এইচএসসি সার্টিফিকেটে বানান ভুল, অতিরিক্ত ১ কোটি টাকা খরচ হতে পারে যশোর বোর্ডের
যশোর বোর্ডের অধীনে ২০২১ সালের উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষার সার্টিফিকেটগুলোতে বানান ত্রুটির কারণে প্রায় ১ লাখ ২৬ হাজার শিক্ষার্থীকে নতুন সার্টিফিকেট প্রদান করতে বোর্ডের অতিরিক্ত ১ কোটি ১১ লাখ ৯০ হাজার ৯৪৫ টাকা খরচ হবে।
সার্টিফিকেটগুলোতে 'হাইয়ার' (Higher) শব্দের বানান ভুল ছিল। ভুল বানানের কারণে ১,২৫,৭৪১ জন শিক্ষার্থী সময়মতো তাদের সার্টিফিকেট পাবে না।
বোর্ড থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, শিক্ষা বোর্ডে এসএসসি বা এইচএসসি পরীক্ষার যে সনদপত্র বা সার্টিফিকেট দেওয়া হয় তার কাগজ কেনা হয় সাধারণত অস্ট্রেলিয়া থেকে। কোটেশনের মাধ্যমে কাগজ কেনার পর সরকার নিয়ন্ত্রিত সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেস থেকে বোর্ডের মনোগ্রাম, তার নিচে বড় অক্ষরে শিক্ষা বোর্ডের ও পরীক্ষার সালসহ নাম ছাপা হয়।
এর নিচের অংশ ছাপা হয় শিক্ষা বোর্ডের কম্পিউটার বিভাগ থেকে। সেখানে শিক্ষার্থীর নাম, পিতা-মাতার নাম, কেন্দ্রের নাম ও নম্বর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম, প্রাপ্ত জিপিএসহ পরীক্ষার নাম এবং ফলপ্রকাশের তারিখসহ অন্যান্য বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়।
নিচের অংশ ছাপার জন্য চূড়ান্ত প্রস্তুতির পর একটি নমুনা সনদপত্র তৈরি করা হয়। ওই নমুনা ছেপে সংশোধনের জন্য পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ বিভাগসহ সংশোধনের দায়িত্বপ্রাপ্তদের কাছে পাঠানো হয়। এরপর পরীক্ষানিয়ন্ত্রক চূড়ান্ত করলে ছাপার কাজ শুরু হয়।
২০২১ সালের এইচএসসি পরীক্ষার ক্ষেত্রে এ সকল পদ্ধতিই অনুসরণ করা হয়। এরপরও সনদপত্রের নিচের অংশে রোল নম্বরের পর যেখানে পরীক্ষার নাম লেখা হয়েছে সেখানে হাইয়ার (উচ্চ) শব্দটি ভুল বানানে লেখা থাকা অবস্থায় ছাপা হয়ে যায়। পরে সনদপত্র অন্যান্য ভুল পর্যবেক্ষণ ও নীরিক্ষণ করার সময় বানানের ভুলটি ধরা পড়ে।
সনদপত্র বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠানোর জন্য বোর্ডের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীরা কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে ভুল-ত্রুটি সংশোধনের জন্য পর্যবেক্ষণ ও নিরীক্ষণ করেন।
এদিকে বানান ভুল ধরা পড়ার পর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকসহ শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা সভায় বসেন। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় ভুল বানানটি কালো কালি দিয়ে ঢেকে দিয়ে তার উপরে সংশোধিত বানান সংযোজন করার। সে কাজটিও করা হয়।
কিন্তু বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটি পক্ষ এমন কালিযুক্ত সনদপত্র শিক্ষার্থীদের কাছে না দেয়ার জন্য দাবি তুললে সংশোধিত ওই সনদপত্র আর দেওয়া হয়নি। সে কারণে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আর ওই সনদে স্বাক্ষরও করেননি।
এ বিষয়ে যশোর শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর মাধব চন্দ্র রুদ্র সনদপত্রে ভুল বানানের কথা স্বীকার করে বলেন, "যে কোনোভাবে ভুল রয়ে গেছে। এ সার্টিফিকেট দেওয়া হবে কিনা তা সিদ্ধান্ত হয়নি।"
চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো. আহসান হাবীব 'হাইয়ার' বানান ভুল হয়েছে বা সার্টিফিকেটে সমস্যা হয়েছে জানিয়ে বলেন, এর দায় বোর্ড নেবে না।
"তদন্ত করা হবে। ভুল যে বা যাদের কারণে হয়েছে প্রত্যেককে এর দায় বহন করতে হবে, বোর্ড কোনো আর্থিক ক্ষতির শিকার হবে না," বলেন তিনি।
তিনি জানান, শিক্ষার্থীদেরকে নির্ভুল সনদপত্র দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে সার্টিফিকেট পেতে শিক্ষার্থীদের কিছুটা দেরি হতে পারে।"
শিক্ষা বোর্ডের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, একটি সার্টিফিকেট তৈরিতে শুধু বোর্ডে ছাপা থেকে শুরু করে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পর্যন্ত স্বাক্ষর, দলবদ্ধভাবে তথ্য যাচাই, স্বাক্ষর প্রদান, অভ্যন্তরীণ পরিবহনসহ বিভিন্ন খাতে ৬৪ টাকা করে খরচ হয়।
তাছাড়া সিকিউরিটি প্রেস ও সেখানকার ছাপাসহ পরিবহন ও অন্যান্য খাতে প্রায় ২৫ টাকা খরচ হয়। সে হিসেবে সনদপত্র শিক্ষার্থীর হাতে পৌঁছাতে বোর্ডের ব্যয় হয় প্রতিটির জন্য ৮৯ টাকা। এ হিসেবে ১ লাখ ২৫ হাাজার ৭৪১টি সনদপত্রের জন্য যশোর শিক্ষা বোর্ডের ব্যয় ১ কোটি ১১ লাখ ৯০ হাজার ৯৪৫ টাকা।
যদিও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এত টাকা খরচের দাবি নাকচ করেছেন। একইভাবে বোর্ড চেয়ারম্যানও কোন খাতে কত খরচ জানাতে চাননি।