হিজাব পুড়িয়ে মাহসা আমিনির মৃত্যুর প্রতিবাদে ইরানি নারীরা
হিজাব আইন ভঙ্গের জেরে ইরানে এক তরুণীর মৃত্যুর পর সেদেশে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। আর বিক্ষোভে অংশ নেওয়া নারীরা নিজেদের মাথার স্কার্ফ বা হিজাব পুড়িয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
দেশটির বিভিন্ন শহরে গত পাঁচদিন ধরে চলছে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ। ধীরে ধীরে আন্দোলন আরও শহর, নগরে ছড়িয়ে পড়ছে বলে খবর গণমাধ্যমের।
তেহরানের উত্তরের শহর সারিতে শত শত নারী বিক্ষোভের অংশ হিসেবে নিজেদের হিজাবে আগুন ধরিয়ে দেন।
ইরানের রাজধানী তেহরানে গত সপ্তাহে মাহসা আমিনিকে হিজাব আইন ভঙ্গের অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছিল ইরানের নৈতিকতা রক্ষা বিষয়ক পুলিশ। আটক কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই তিনি অচেতন হয়ে যান। তিনদিন কোমায় থাকার পর গত শুক্রবার তার মৃত্যু হয়। এরপর থেকেই ইরানে হিজাব বিরোধী ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়েছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার নাদা আল-নাশিফ বলেন, অভিযোগ রয়েছে, আটকের পর মাহসা আমিনির মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করেছিল পুলিশ এবং গাড়ির বিপরীতে তার মাথায় আঘাতও করা হয়েছিল।
তবে, ওই তরুণীর ওপর এসব নির্যাতনের সব অভিযোগই অস্বীকার করেছে পুলিশ। তাদের দাবি, মাহসা আমিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
অন্যদিকে তরুণীর পরিবারের দাবি, তিনি পুরোপুরি সুস্থ এবং সবল ছিলেন। আগে কখনোই হৃদরোগ ছিল না তার।
ইরানের পশ্চিমাঞ্চলের কুর্দিস্তানের বাসিন্দা ২২ বছর বয়সী মাহসা আমিনি। সেখানেও বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালিয়েছে পুলিশ। সোমবারের ঘটনায় সেখানে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
ইরানের শীর্ষ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির একজন সহকারী আমিনির পরিবারের সঙ্গে সোমবার দেখা করেছেন বলে জানা গেছে।
রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়া খবর অনুযায়ী, সেখানে তিনি বলেছেন, 'অধিকার ভঙ্গ হলে, তা রক্ষায় সব প্রতিষ্ঠান কাজ করবে।'
এদিকে, ইরানের জ্যেষ্ঠ রাজনীতিক জালাল রশিদি প্রকাশ্যেই সেদেশের নৈতিক পুলিশের সমালোচনা করে বলেন, এ ধরনের পুলিশ তৈরি করা ভুল হয়েছে, এটি ইরানের জন্য শুধু ক্ষতিই বয়ে এনেছে।
কুর্দিস্তানের মানবাধিকার পরিস্থিতি নজরদারি করে নরওয়েভিত্তিক সংস্থা হেনগাও অর্গানাইজেশন ফর হিউম্যান রাইটস। সংস্থাটি জানিয়েছেন, শনিবার এবং রোববার কুর্দিস্তানের বিক্ষোভে দাঙ্গা পুলিশের গুলি, রাবার বুলেট এবং টিয়ার গ্যাসে অন্তত ৩৮ জন আহত হয়েছেন।
সেখানে পুলিশের গুলিতে ৩ জন পুরুষ বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন বলেও জানায় সংস্থাটি। এখনো সেখানে বিক্ষোভ চলছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, তেহরানে নারীরা তাদের মাথার হিজাব খুলে ফেলে চিৎকার করছেন 'স্বৈরাচারীর মৃত্যু চাই'। ইরানে এই স্লোগান সাধারণত দেশটির শীর্ষ নেতাকে ইঙ্গিত করেই দেওয়া হয়।
'বিচার চাই, স্বাধীনতা চাই, হিজাব পরা বাধ্যতামূলক চলবে না'- এসব স্লোগান দিতে থাকেন বিক্ষোভকারী নারীরা।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া একজন নারী অভিযোগ করেন, পুলিশ ঘিরে ধরে তার ওপর হামলা চালায়, তাকে লাঠি দিয়ে আঘাত করে। এমনকি, তাদেরকে যৌনকর্মী বলেও গালি দিয়েছে পুলিশ।
আরেক নারী জানান, তিনি যখন নিজের মাথার হিজাব খুলে ফেলেছিলেন, তখন অন্য পুরুষ আন্দোলনকারীরা তাকে ঘিরে ধরে নিরাপত্তা দিয়েছেন। এটি তার অনেক ভালো লেগেছে। তিনি চান, বিশ্ববাসী তাদের এই আন্দোলনকে সমর্থন করুক।
তবে তেহরানের গভর্নর মোহসেন মানসুরি মঙ্গলবার এক টুইট বার্তায় বলেন, 'অস্থিরতা তৈরির জন্য পুরোপুরি সংগঠিত হয়ে পথে নেমেছে বিক্ষোভকারীরা।'
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে অভিযোগ তোলা হয়েছে, আমিনির মৃত্যুকে একটি বাহানা হিসেবে ব্যবহার করছে কুর্দিস্তানের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। তারা সংঘবদ্ধভাবে সরকারি সম্পদ ধ্বংস করছে এবং পুলিশের ওপর হামলা চালাচ্ছে।
- সূত্র: বিবিসি