যদি ১৫০০ টাকা ভাড়া বাড়ে তবে প্রতি ডিমের উপর এর প্রভাব পড়ে মাত্র ২৫ পয়সা।
পোল্ট্রি খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআইসিসি) তথ্য বলছে, বর্তমানে ব্রয়লার মুরগির একটি ডিমের উৎপাদন খরচ ৯.৫০ টাকা এবং প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ ১৪০ টাকার বেশি। এর প্রধান কারণ ধারাবাহিকভাবে ফিডের দাম বৃদ্ধি।
২০২১ সালের জানুয়ারীতে একটা ডিমের উৎপাদন খরচ ছিল ৬.০৫ টাকা, যা আগস্টে গিয়ে দাঁড়ায় ৭.২৬ টাকা। চলতি বছরের জানুয়ারীতে এই খরচ আরও বেড়ে দাড়ায় ৭.৭৩ টাকা এবং চলতি মাসে এর উৎপাদন খরচ দাঁড়ায় ৯.৫০ টাকা। অর্থাৎ গত বছরের জানুয়ারী থেকে চলতি মাস পর্যন্ত সময়ে ডিমের উৎপাদন খরচই বেড়েছে ৫৭%।
একইভাবে বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচও। ২০২১ সালের জানুয়ারী থেকে চলতি মাসে এসে ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ ১০৬ টাকা থেকে বেড়ে ১৪৫ টাকায় ঠেকেছে। এই সময়ে মুরগির উৎপাদন খরচ বেড়েছে প্রায় ৩৭%।
সম্প্রতি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরীর সঙ্গে বিপিআইসিসির উদ্যোক্তারা একটি বৈঠক করেন। এ বৈঠকে উদ্যোক্তারা অভিযোগ করেন, ডিমের দাম যতটুকু বাড়ার কথা তার চেয়ে বেশি বেড়েছে। পাইকারী বিক্রেতারা অবস্থার সুযোগ নিয়ে বাজারকে অস্থির করে তুলেছে।
এ সময় উদ্যোক্তারা সচিবকে জানান, ফিডের কাঁচামাল ও জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেক খামারি লোকসানে পড়ে ব্যবসা বন্ধ করে দিচ্ছেন। এ খাতকে বাঁচাতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ সারাদেশের প্রান্তিক খামারিরাই ডিম ও মুরগি উৎপাদনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে। কিন্তু তারা জিম্মি হয়ে পড়েছে সিন্ডিকেটের হাতে। এলাকাভিত্তিক পাইকারী ব্যবসায়ীরা একটা দাম নির্ধারণ করে খামারিদের থেকে ডিম ও মুরগি সংগ্রহ করে।
ড. মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী বৈঠকে জানান, খামারিদের ক্ষতি পোষাতে এবং ডিম মাংসের দাম সহনীয় রাখতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এদিকে গত বুধবার বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সাংবাদিকদের জানান, ডিমের দাম না কমলে প্রয়োজনে আমদানি করা হবে। এই কথা বলার একদিনের মধ্যেই ডিমের দাম কমতে শুরু করলো।
উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, দাম বৃদ্ধির কারণে ডিম ও মুরগির চাহিদা কমে গেছে। দু'দিন ধরে ব্যবসায়ীরা ডিম বিক্রি করতে পারছেন না। এই চাপের কারণেও ডিমের দাম কমতে শুরু করেছে।
বাংলাদেশ ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি অবশ্য বাজারে সিন্ডিকেটের অভিযোগ মানতে নারাজ। তিনি বলেন, 'আমরা তো কোম্পানির রেট এর উপর ভিত্তি করেই দাম নির্ধারণ করি। কোম্পানিগুলোই দাম বাড়ায় বলে আমাদেরও বাড়তে হয়। এখন কমিয়ে দিচ্ছে, আজকের বাজারে আমরা আড়তে ১০০ ডিম বিক্রি করেছি ৯৪০ টাকায়।'
এদিকে বিপিআইসিসির সভাপতি মশিউর রহমান বলেন, 'এখানে হঠাৎ করেই আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না। কিভাবে খামারিদের রক্ষা করা যায়, শিল্পের সংকট দূর করা যায় সেটা ঠিক করতে হবে। কারণ এমনিতেই এক শ্রেণীর মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে, তারা কাটছাঁট করছে।'
এছাড়াও মুরগির বাচ্চা উৎপাদনকারীরা বলছেন, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি, লোডশেডিং এর প্রভাবে সারাদেশে খামার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। যে কারণে সপ্তাহে বাচ্চা মুরগির চাহিদা ১.৮০ কোটি থেকে কমে ১.৩০ কোটিতে দাঁড়িয়েছে।